ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমদানিকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ জুন ২০১৫

আমদানিকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ শুধু চট্টগ্রামই নয় দেশের ভবিষ্যত জ্বালানি সঙ্কট দূর করতে আমদানিকৃত এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) জাতীয় গ্রীডে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য এলএনজি সরবরাহের পাইপলাইনের সঙ্গে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত নতুন একটি পাইপলাইন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে নতুন এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য অর্থ চেয়ে পেট্রোবাংলায় চিঠি দিয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল। পাইপলাইনটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, এর আগে এলএনজি দিয়ে শুধু চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের চিন্তা করা হয়েছিল। এখন দেশের স্থলভাগের মজুদের বিষয় মাথায় রেখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। এখন জাতীয় গ্যাস গ্রীডের সঙ্গে এলএনজি টার্মিনালকে যোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে লাইনপাইপ ক্রয়ের চুক্তিও হয়েছে। তবে এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদনে আসার সঙ্গে সমন্বয় করে ওই পাইপলাইন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এখন মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইনের সঙ্গে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এর জন্য ৬৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। জিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নিজাম শফিকুল ইসলাম প্রেরিত এক চিঠিতে বলা হয়, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০১৭ থেকে দেশে এলএনজি আসতে শুরু করবে। এছাড়া সরকার আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি এবং সাগরে গ্যাস পাওয়াগেলেও এই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস পরিবহন সম্ভব। ওই চিঠিতে বলা হয়, আনোয়ারা থেকে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে চট্টগ্রাম শহর এলাকার উপর দিয়ে ফৌজদারহাটে আসবে। প্রাথমিক জরিপের ফলাফল বলছে প্রকল্পের দৈর্ঘ হবে ২৬ কিলোমিটার। স্বল্পতম সময়ে পাইপলাইনটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত না করে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে বরাদ্দ চেয়ে পেট্রোবাংলার কাছে ওই চিঠি দেয়া হয়। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্যান্য কাজও করতে হবে। নির্মাণ শুরুর দেড় বছরের মধ্যে টার্মিনাল গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে সেখানে পাইপলাইনের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হলে টার্মিনাল পড়ে থাকবে। সঙ্গত কারণে এই পাইপলাইনটি নির্মাণ করা জরুরী। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দুই লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার টার্মিনাল নির্মাণে একটি টার্মশীট স্বাক্ষর হয়েছে। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করতে পারবে। এ জন্য প্রতিদিন রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দুই লাখ ৩৮ হাজার ডলার খরচ পড়বে। এরমধ্যে স্থায়ী ব্যয় দৈনিক ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ ডলার, পরিচালনা ব্যয় ৪৫ হাজার ৮১৪ ডলার এবং অন্যান্য ব্যয় ৩২ হাজার ডলার। এই চুক্তি ১৫ বছর বলবত থাকবে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৪১ ডলার লাগবে অন্যান্য সকল খরচ যোগ করে যা দাঁড়াবে দশমিক ৪৭৪ ডলার। প্রসঙ্গত ২০১০ সালে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবর্তীকালে বিদ্যুত জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে দরপত্রের সর্বনিম্নদরদাতা এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপকে কাজটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, এখন পাইপলাইনের অভাবে বিশাল ব্যয়ের এই টার্মিনাল পড়ে থাকা যুক্তিযুক্ত হবে না। অন্যদিকে চট্টগ্রামে গ্যাসের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। সাগর বক্ষের একমাত্র গ্যাস ক্ষেত্র সাঙ্গু বন্ধের পর থেকে বন্দর নগরী তীব্র গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলা করছে। এলএনজি আমদানি শুরু হলে এই সঙ্কট দূর হবে। কিন্তু সারাদেশে অন্তত প্রতি দিন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। প্রধান জ্বালানি গ্যাসের এই মাত্রায় ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও ২০১৭ থেকে সারাদেশে গ্যাসের ঘাটতি শুরু হবে। সাগরে পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়া গেলে আমদানি করার কোন বিকল্পও থাকবে না। সঙ্গত কারণে জিটিসিএল এর কর্মকর্তারা আমদানি গ্যাস সঞ্চালনের নতুন এই পাইপলাইনটি দ্রুত নির্মাণের পক্ষে মত দিচ্ছে।
×