ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এনে আদালতে তোলা হবে আজ

নারী পুলিশকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক এএসআই কালিমুর

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ জুন ২০১৫

নারী পুলিশকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক এএসআই কালিমুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত নারী পুলিশ সদস্য ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত সেই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কালিমুর রহমান অবশেষে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার হয়েছে। বুধবার সকাল দশটার দিকে কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে কক্সবাজার থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে আনা হচ্ছে। আজ কালিমুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করার কথা রয়েছে। এদিকে ওই নারী পুলিশ সদস্য মঙ্গলবার রাজধানীর বারিধারার একটি বাড়িতে ঢাকার সিএমএম আদালতের এক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন। জবানবন্দীতে ওই নারী পুলিশ সদস্য তার সাবেক স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন বলে জবানবন্দী দিয়েছেন। সাবেক স্বামী তাকে ফুঁসলিয়ে ধর্ষণ করেছে বলেও ওই নারী পুলিশ সদস্য জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন। তবে সমঝোতার মাধ্যমে সাবেক স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন ঘটেছিল কিনা, নাকি সাবেক স্বামী ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে কিনা সে বিষয়টি জবানবন্দীতে স্পষ্ট করেননি ওই নারী পুলিশ সদস্য। দুই পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দীতে কোথাও গণধর্ষণের উল্লেখ নেই। প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার এক নারী পুলিশ সদস্য তার সাবেক স্বামী ও স্বামীর কয়েক বন্ধু কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। ওই নারী পুলিশ হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, গত ১০ জুন রাতে তিনি খিলগাঁও থানাধীন তিলপাপাড়ার একটি বাসায় গণধর্ষণের শিকার হন। ১১ জুন তিনি ওই বাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। এরপর খিলগাঁও থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। ১২ জুন তিনি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকেই গত ১৩ জুন তিনি ঢাকা মেডিক্যল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। ওই নারী পুলিশের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় নয় বছর ধরে কনস্টেবল পদে চাকরি করছেন তিনি। চাকরিকালীন কনস্টেবল কালিমুরের সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রেম হয়। তারই সূত্রধরে ২০১১ সালে কালিমুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কালিমুর বর্তমানে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। তাদের সংসারে মাইশা রহমান নামে প্রায় আড়াই বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তানও আছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তাদের মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা আবার সংসার করার ইচ্ছা পোষণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ চলছিল। আলাপ-আলোচনার সূত্র ধরেই খিলগাঁওয়ের ওই বাসায় গেলে ঘটনাটি ঘটে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) সমন্বয়ক ডাঃ বিলকিস বেগম জনকণ্ঠকে জানান, ওই নারীর বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই নারীর ফরেনসিক পরীক্ষাও করা হয়। পরীক্ষায় ধর্ষণের বিষয়টি ধরা পড়েছে। এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ১৩ জুন ওই নারীর পরিবারের তরফ থেকে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা হয়। আসামি হিসেবে ওই নারীর সাবেক স্বামী কালিমুর রহমান ছাড়াও অজ্ঞাত কয়েকজনের কথা বলা হয়। গত ১৫ জুন ওই নারী পুলিশ সদস্যকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আসামি সাবেক স্বামীকে গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলতে থাকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার সকাল দশটার দিকে কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী এলাকা থেকে কালিমুর রহমানকে কক্সবাজার থানা পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়। গত ১১ জুন এএসআই কালিমুর রহমান এসপিবিএনে (স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন) যোগ দেয়ার জন্য খিলগাঁও থানা থেকে ছাড়পত্র নেন। ছাড়পত্র নিয়েই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। খিলগাঁও থানার মামলায় গ্রেফতারকৃত কালিমুরকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করার কথা রয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর বারিধারার একটি বাড়িতে ওই নারী পুলিশ সদস্য ঢাকার সিএমএম আদালতের এক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। দুই পৃষ্ঠায় তার জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ডিবির এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, জবানবন্দীতে ওই নারী পুলিশ সদস্যের চাকরি জীবন থেকে শুরু করে বিয়ে, বিয়ের পর সংসার, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িসহ সর্বশেষ ধর্ষণের বিষয়টি উঠে এসেছে। জবানবন্দীতে ওই নারী জানান, তার সাবেক স্বামী নতুন করে সংসার করার কথা বলে তাকে নানাভাবে প্ররোচিত ও ফুঁসলাতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি গত ১০ জুন খিলগাঁও তিলপাপাড়ার ওই বাসায় যান। সেখানে তিনি স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হন। তবে সাবেক স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন সমঝোতার মধ্যে হয়েছে কিনা সে বিষয়টি জবানবন্দীতে ওই নারী পুলিশ কনস্টেবল নিশ্চিত করেননি।
×