এম শাহজাহান ॥ রমজান সামনে রেখে দেশে চাহিদার দেড়গুণ পণ্য মজুদ রয়েছে। মে মাসে কমেছে মূল্যস্ফীতি। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। গত কয়েক বছরে শাক-সবজি, মাছ ও মাংসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটেও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গরিব মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারের চেয়ে কম দামে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এতসবের পরও ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডাল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আর এজন্য ভোগ্যপণ্যের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র মতে, বাজার অস্থিতিশীল করতে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি ভোগ্যপণ্য কোম্পানি সয়াবিন, পাম অয়েল, চিনি ও পেঁয়াজ অতিরিক্ত মূল্যে বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছে। দাম বাড়িয়ে ইতোমধ্যে কয়েক শ’ কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) অত্যাবশকীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও সম্প্রতি দাম বেশি নেয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিটিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌক্তিক মূল্য থেকে প্রতি লিটার (বোতল) সয়াবিনে ২০ টাকা, প্রতি লিটার লুজ সয়াবিনে ১৮ টাকা, পামওয়েল লিটারে ১৩ টাকা, চিনির কেজিতে ৩ টাকা ও পেঁয়াজের কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিটিসির চেয়ারম্যান ড. মোঃ আজিজুর রহমান জানান, কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক মূল্য যা হওয়া উচিত তা বের করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। বাজার ও নিত্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে অনেক ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখন সরকার এসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
এদিকে, রোজার প্রস্তুতি হিসেবে ভোক্তাদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, ভোজ্যতেল এবং কোন কোন কোন ক্ষেত্রে চিনির দাম। যদিও গত মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১৯ ভাগ। আগের মাস এপ্রিলে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৩২ ভাগ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামানোর আশা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করার সময় জানান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকায় মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমেছে। চাহিদা ও সরবরাহে ফারাক নেই দাবি করে আসন্ন রমজানে পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
চাহিদার দেড়গুণ পণ্য মজুদ রয়েছে ॥ রমজানে যে পরিমাণ পণ্যের প্রয়োজন হয় এ মুহূর্তে দেশে প্রায় তার দেড়গুণ পণ্য মজুদ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, রমজানে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট হওয়ার কারণ নেই। কারণ দেশে এখন চাহিদার প্রায় দেড়গুণ পণ্য মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, পণ্যের দাম যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য সরকারের বাজার মনিটরিং টিমও সংক্রিয় রাখা হয়েছে। এছাড়া সরকারী সংস্থা টিসিবি শবে-বরাতের পর থেকে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এতসবের পরও কোন ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে সরকার। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বাজার পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক বৈঠকে তিনি বলেন, দেশে ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম অয়েল এবং অলিন) চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, হলুদ এবং বিবিধ পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং দাম-সবকিছুই স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রয়েছে। কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেজন্য সরকার সব ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
শুধু তাই নয়, রোজাকেন্দ্রিক পণ্যের চাহিদার তুলনায় মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এমনকি কোন কোন পণ্যের মজুদ অনেক বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকেও জানানো হয়েছে, দেশে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই, তাই দামও বাড়বে না। সংগঠনটির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জনকণ্ঠকে বলেন, খাতভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া এফবিসিসিআইও নিয়মিত বাজারদরের খোঁজখবর রাখছে।
এদিকে, টিসিবির তথ্য অনুযায়ী এক বছর আগে ডালের কেজি ছিল খুচরা পর্যায়ে মানভেদে ৭২-১১৫ টাকা। এক বছর পর পাইকারি দামই খুচরা বাজার দরকে অতিক্রম করে ১১৫-১১৮ টাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে স্থানভেদে এটি প্রতিকেজি ১১৮-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার দর প্রতিকেজি ৩০-৩৫ টাকায় থাকলেও এ বছর রমজান আসার আগেই দাম বেড়ে দেশী ৪০-৪৫ টাকা ও আমদানি (ভারত) ৪০ টাকায় স্পর্শ করে। এভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।