ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ চুক্তি হবে আজ থিম্পুতে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ জুন ২০১৫

চার দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ চুক্তি হবে আজ থিম্পুতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে আজ সোমবার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চুক্তি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, এর ফল পেতে বাংলাদেশকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর এই চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) নীতিমালা অনুযায়ী ট্রানজিট ফি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করবে সরকার। রবিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ টায়ার টিউব ম্যানুফ্যাকচারার এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএমইএ) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গত ৮ জুন সোমবার আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশে, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল বিষয়ক চুক্তির খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময় জানানো হয়, আজ ১৫ জুন থিম্পুতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটরযান চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ভবিষ্যতে এই চার দেশের সম্মতিতে যোগাযোগে অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগও চুক্তিতে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, সড়কপথে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলের জন্য বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকল এ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’ স্বাক্ষর করা হবে। চুক্তির খসড়া অনুযায়ী চার দেশের মধ্যে চলাচলে রুট পারমিট নিতে হবে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোন যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না। যে দেশের ওপর দিয়ে যানবাহন যাবে, সেই দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা সার্চ ও ইন্সপেকশন করতে পারবে। এছাড়া কোন দেশে যদি একটি পণ্য নিষিদ্ধ থাকে তাহলে সেই দেশের ওপর দিয়ে ওই পণ্য পরিবহন করা যাবে না বলেও চুক্তির খসড়ায় রয়েছে। তিন বছর পর পর এই চুক্তি নবায়ন হবে। কোন দেশ চাইলে ছয় মাসের নোটিস দিয়ে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পাররে। ইতোপূর্বে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপের আদলে এই চার দেশের মধ্যে ২০১৬ সালে মোটরযান চলাচল শুরু করা যাবে। এদিকে চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ক আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, এখন চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত রয়েছে। তবে মংলা বন্দর প্রস্তুত নয়। তবে মংলা বন্দরকে ইমপ্রুভ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া এই চুক্তি বাস্তবায়নে দেশের সড়কগুলোও উন্নত করতে হবে। যোগাযোগের জন্য ব্যয় নির্ধারণ কিভাবে করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সুবিধা প্রোভাইড করতে কস্ট আছে তো! ভুটানে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করতে হবে। ডাব্লিউটিওর নিয়ম অনুযায়ী ট্যারিফ নির্ধারিত হবে, কস্ট এ্যান্ড ফিও প্রযোজ্য হবে। সড়ক কিংবা বন্দর নির্মাণ অথবা সংস্কারকাজে যে ব্যয় হবে সেটাসহ অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করতে হবে। ফি নির্ধারণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন দুই পক্ষ বসে এটা চূড়ান্ত করা হবে। যেমন ধরা যাক- বাংলাদেশ থেকে ভুটানে যাওয়ার রাস্তাটা ঠিক করতে হবে, সেখানে বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন বসাতে হবে। এর তো একটা ব্যয় আছে। এর সঙ্গে একটা ফি যোগ করা হবে। তবে একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের অবকাঠামোও উন্নত করতে হবে। ইতোপূর্বে গত ২০১০ সালে ট্রানজিট বিষয়ক কোর কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, নীতিগতভাবে এটা ঠিক আছে, কিন্তু তারা যে ক্যালকুলেশন করেছে সেটা এ্যাবসার্ড। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অ’বার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন। এ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পে অর্থায়ন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। অর্থমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশের একটি ভাল উন্নয়ন অংশীদার। ফ্রান্সের একটি দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে অনেক কাজ করছে। টায়ার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বহাল ॥ বাংলাদেশ টায়ার টিউব ম্যানুফ্যাকচারার এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএমইএ) সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে টায়ার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক রাবার আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং হালকা যানবাহনে ব্যবহৃত ১৬ ইঞ্চি রিম সাইজের টায়ার আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাকৃতিক রাবার আমদানিতে শুল্কহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ এবং ১৬ ইঞ্চি রিম সাইজের টায়ার আমদানিতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশীয় শিল্পের স্বার্থে বাজেট পাসের সময় সম্পূরক শুল্কটা আবার আরোপ করা হবে।
×