ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

ব্যবসায়ী ও ট্রাফিক পুলিশের দেশপ্রেম কই

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৬ জুন ২০১৫

ব্যবসায়ী ও ট্রাফিক পুলিশের দেশপ্রেম কই

অর্থমন্ত্রী সম্ভবত এবারই প্রথম ব্যবসায়ীদের বলেছেন- ‘এবার দেশকে কিছু দিন’। সত্যিই তো, প্রতিবার প্রতি বছর দেশের বাজেট তৈরির সময়, এমনকি বাজেট সংসদে পাস হয়ে যাওয়ার পরও দেশের খাদ্য জোগানদাতা কৃষক এবং শিল্প ব্যবসায়ীদের শিল্পের মেরুদ--শ্রমিক শ্রেণী সেভাবে কোন জোরালো দাবি জানাতে পারে না। অথচ বিপুল অর্থ-বিত্ত-বাড়ি-গাড়ি, বিদেশে সম্পদ গড়ে তোলা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাদের কর-অবকাশ, কর হ্রাস, শুল্ক হ্রাস ইত্যাদি অর্থনৈতিক সুবিধা দাবি করতে শুরু করে। প্রশ্ন হচ্ছে- ব্যবসায়ীরা কি শুধুই নেবেন, দেশকে দেবেন না কিছুই? তাঁরা হয়তো বলবেন- তাঁরা লক্ষ শ্রমিকের কাজ-জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। সেটা তো তাঁদের করতেই হবে। শ্রমিক ছাড়া শিল্পের চাকা ঘুরবে না। শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা তো স্বহস্তে এ চাকা, এ মেশিন ঘোরাতে পারবেন না। জীবন ধারণের চক্রটি এমনভাবে তৈরি যে, মানুষ যেমন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি মানুষ, পশু, পাখি, বৃক্ষ, নদী, বাতাস, জল, পাহাড়সহ পুরো প্রকৃতিও আবার বেঁচে থাকার জন্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় যে, বিশ্ব জগত তৈরি হতে নানা রকম গ্যাসীয়, তরল, বায়বীয় পদার্থ রূপান্তরিত হতে হতে অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন, মিথেন, প্রোটিন ইত্যাদি হয়ে জল, বাতাস, প্রাণের জন্ম দিয়েছে। যাই হোক, লেখার মূল দৃষ্টি আকর্ষণ আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, একটি রাষ্ট্রীয় কোষাগার যদি জনসাধারণের অর্থে তৈরি না হয়, তাহলে রাষ্ট্র এবং সরকার যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জাতির জন্য সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য কাজ করে এর ফলে রাষ্ট্রও হয়ে ওঠে কল্যাণ রাষ্ট্র, সেটি হবে না। কথা হচ্ছে, এই রাষ্ট্র তার জনগণের জন্য, ব্যবসায়ীসহ সব রকমের শ্রেণী, পেশার মানুষের জন্য শুধুমাত্র ভাত, কাপড়, আশ্রয়স্থল, বাড়িঘর নয়; জীবিকার সুবিধার জন্য যাতায়াত-যোগাযোগের মাধ্যম রাজপথ, সেতু, সাঁকো, গণপরিবহন ব্যবস্থা- বাস, ট্রাক, জাহাজ, লঞ্চ, নৌকা পথ ও যানবাহন, শিল্পপতিদের কল-কারখানায় বিদ্যুত, পানি, গ্যাস প্রদান, শিশু ও তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা ও কম্পিউটার-ইন্টারনেট, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার তৈরির কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, গ্রামে-উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্যসেবা, শিশু জন্মের নিরাপত্তা বিধান, জীবন রক্ষাকারী টিকা প্রদান, শিশুর শৈশবকালীন যতœ-খাদ্য-পুষ্টি ও শিক্ষার ব্যবস্থা, সমাজে তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান ও জীবিকার ব্যবস্থা, বৃদ্ধ-বয়স্ক, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা, বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য ঠিক রাখা, জাতির জন্য খাদ্য সরবরাহকারী কৃষকদের সার, বিদ্যুত, বীজ প্রদান, নদী-খাল প্রভৃতি ভূমিখেকো ধনী-ক্ষমতাবানদের হাত থেকে উদ্ধার, সব শহরাঞ্চল-গ্রামাঞ্চল পরিচ্ছন্ন রাখা, স্যুয়ারেজ, পানি-বিদ্যুত সরবরাহ ঠিক রাখা ইত্যাদি হাজার হাজার সেবা প্রদান করতে বাধ্য। এই হাজারো সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকারের প্রয়োজন একটি কোষাগার। সেই কোষাগারটি তৈরি হবে কিভাবে? অন্য দেশে যেমন জনগণ সরকারের কাছ থেকে এইসব সেবা লাভের জন্য সরকারকে তাদের নিজ নিজ বার্ষিক আয়ের ওপর ধার্য করা ‘কর’ প্রদান করে, ঠিক তেমনি জনগণের করের অর্থেই এই কোষাগার আমাদের দেশেও তৈরি হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে প্রায় এক কোটির মতো ব্যবসায়ী-শিল্পপতি থাকা সত্ত্বেও দেশের করদাতা মাত্র বিশ-ত্রিশ লক্ষ। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সব সরকারী কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি চালু করার জন্য নতুন একটি করে পদ সৃষ্টি করলে অনেকের সঙ্গে আমিও পিএসসি হয়ে চাকরি লাভ করি। শুরু“ থেকেই সে সময়ের নিয়ম অনুযায়ী কর দেয়ার মতো আয় না হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দিতে শুরু করি, যা দীর্ঘকাল ছিল এবং পরে নিয়মিত আয়কর জমাও দিয়েছিÑ যে ঘটনা সহকর্মীদের, বন্ধুদের উপহাসের বিষয় ছিল। একবার একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি হয় যে, সরকারী কর্মকর্তা যারা তাদের স্ত্রী বা স্বামীর কোয়ার্টারে বাস করে তারা এ যাবত যে বাড়িভাড়া গ্রহণ করেছে তা সরকারী খাতে ফেরত দিতে হবে। সে অর্ডার অনুসরণে কর অফিসে অনেক দৌড়াদৌড়ি করে ওই টাকা ফেরতের একটি মাসিক কিস্তির অর্ডার বের করে সম্ভবত চার বছরে প্রতি মাসে ৪০০ টাকা হারে কেটে ওই টাকা জমা দিয়েছিলাম। ওই সময় কর অফিসের ভাই, বন্ধু, কর্মকর্তারা আমাকে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করত। আরেকটি প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেই নয়। যখনই আমি বাজারহাটে যাই তখনই যা কিছুই কিনি তার জন্য রসিদ চাই। এটা বলছি এ জন্য যে, প্রায়ই দেখা যায়, আমাদের তরুণ প্রজন্মের ক্রেতারা রসিদ নেয়ার প্রয়োজনবোধ করে না। সেজন্য দোকানি যখন বলে- ‘এটা কি আপনার লাগবে’? তখন তরুণদের ও দোকানিকে আমি সরকারের কাছ থেকে জনগণের প্রাপ্ত সেবার ফিরিস্তি দেই। শেষে বলি যে, সরকারের তো নিজস্ব কোন অর্থ থাকে না। জনগণের ‘কর’ই সরকারের কোষাগার তৈরি করে। সরকার খাতওয়ারী সেই কোষাগার থেকে ব্যয় করে সেবাগুলো তৈরি করে এবং আমাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। এ কথা শোনার পর অনেক দোকানিকে দেখি যে, তারা মনে হলো যেন নতুন জ্ঞান লাভ করল, অনেকে উদ্বুদ্ধ হলো। এবার আসব ব্যবসায়ী-ধনীদের সামাজিক খাতে বিনিয়োগ করার বিষয়ে। ভারতে টাটা, বিড়লা, আম্বানী এরা বড় বড় আন্তর্জাতিক মাপের ব্যবসায়ী, যারা জনগণের সেবা-স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বড় বড় বিনিয়োগ করে থাকে। আমাদের দেশের ধনীদের মধ্যে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, তাদের অনেকের অর্থ-বিত্ত এসেছে ভূমি দখল, অবৈধ ব্যবসা, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান থেকে! এই অর্থ প্রকৃতই কৃষ্ণ। তবে সেটিও সাদা হতে পারত, যদি তারা দরিদ্র, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু, আদিবাসীদের জন্য সহায়তাকারী কোন প্রকল্পে ব্যয় করত! তবে দেশের অস্তিত্বের, জনগণের জীবনের ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রধান শত্রু-জঙ্গী ও মৌলবাদ, তাদের বিস্তার রুখতে অস্ত্র, মাদক ব্যবসা অক্ষম শুধু নয়, বরং তাদের পক্ষেই ওই অস্ত্র কাজ করে। সমাজের শান্তিবিরোধী দস্যু, জবরদখলকারীদের হাতে ওই সব অস্ত্র পৌঁছে যায়! তাছাড়াও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্য অনেক পেশাজীবীদের মতোই অসীম আগ্রাসী ধন লোভ দেখা যাচ্ছে, যা বলতে বাধা নেই ব্যক্তিগতভাবে ঘৃণা করি। মনে হয় এই ব্যক্তিদের সারা মুখে একটি বিশাল হাঁ, চারদিকে খাই খাই, চাই চাই করে ঘুরছে! এই খাই খাই, চাই চাই- দলটির হাতে আজ দেশের সীমিত ভূমি, দরিদ্র ও হিন্দুর জমি-বসত, নদী, খাল, জলাভূমি জিম্মি হয়ে পড়ায় সরকার ভূমি, নদী, খাল রক্ষা করতে চেয়ে কাজ করেও রক্ষা করতে পারছে না। এমন দখলকারীরা কি যুদ্ধাপরাধীদের সমান, বঙ্গবন্ধু-হত্যাকারীদের সমান মাপের অপরাধী নয়? এই যে মানবপাচারকারী ধনীরা দরিদ্রের সম্পদ লুট করে ধনী হচ্ছে, তারাও কি যুদ্ধাপরাধীদের মতো অপরাধী নয়? তাদেরও সর্বোচ্চ দণ্ড দিয়ে, তাদের সব সম্পদ বাজেয়াফত করে প্রতি জেলার প্রতারিত পরিবারকে ফেরত দেয়া কি জাতীয় কর্তব্য নয়? শেয়ারবাজার লুটকারী, ডেসটিনিসহ সব প্রতারক সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াফত করেও তো অনেক সেতু, ফ্লাইওভার, রাস্তা, নদী খনন, দরিদ্রদের ভাতা প্রদান করা যায়। এ লক্ষ্যে মান্ধাতার আমলের দীর্ঘসূত্রতার আইনকে সংশোধন, পরিমার্জন করা জরুরী। ব্যবসায়ীরা সবাই তাঁদের জন্য সম্মানজনক হারে দেশকে উন্নত করতে কর দেবেন, এটাই কাক্সিক্ষত। মানুষ তো মরণশীল, ধন-সম্পদ তো রেখেই কবরে যেতে বাধ্য সবাই। পড়ে থাকবে শুধুমাত্র অবদান, অন্যের জন্য, দেশের জন্য করে যাওয়া কাজ। এবার আসি ঢাকার রাজপথের যানজট প্রসঙ্গে, যার নায়ক হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। এ বিষয়ে আগেও লিখেছি, উল্লেখ করেছি, সাহারা আপা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে যখন পরীক্ষামূলকভাবে রাজপথে যান নিয়ন্ত্রণে অটো-সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়েছিল তখন সারা ঢাকার রাজপথে কোথাও কোন যানজট প্রায় ছিল না। আমি সে সময় যানজটে আটকে পড়তে হয়, এমন রাস্তাগুলোতে কয়েকটি কাজে প্রতিদিন বের হওয়ায় এই অকল্পনীয় (আসলে এটাই স্বাভাবিক) দৃশ্য দেখেছি। এরপর নানা সময়ে যত পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি প্রত্যেকের উত্তর ছিল একই, ‘হ্যাঁ, এটা পুলিশই করে।’ যাই হোক দেখছি, সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়গুলোতে কম্পিউটার ব্যবহার না করে হাতে লেখা ফাইল চলাচল এখনও যেমন বন্ধ করা যায়নি, তেমনি ট্রাফিক পুলিশদের অটো-সিগন্যালকে তাদের চাকরির ওপর হুমকি বলে মনে করে এটি চালু করা যায়নি। অর্থাৎ সচিবালয়, ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনো ডিজিটাল হতে পারেনি। এই ট্রাফিক পুলিশ, যারা অসম্ভব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কষ্ট করে, তাদের পুলিশের প্রয়োজনীয় অন্যান্য নিরাপত্তামূলক কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে দ্রুত পদায়ন করা দরকার। অন্যদিকে নতুন তরুণ কম্পিউটার চালনায় পারদর্শী একদল ট্রাফিক-ভলান্টিয়ার পুলিশ নিয়োগ করা যেতে পারে, যারা ‘অটো-সিগন্যাল’ ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে। সন্দেহ নেই, এমনকি এই যন্ত্রগুলোকে তারা আরও উন্নত করতে যন্ত্র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে জনগণকে যানজটমুক্ত যাতায়াতের সুবিধা দিতে আগ্রহী হবে। একটি উদাহরণ দেই- প্রায় সপ্তাহ তিনেক আগে সেদিন কোন দলের কোন সভা ছিল না। তারপরও সেদিন পুরো ঢাকা, এমনকি ফার্মগেটের ওয়ানওয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে যাবার রাস্তাটি পর্যন্ত যানজটে বন্ধ হয়ে থাকে যখন তখন বুঝতে হয়, এটি তৈরি করা যানজট। যেমন প্রতিদিন ট্রাফিক পুলিশ হাত তুলে, লাল আলোজ্বলা প্রিয় হাতিয়ারটি তুলে রাস্তার একটি দিক আধঘণ্টার বেশি পর্যন্ত বন্ধ করে রেখে পুরো রাস্তায় দীর্ঘ একটি যানের লাইন তৈরি করে। তাদের ইচ্ছামতো কোনদিন রাস্তার এই পাশ, তো কোনদিন বিপরীত পাশে এই পরিকল্পিত যানজট তৈরি করা হয়, যা বুঝতে বেশি শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। আরেকটি উদাহরণÑ প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার পুলিশ ভবন ১২টার সময় উদ্বোধন করবেনÑ এটি কারো জানা ছিল না। এইদিন ট্রাফিক পুলিশ ভোর ৭টা থেকেই নিকেতনের ও গুলশানের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। অথচ ওই স্থানটি থেকে অফিসযাত্রী, স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ১০টার মধ্যে সহজে চলে যেতে পারত এবং পুলিশ ১১টায় ওই পথ বন্ধ করতে পারত। পথগুলো বন্ধ করার আদৌ দরকার ছিল কিনা জানি না। এই পথগুলো পুলিশ খুলে দেয় বেলা ৩টার দিকে। এই ভোর থেকে বন্ধ হওয়া পথের বিষয়টি যাত্রীদের জানা না থাকায় তৈরি হয় তীব্র যানজট, যার সঙ্গে ভোরের বৃষ্টি তৈরি করে জলজট। এই যানজট স্বাভাবিকভাবেই পুরো ঢাকায় নানা অংশে ছড়িয়ে পড়ল। যে শিশুটিকে আমি পরীক্ষার পর ১২টায় তুলব বলে ১১টায় যাত্রা শুরু করেছিলাম, অন্য দিন ওর স্কুলে যেখানে আমি ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে পৌঁছাই, সেদিন পৌঁছালাম পৌনে দু’টার সময়। ওদের বাসা নিকেতনে ঢুকতে পারব কিনা এ নিয়ে ছিলাম চিন্তিত। তাহলেই বুঝুন, একদিকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে পিএম-এর নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষকে নাস্তানাবুদ করা হলো, অপরদিকে নতুন মেয়রদের জন্য ‘জলজট’-এর সঙ্গে যানজটের চ্যালেঞ্জ নতুন করে উপস্থিত হলো। প্রধানমন্ত্রীকে কিছুদিন ডিজিটালি নিজ কার্যালয়ে বসে এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করতে অনুরোধ করব। কেননা, তিনিই দোষের ভাগী হয়েছেন, যা হয়তো তিনি জানেনও না। অসহনীয় যানজট, জলজট যে কোন মানুষকে বিরক্ত করে তোলে, তা তো বলাই বাহুল্য। আমার মতে ট্রাফিক পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এই দু’দিনের যানজটের পর বদলি হওয়ার কথা। যারা ‘অটো-সিগন্যাল’ চালাতে অক্ষম হবেন তাঁদের দ্রুত বদলানো দরকার। এই একটি ইস্যু কিন্তু সুশাসনকে দুঃশাসনে পরিণত করে। সেজন্যই কি সরকারবিরোধীদের এত বিরোধিতা! ডিজিটাল মন্ত্রণালয় সুশাসনের হাতিয়ার হবে, যা একদল আমলা হতে দিতে চান না। আশা করি, তরুণ-তরুণী আমলারা দ্রুতই এই অবস্থা পাল্টে দেবে। এটা বলতেই হবে, নতুন যুগের প্রযুক্তির সঙ্গে যারা তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না, তারাই অচল এবং প্রাচীন অচলায়তনে বন্দী। তাদের দিয়ে উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাদের ঝরে পড়তে হবে নতুনদের জায়গা করে দিতে, এটিই যুগের নিয়ম, যা না চাইলেও সংঘটিত হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×