ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাঁসি কার্যকর, জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ, অর্থের উৎস সিল করুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ জুন ২০১৫

ফাঁসি কার্যকর, জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ, অর্থের উৎস সিল করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চার দলীয় জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠন। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, অবিলম্বে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের রায় কার্যকর করার দাবি জানান। পাশাপাশি জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ তাদের অর্থের উৎস বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। শঙ্কা দূর হয়েছে, রায় কার্যকর করুন- ইমরান ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। মঙ্গলবার সকালে মুজাহিদের ফাঁসির রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, আপীল বিভাগ রায় বহাল রাখায় আমরা খুশি হয়েছি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত বিচার নিয়ে শঙ্কা দূর হয়েছে, এবার রায় কার্যকর করুন। রায়কে ঘিরে সকাল আটটা থেকেই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে জড়ো হতে থাকেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। রায় শোনার পর তারা উল্লাস প্রকাশ করেন। বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে আকাশে মেলে ধরেন জাতীয় পতাকা। শুরু হয় সেøাগান। এক পর্যায়ে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয় গোটা প্রজন্ম চত্বর। আনন্দক্ষণে শরিক হন, সাধারণ মানুষসহ পথচারী। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ দ-ের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসায় প্রজন্ম সেনাদের ধন্যবাদ জানান তারা। এরপর মঞ্চের কর্মীরা একটি আনন্দ মিছিলও বের করেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর হয়ে ফের শাহবাগে ফিরে আসে। রায়ের প্রতিক্রিয়ার ইমরান আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত শিবির গোষ্ঠী কখনই বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না। এদের শত্রুর চোখে দেখতে হবে। জামায়াত-শিবিরের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত ও তাদের অর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করার দাবি জানান তিনি। এর আগে সকালে মুজাহিদের আপীল আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিন্হার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেন মুজাহিদ। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপীল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের পর ছাত্রলীগের মিছিল ॥ রায়ের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের নিয়ে জড়ো হন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। রায় প্রকাশের খবর আসতেই একটি বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান ঘুরে চারুকলা অনুষদের সামনে গিয়ে শেষ হয় এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। সোহাগ তার বক্তব্যে বলেন, একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল থাকায় সারা বাংলার সাধারণ মানুষের মতো ছাত্রসমাজও খুশি। এভাবে প্রতিটি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও রায় কার্যকর করে এদেশ থেকে ওদের চিহ্নকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। জামায়াত-শিবির ও মানবতাবিরোধীদের এদেশের মাটিতে কোন ঠাঁই নেই। এদেরকে মোকাবেলা করতে ছাত্রলীগ রাজপথে আছে। তিনি এ রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিও জানান। সোহাগের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শেষ হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, হাসানুজ্জামান তারেক, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ আল হাসান, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, সমাজসেবা সম্পাদক কাজী এনায়েত, সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম, সদস্য এনামুল হক প্রমুখ। প্রজন্মের প্রত্যাশার প্রতিফলন ॥ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্যের নীলনক্সা বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় বাংলার মেধাবী সূর্য্য সন্তানদের হত্যার অন্যতম বর্বর ব্যক্তি ইসলামী ছাত্র সংঘ ও আলবদর বাহিনীর অন্যতম শীর্ষনেতা মুজাহিদের মৃত্যুদ-ের রায় বহাল থাকায় এ প্রজন্মের আশা-প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। বোয়াফ সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় বলেন, কুখ্যাত রাজাকার, মানবতাবিরোধী অপরাধী বর্বর মুজাহিদের বিচার ও রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, আজ হোক আর কাল হোক কিংবা স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে হলেও স্বাধীন বাংলায় স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই নেই। বিচারের মাধ্যমে সাজা ভোগ করতেই হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধী মুজাহিদের মৃত্যুদ-ের রায় বহালের সংবাদে তোপখানা রোড বোয়াফ কার্যালয় উপস্থিত নেতৃৃবৃন্দের মিষ্টি মুখ ও আশপাশের সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সহ-সভাপতি রাশিদা হক কনিকা, এ্যাডভোকেট ইয়াছিন করিম, মিজানুর রহমান মিজান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজম আজীম, সাইাফুল্লাহ আল মামুন, শামীম এইচ চৌধুরী প্রমুখ। সিপিবির সন্তোষ ॥ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে, যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদ-াদেশ সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে সিপিবির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জামায়াত নেতা মুজাহিদ ছিলেন একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী। কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দেশের সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া আরেক ধাপ অগ্রসর হলো। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চসহ সারাদেশে তরুণ-যুবসমাজসহ দেশবাসী যে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, জনতার সেই আন্দোলনের আবারও বিজয় অর্জিত হলো। এ বিজয় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনসহ জনগণের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের বিজয়। এ রায়ে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও সন্তোষ প্রকাশ করছি। বিবৃতিতে সিপিবির নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত জামায়াত-শিবিরকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের আর্থিকসহ সব ধরনের উৎস ও সহায়তা বন্ধ করে দিতে হবে।
×