ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশী বিদেশী ফলের পসরা, উন্নত জাত চেনার সুযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ জুন ২০১৫

দেশী বিদেশী ফলের পসরা, উন্নত জাত চেনার সুযোগ

মোরসালিন মিজান ॥ মধুমাস শেষ হয়েছে। তবে মধুমাসের মধু ফুরোয়নি। এখনও গাছভর্তি রসালো ফল। প্রতি বছর এসব ফল নিয়ে জাতীয় ফল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এবারও খামারবাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনীর। আয়োজক- কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রদর্শনীতে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জাম, জামরুলসহ খুব চেনা জানা ফল যথারীতি আছে। আছে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত দেশী-বিদেশী ফলও। শতাধিক স্টল ঘুরলে বাংলাদেশের ফল সম্পর্কে মোটামুটি জানা হয়ে যাবে। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমি ফলের বিপুল সমারোহ। প্রথমেই চোখে পড়ে আকর্ষণীয় টাওয়ার। আইফেল টাওয়ারের মতোই দেখতে। পুরোটাই তরতাজা ফল দিয়ে গড়া। দর্শনার্থীরা আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। কিছু স্টল সাজিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর অধিদফতর। বাকিগুলো সাধারণ ফলচাষী ও বিক্রেতাদের। সব মিলিয়ে চমৎকার ফল প্রদর্শনী। প্রথমেই চোখে পড়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের স্টলটি। অনেক বড় স্টল। বিভিন্ন রকমের ফল দিয়ে সাজানো। এখানে শুধু আমেরই ১০৪টি জাত প্রদর্শিত হচ্ছে। অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (হার্টিকালচার) মাহবুবা মুনমুন বলেন, প্রতিনিয়ত ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করা হচ্ছে। আমরা সেসব উন্নত জাত সম্পর্কে কৃষকদের জানাই। চাষ করতে উৎসাহিত করি। লম্বাটে দেখতে একটি আম দেখিয়ে তিনি বলেন, এর নাম ব্যানানা ম্যাংগো। এটি কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত জাত। এমন বহু আগাম জাত এখানে আছে বলে জানান তিনি। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের স্টলেও বহু জাতের ফল। এখানে আম জাম কাঁঠাল থেকে শুরু করে আছে বেতফল বিলিম্বিও। ড্রাগন ফ্রুট, রাম্বুটানের মতো বিদেশী ফলও আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মনিরা খাতুন জানালেন, প্রদর্শনীতে রাখা সব ফলই তাদের নিজেদের উৎপাদিত। একটি নারিকেল চারা দেখিয়ে তিনি বলেন, এটি হাইব্রিড জাত। ভারত থেকে আনা। মাত্র আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে নারিকেল হওয়া শুরু করে। এমন আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে স্টলটি থেকে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলে গিয়ে দেখা গেল, ফল নিয়ে বাংলাদেশের গবেষণার চিত্রটি। দেশী-বিদেশী ফল নিয়ে গবেষণা করে তার ফলাফল তুলে ধরা হচ্ছে এই স্টলে। তবে এসব স্টল থেকে ফল কেনার সুযোগ নেই বললেই চলে। আর যেসব স্টলে ফল বিক্রির সুযোগ আছে, সেসব স্টলে উপচেপড়া ভিড়। ফরমালিন নামের জঞ্জালমুক্ত হওয়ায় এখান থেকে ফল কিনছেন প্রদর্শনী দেখতে আসা সাধারণ মানুষ। অন্য অনেক ফল থাকলেও, বেশি ভিড় আমের স্টলগুলোতে। বিশেষ করে রাজশাহীর আমে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতা। রাজশাহীর একটি স্টলের নাম কাদেরিয়া এগ্রো। এখানে রানী বসন্ত, নাগফজলি, খিরসাপাতি, দুধসর ইত্যাদি জাতের আম দিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। প্রতিটি জাতই আকর্ষণীয়। ফরমালিন নেই। দামও কম। স্টলের কর্মী রবিউল ইসলাম সহজ সরল দেখতে। রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায়Ñ গাছ থেকে আম নামিয়েছি। তার পর ট্রাকে ভরে সোজা ঢাকায়। অর্থাৎ মাঝখানে ফরমালিন বলতে কিছু যে যোগ করা হয়নি। এ কারণে বিক্রিও বেশ বলে জানান তিনি। এখন পার্বত্য জেলাগুলোতেও প্রচুর ফল চাষ করা হয়। সেখান থেকে মেলায় যোগ দিয়েছে গ্রীনটাচ এগ্রোফার্ম। স্টলে পাওয়া গেল রবিন নামের চটপটে এক তরুণকে। বললেন, এটি তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা। খাগড়াছড়িতে বিপুল জায়গা নিয়ে বাগান করেছেন তাঁরা। সেখানে উৎপাদিত ফল আনা হয়েছে প্রদর্শনীতে। এখানে ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, আম্রপালি, মল্লিকাসহ খুব পছন্দের আমগুলোই শুধু বিক্রি করা হচ্ছে। জাতীয় ফল কাঁঠালও আছে প্রদর্শনীতে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাঠাল। ছোট বড় মাঝারী আকারের কাঠালের দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। তবে কাঠাল যা এসেছে, তারও বেশি আসার বাকি। বিক্রিও একটু কম বলে জানালেন আরশাদ নামের এক চাষী। লিচুও কম। প্রদর্শনীতে হাতেগোনা কয়েকটি স্টলে লিচুর দেখা মিললো। কেন? জানতে চাইলে কুরবান আলী নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, লিচুর সময় শেষ হয়ে এসেছে। এখন পরিমাণ কমবে। দাম বাড়বে। এ কারণেই তিনি ১০০ লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। এসবের বাইরে বিক্রি করতে দেখা গেল ড্রাগন ফ্রুটসহ কয়েকটি দেশী-বিদেশী ফল। তবে এবার প্রকৃত চাষীদের কেউ কেউ যারপরনাই হতাশ। কেন জানতে চাইলে রংপুরের আপেল মাহমুদ একটি আম হাতে নিলেন। দেখিয়ে বললেন, বাইরের চেহারা ভাল নয়। গায়ের রং কালো হয়ে গেছে। কিন্তু ভেতরে লাল। কেটে দেখালেও। হ্যাঁ, ভেতরে টাটকা রং। স্বাদও মিষ্টি খুব। কিন্তু সমস্যাটা তাহলে কোথায়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার লোক আম চেনে না। ফরমালিন দিয়ে গায়ের রং সুন্দর করে রেখেছেন যারা, তাদের কাছ থেকে আম কিনছেন। আমরা ফরমালিন মুক্ত আম সুদূর রংপুর থেকে এনেও ক্ষতির মুখে পড়ে গেছি। প্রদর্শনীতে এবার ঢাকার অনেক অসাধু ব্যবসায়ী স্টল নিয়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ব্যানারে রাজশাহী দিনাজপুর লিখে তারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। আসলে তাঁরা কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী। একই রকম অভিযোগ করলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। মো. আনোয়ার নামের ওই কর্মকর্তা বিকেলে ফল কিনতে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন। কিছুক্ষণ ঘুরে তিনি বললেন, কিছু স্টলের সামনের হাঁক ডাক দেখেই বোঝা হয়ে যায় এরা ঢাকার বিক্রেতা। শুধু ব্যানারে বাইরের জেলাগুলোর নাম লিখে রেখেছে। এসব স্টলে রাখা ফলের চেহারা অতিরিক্ত সুন্দর জানিয়ে তিনি বলেন, এমনটি ফরমালিন না দিয়ে সম্ভভ নয়। তার মানে, দেখে নয় শুধু। বুঝে ফল কিনতে হবে। তবে সময় তেমন হাতে নেই। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী আজ বুধবার শেষ হচ্ছে। এর আগেই ফল দেখে আসুন। পরিচিত হোন। ফরমালিনমুক্ত ফল কিনে খান।
×