ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরতালে গণপরিবহনে বাদুড়ঝোলা মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ জুন ২০১৫

হরতালে গণপরিবহনে বাদুড়ঝোলা মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাস্তায় হাজারো পরিবহনের ভিড়। যাত্রীবাহী গণপরিবহনে বাঁদুরঝোলা হয়ে মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা। সঙ্গে নিত্যসঙ্গি যানজট তো ছিলই। প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ট্যাক্সি, অটোরিক্সা থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। দোকানপাট, বাজার, শপিংমল খোলা ছিল। মতিঝিল অফিসপাড়া ছিল দিনভর সরগরম। ফুটপাথ বাণিজ্যও ছিল সমানতালে। মানুষের ভিড়ে ব্যস্ততম ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাও ছিল কষ্টসাধ্য। বুধবার রাজধানীর হরতাল চিত্র ছিল ঠিক এরকমই। দেশের কোথাও হরতাল পালনের খবর পাওয়া যায়নি। নগরীর কোথাও হরতাল সমর্থকদের তৎপরতা ছিল না। অর্থাৎ হরতালের প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষ। জনস্বার্থবিরোধী ও আদালত অবমাননাকারী হরতালকে সবাই ‘না’ জানিয়ে রাস্তায় নামেন। ফলে হরতালে চললেও জনজীবনে কোন প্রভাব পড়েনি। সকাল ১১টায় মতিঝিলে প্রতিদিনের মতোই ছিল দীর্ঘ যানজট। আরামবাগ পুলিশবক্স থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত ছিল দীর্ঘ গাড়ির জট। নিউভিশন পরিবহনের চালক মোখলেছ জানান, পরিস্থিতি দেখে হরতাল মনে হচ্ছে না। আমাদের চলাফেরার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। সকালে মিরপুর থেকে আসতে কোন সমস্যা হয়নি। যাত্রী চাপ, যানজট সবই স্বাভাবিক দিনের মতোই ছিল বলে জানান তিনি। সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। দুপুরের আগেই প্রাইভেটকার চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়ে হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজধানী যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। পরিবহনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানিয়েছেন, হরতালের কারণে যাত্রী কম থাকায় দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল ছিল তুলনামূলক কম। তবে রাজধানীর আশপাশের জেলাসমূহে স্বাভাবিক দিনের মতোই বাস চলাচল করেছে। তিনি জানান, পরিবহন মালিকরা জনস্বার্থবিরোধী হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন, শাহবাগ, মগবাজার, মালিবাগ, মহাখালী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এদিন যানজট অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। সড়কগুলোতে অফিসগামী মানুষের ছোটাছুটি প্রতিদিনের মতোই। খোলা ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের কড়া নজরদারি লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা থেকে সিলেট, নরসিংদী, কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীগামী গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকেও আসে যাত্রীবাহী বাস। যাত্রাবাড়ী এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জন রাজিব বলেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। হরতালে গাড়ির জ্যাম ছাড়াতে ছাড়াতেই অস্থির হয়ে যাচ্ছি। শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ ইলিয়াস বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে পাবলিক পরিবহনের চেয়ে প্রাইভেট গাড়ি কম চলেছে। মতিঝিল-বনানী রুটের ৬নং বাস সার্ভিসের চালক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, এখন তো আর কেউ হরতাল করতে রাজপথে নামে না। এই কারণে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছি। যাত্রাবাড়ী-গাজীপুর রুটের বলাকা বাসের চালক মিজান জানান, হরতাল বলতে রাস্তায় কিছু নেই। আরামে গাড়ি চালাচ্ছি। যাত্রী চাপ বেশ। মতিঝিল থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর শেখ আবুল বাশার বলেন, হরতালে কোন নাশকতার খবর নেই। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ তৎপর বলে জানান তিনি। হরতালে রেলপথ, নৌপথ ও আকাশ পথেও কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। সময় মতো ট্রেন ছেড়েছে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। ঢাকা নদীবন্দর থেকে দেশের প্রায় সবকটি রুটেই সময় মতো ছেড়েছে লঞ্চ। যাত্রীও ছিল সন্তোষজনক। বিমান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিকে, হরতালের সমর্থনে বুধবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর মৌচাকে মিছিল করেছে জামায়াতের রমনা থানা শাখার নেতাকর্মীরা। ঝটিকা এই মিছিলটি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সকাল ৭টার দিকে হরতালের সমর্থনে রাজধানীর হাতিরপুলে শিবির ঝটিকা মিছিল করে। এদিকে হরতালে পুলিশের বাধা, হামলা, গণগ্রেফতার হয়েছে দাবি করে এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ হরতালে পুলিশের হামলা, গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি। ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের দুই নেতা কাদের মোল্লা ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের দিন কিংবা পরের দিন জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে সহিংসতা চালানো ছিল নিয়মিত বিষয়। মানুষকে জিম্মি করে দেশবিরোধী কর্মসূচীর বিরুদ্ধে সবাই এখন সোচ্চার। তাই হরতাল উপেক্ষা করে সবকিছুই চলে স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক নজরদারির কারণে আগের মতো নাশকতাও করতে পারছে না জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
×