ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীসের সর্বশেষ চেষ্টা ব্যর্থ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৬ জুন ২০১৫

গ্রীসের সর্বশেষ চেষ্টা ব্যর্থ

গ্রীস ও এর আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের মধ্যকার অচলাবস্থা ভাঙ্গার লক্ষ্যে ব্রাসেলসে রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ দফার আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। গ্রীক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কর্মকর্তারা এ আলোচনায় অংশ নেন। ইইউ কর্মকর্তারা গ্রীসের সর্বশেষ সংস্কার প্রস্তাবকে অসম্পূর্ণ বলে নাকচ করে দিয়েছেন। এ পদক্ষেপ দেশটিকে ইউরোজোন ত্যাগ করার পথে ঠেলে দিচ্ছে। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসি অনলাইনের। ওই আলোচনাকে গ্রীক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিয়ারসের কৃচ্ছ্রনীতি বিরোধী সরকার এবং ঋণভারগ্রস্ত গ্রীসের অর্থ চাহিদা পূরণ করছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য নিরসনের শেষ চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। সেই আলোচনা এক ঘণ্টারও কম সময় চলার পর ভেঙ্গে পড়ে। গ্রীক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা এবং ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) চাহিদার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়ে যায়। এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে কমিশন বৃহস্পতিবার লুক্সেমবার্গে ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীদের বৈঠককালে গ্রীস নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হবে বলে ঘোষণা করেন। ওই বৈঠকে গ্রীসের ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে। দেশটি ঋণ খেলাপী হওয়া এড়াতে ইইউ ও আইএমএফের কাছ থেকে বেইল আউট তহবিল (দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষার জন্য অর্থ সাহায্য) পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও কিছু অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু আলোচনা সফল হতে পারেনি, কারণ গ্রীক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা এবং কমিশন, ইসিবি ও আইএমএফের যৌথ চাহিদার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়ে গেছে। আর্থিক হিসেবে এ ব্যবধানের পরিমাণ বার্ষিক স্থায়ী বাজেট সঞ্চয়ের আকারে ২শ’ কোটি ইউরো। অর্থাৎ ইউরোপ চায়, বেইল আউট তহবিল ছাড় করাবে এমন কোন চুক্তিতে পৌঁছতে গ্রীস ২শ’ কোটি ইউরো ব্যয় হ্রাস করুক। গ্রীসের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইয়ানিস ড্রাগাসাকিস বলেন, এথেন্স এর ঋণদাতাদের সঙ্গে আলাচনা করতে এখনও প্রস্তুত। তিনি বলেন, গ্রীক সরকারের রবিবার পেশ করা প্রস্তাবগুলো আর্থিক চাহিদা সবটুকুই পূরণ করেছে। তবে ড্রাগাসাকিস এ কথাও বলেন যে, ইইউ ও আইএমএফ এখনও চায় গ্রীস পেনশন হ্রাস করুক। এ দাবি এথেন্স কখনও মেনে নেবে না বলে জানিয়ে এসেছে। অর্থ সঙ্কটে পড়া গ্রীস ঋণ খেলাপী হওয়া এড়াতে জুন মাস শেষ হওয়ার আগেই ইইউ ও আইএমএফের সঙ্গে বেইল আউট তহবিল চুক্তি করার চেষ্টা করছে। কমিশনের মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ জাঙ্কার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, গ্রীক সংস্কারের লক্ষ্যে আরও জোরালো চেষ্টা চালালে এবং সব পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই একটি সমাধান এখনও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এদিকে, জার্মানি-গ্রীসের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। জার্মান ভাইস-চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল রবিবার বলেন যে, গ্রীসকে নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর ধৈর্যচুক্তি ঘটছে। জার্মানি চায় গ্রীস ইউরোজোনে থাকুক, কিন্তু পত্রিকায় লেখা এক নিবন্ধে তিনি সতর্ক করে দেন যে, কেবল সময়ই ফুড়িয়ে যাচ্ছে না, ইউরোপের ধৈর্যও শেষ হয়ে আসছে। সিগমার তার দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কোয়ালিশন সরকারের শরিক সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা। আর নিবন্ধকে এক সতর্কবাণী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর বিশেষ কারণ এই যে, তার দল এর অতীতে গ্রীসের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল ছিল। গ্রীস ১৫০ কোটি ইউরোর আইএমএফকে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়া এড়াতে চাচ্ছে। এ ঋণ চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই পরিশোধ করতে হবে। ঋণদাতারা আরেক কিস্তি বেইল আউট তহবিলের বিনিময়ে গ্রীসের প্রতি সরকারী ব্যয় হ্রাস করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু গ্রীসের ক্ষমতাসীন বামপন্থী সিরিজা পার্টি খুবই অজনপ্রিয় কৃচ্ছ্রনীতি প্রশমন, ন্যূনতম মাসিক মজুরি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানুয়ারিতে নির্বাচিত হয়। সিপরাস এতে নেতৃত্ব দেন। তবে শনিবার সিপরাস এক কঠিন আপোসরফার জন্য প্রস্তুত থাকতে গ্রীক জনগণকে সতর্ক করে দেন।
×