ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিয়ার আদর্শের তোয়াক্কা করেন না খালেদা, দলে ক্ষোভ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জুন ২০১৫

জিয়ার আদর্শের তোয়াক্কা করেন না খালেদা, দলে ক্ষোভ বাড়ছে

শরীফুল ইসলাম ॥ দলের ব্যাপারে সমালোচনার থোরাই কেয়ার করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এ নিয়ে কে, কী বললেন তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। তিনি তাঁর নিজের মতো করেই দল পরিচালনা করছেন এবং একই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবেন। তবে খালেদা জিয়ার এ অবস্থান নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দিন দিনই বাড়ছে। উল্লেখ্য, টানা অবরোধ কর্মসূচী ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে খোদ বিএনপির সিনিয়র নেতারাসহ বিভিন্ন মহল থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত বিএনপির রাজনীতি এবং জামায়াতের সঙ্গে বিরাজমান সম্পর্ক নিয়ে কঠোর সমালোচনা হতে থাকে। টানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান শেষে বাসায় ফিরে যাওয়ার পর একটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। ৭ জুন বাংলাদেশ সফরকালে একান্ত আলাপচারিতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও খালেদা জিয়াকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার কথা বলে যান। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়াকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলা হয়। কিন্তু এসব কিছু কর্ণপাতই করছেন না তিনি। তিনি রাজনীতি করছেন তাঁর নিজের দর্শনানুসারে। এখানে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বা অন্য কারও দর্শনকে তোয়াক্কা করছেন না তিনি। একমাত্র লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান ছাড়া আর কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। তবে তারেক রহমানের পরামর্শ নিতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই নিজ দলের সিনিয়র নেতাদের বিরাগভাজন হলেও পরে ভিন্ন কৌশলে আবার তা ঠিক করে নেন। বিএনপির গঠনতন্ত্রেই চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অগাধ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতা বলে কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন তিনি। আর এমন গঠনতন্ত্র দেখে যারা বিএনপির রাজনীতি করতে আসেন তারাও ধরে নেন খালেদা জিয়া যা করবেন তাই মেনে নিতে হবে। তবুও মাঝে মধ্যে সীমা ছাড়িয়ে গেলে দলের নেতারা সোচ্চার হন। এতে কোন কাজ না হলেও একপর্যায়ে নীরব হয়ে পড়েন। তবে কখনও কখনও চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে উঠলেই বিপত্তি ঘটে। যেমনটি হয়েছিল ওয়ান-ইলেভেনের সময়। সে সময় খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে দলের সংস্কারের নামে পাল্টা কমিটি গঠিত হয়। আর এ পাল্টা কমিটির নেতৃত্বেই মূল ধারার অধিকাংশ নেতা দলীয় কর্মকা-ে অংশ নেন। একই পরিস্থিতি আবারও হতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। জানা যায়, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ কতিপয় বিএনপির সিনিয়র নেতা দলের সাবেক সিনিয়র ও সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু একটা করার জন্য শলাপরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন। দল ক্ষমতায় থাকাকালে যারা খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের বিরাগভাজন হয়েছেন তারাই এ প্রক্রিয়ায় বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বার বার ভুল রাজনীতির কারণে এ পর্যায়ে এসে বিএনপি চরম বেকায়দায় পড়েছে। এক সময়ের দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা একে একে দূরে সরে যাওয়ায় ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে খালেদা জিয়াকে ভাল পরামর্শ দেয়ার মতো কার্যত দলে এখন কেউ নেই। আর যাঁরাই আছেন তাঁদের পরামর্শকে আমলে নেন না তিনি। আর চারপাশে যাঁরা সক্রিয় আছেন তাঁরাও মাঝে মধ্যে তাঁকে ‘মিসগাইড’ করেন। এ ছাড়া লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান ও ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের পরামর্শ নিয়ে তিনি রাজনীতিতে বার বার হোঁচট খাচ্ছেন। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তিনি দলকে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এদিকে বেশ ক’দিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিএনপিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু এ ধরনের পরিবর্তন এনে খালেদা জিয়া নিজের নেতৃত্বকে আর নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাচ্ছেন না। এ জন্যই তিনি দলের নেতাসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনাকে কেয়ার করছেন না। যদিও অনেকেই মনে করছেন বিএনপি এখন ভুল পথে হাঁটছে। তাদের মতে, জিয়ার আদর্শ থেকে বিএনপি আজ লক্ষ্যচ্যুত। এ ছাড়া জোটের শরিক দল জামায়াত এখন বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই বিএনপিকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে দলের আদর্শ ও নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়া পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বর্তমানে বিএনপিতে জিয়ার আদর্শ নেই অভিযোগ করে বলেন, এ কারণেই বিএনপি আজ সঙ্কটে পড়েছে। তিনি বলেন, দলের মধ্যে হতাশা ও বিভ্রান্তি থাকতে পারে। তবে সত্যিকারভাবে যদি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধরে রাখা যায়, তবে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এর আগে আরেক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দলে শুদ্ধি অভিযান না চালানো হবে আত্মহত্যার শামিল। তিনি বলেন, ভারতকে উপেক্ষা করে রাজনীতি করা সম্ভব নয় এটা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অতীতে ভারতকে এড়িয়ে চলে বিএনপি ভুল করেছে।
×