ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিরিজের প্রথম ওয়ানডে আজ

মিরপুরে টানটান উত্তেজনার আভাস

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ জুন ২০১৫

মিরপুরে টানটান উত্তেজনার আভাস

মিথুন আশরাফ ॥ শুরুতে অনুশীলনে পেসার রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজর রহমান, তাসকিন আহমেদ সেন্ট্রাল উইকেটে বল করতে থাকলেন। এরপর এসে যোগ দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফি বল করা শুরু করতেই কিছুক্ষণ পর রুবেল আর বল করলেন না। তাহলে কী রুবেলের পরিবর্তে বামহাতি মুস্তাফিজকেই দেখা যাবে? আজ বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে বেলা তিনটায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। প্রথম ম্যাচেই ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়ে যাবে এ পেসারের? তিন পেসার নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ। তা নিশ্চিত। কারণ, পেস আক্রমণ দিয়ে যে শুরুতেই রোহিত, ধাওয়ান, কোহলি, রায়নাদের বিপাকে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত যে তিন ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে ২০০৪ ও ২০০৭ সালের জয় দুটি পেসারদের দক্ষতাতেই মিলেছে। ২০১২ সালের জয়টিতেও পেসারদের দাপট ছিল। তাই বোলিংয়ে শুরুতেই ভারত শিবিরে পেস আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ। এখন তাতে সাফল্য মিলে গেলেই হয়। যে সাফল্য এর আগে ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম মাশরাফি (২/৩৬), তাপস বৈশ্য (২/৩৫) ও খালেদ মাহমুদের (২/৪০) দুর্দান্ত বোলিংয়ে (বাংলাদেশ ২২৯/৯ ও ভারত ২১৪/১০) ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে মাশরাফির (৪/৩৮) গতিতে মিলেছিল (ভারত ১৯১/১০ ও বাংলাদেশ ১৯২/৫)। আর ২০১২ সালের এশিয়া কাপে (ভারত ২৮৯/৫ ও বাংলাদেশ ২৯৩/৫) ব্যাটসম্যানদের দাপটে বাংলাদেশ জিতলেও মাশরাফি (২/৪৪) ও শফিউল (১/২৪) অসাধারণ বোলিং করেন। পেসারদের দাপট বজায় থাকেই। সর্বশেষ যে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে হার কিভাবে হয়েছে, তা সবারই জানা। শুরুতে বোলিংয়ে রোহিত শর্মার আউটটি দেয়া হয়নি। আম্পায়ার রুবেলের করা ফুলটস বলটি ‘নো’র সিদ্ধান্ত দেন। এরপর ৯০ রানে থাকা রোহিত তো ১৩৭ রান করে বসে। যেখানে দল ধুঁকতে থাকে, ২৮০ রান করাটাই ভারতের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন ১০ রানে থাকা সুরেশ রায়না’র একটি এলবিডব্লিউ’ও দেয়া হয়নি। শেষে গিয়ে রায়না ৬৫ রান করেন, ভারত ৬ উইকেটে ৩০২ রান করে বসে। এরপর বাংলাদেশ যখন ব্যাট হাতে লড়াই করা শুরু করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যাচটি না হলেও আম্পায়াররা দিয়ে দেন। ধাওয়ান যে ক্যাচটি ধরতে গিয়ে তা পা বাউন্ডারির দড়ি স্পর্শ করেছে, তা বোঝা গেলেও মাহমুদুল্লাহকে আউট দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানের বড় ব্যবধানেই হারে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটিতেও মাশরাফি ও রুবেল ১টি করে এবং তাসকিন ৩ উইকেট নেন। পেসারদের দাপট বজায় থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ হারে। তাতে পুরো জাতি হতাশায় ভোগেন। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ খেলে ২৫টিতে হারে। এত ম্যাচ ছেড়ে এ ম্যাচের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাওয়ার কী মানে? আছে। সেই হারটি এখনও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে। তা যে হার হয়নি। জোর করেই হারানো হয়েছে বলেই এখনও ধারণা। সেই ম্যাচের তাই প্রতিশোধ নেয়াও বাকি আছে। যদিও মাশরাফি বলতে চেয়েছেন, খেলায় যুদ্ধ হয়, তাই বলে সেটাকেই যুদ্ধই ধরা হবে এমন নয়। তাছাড়া প্রতিশোধ, ক্রোধ; এ বিষয়গুলো আসলে ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝেই থাকে। ক্রিকেটাররা এসব বিষয় নিয়ে খুব ভাবে না। কারণ, অতীত নিয়ে এত ভাবার সময় কোথায়? সামনে যে ম্যাচ আছে, তা নিয়েই ভাবতে হবে। মাশরাফি ক্রিকেট প্রেমীদের উপদেশও দেয়ার চেষ্টা করলেন। তার বলা কথাগুলো এমন, যে ম্যাচটি হয়েছে বিশ্বকাপে তা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা ভাবার কথা। কিন্তু এমন যেন না হয়, ভাবনা ক্রোধে প্রকাশ হয়ে যায়। দিন শেষে ক্রিকেট খেলা, তা মনে রাখতে হবে। মাশরাফি যতই বলুক না কেন, খেলাটা ক্রিকেট, এখানে প্রতিশোধ বলে কিছু নেই। ক্রিকেটপ্রেমীরা কিন্তু তা মানতে রাজি নন। তারা কিন্তু অপেক্ষায় আছেন, ভারতের অন্তত একটি ম্যাচ হারের। ভারত যে কোন একটি ম্যাচ হারলেই যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে। বাংলাদেশ যে প্রতিশোধই নিয়েছে, তাও তখন সবার মুখে মুখে থাকবে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটিও যে বাংলাদেশ জিততে পারত, সেই প্রমাণও কী দেয়া হয়ে যাবে না? বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ জয়। তবে আপাতত একটি করে ম্যাচ নিয়েই ভাবতে চান দলের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ অধিনায়কই যেমন বলে দিয়েছেন, ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবতে চাই। জিততেই নামব।’ তবে কোনভাবে সিরিজ জয় না হলেও অন্তত একটি জয় হলেই বাংলাদেশ বাজিমাত করবে। সেটি কিভাবে? এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮ নম্বরের মধ্যে থাকতে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে ভারত। এখন বাংলাদেশ আছে ৮ নম্বরে (৮৮ রেটিং)। ৭ নম্বরে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৮৮ রেটিং)। ৯ নম্বরে আছে পাকিস্তান (৮৭ রেটিং)। ভারতের বিপক্ষে যদি ২-১ ব্যবধানেও সিরিজ হারে বাংলাদেশ, তাহলেও র‌্যাঙ্কিং বাড়বে। ৭ নম্ব^রে উঠে যাবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতাও অর্জন করে নেবে। তিন ম্যাচেই হার হলে র‌্যাঙ্কিংয়ে ঘটবে পতন। বাংলাদেশ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়া নিয়েই ভাবছে। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। দলের ক্রিকেটাররা যে কোন দলকে হারানোর বিশ্বাস রাখেন। তাই ভারতকে হারানোর আশাও তাদের আছে। তবে র‌্যাঙ্কিং, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নয়, এ সিরিজ নিয়েই ভাবছেন মাশরাফি। বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ নিয়েও না ভেবে শুরুতেই জয় তুলে নিতে চান। সেই আশা নিয়েই প্রথম ওয়ানডে দিয়ে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলা আজ শুরু করবে বাংলাদেশ।
×