ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহেশখালীর বিদ্যুত হাবে সব ধরনের কাজে আগ্রহী চীনা কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৩ জুন ২০১৫

মহেশখালীর বিদ্যুত হাবে সব ধরনের কাজে আগ্রহী চীনা কোম্পানি

রশিদ মামুন ॥ মহেশখালীর ভূমি উন্নয়ন, কয়লা খালাসে বন্দর নির্মাণ, কয়লা পরিবহন ব্যবস্থাপনা, আবাসনসহ পুরো এলাকায় নগরায়ন করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল কমপ্লিট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন সিনোম্যাক। একই সঙ্গে পটুয়াখালী বিদ্যুত কেন্দ্রেরও ভূমি উন্নয়নের কাজ করে দেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে কোম্পানিটি বলছে, প্রয়োজনে তারা চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকারকে ঋণ সংগ্রহ করে দিতে পারবে। তাদের সে ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। সরকার মহেশখালীতে পাঁচ হাজার একর ভূমি নিয়ে বিদ্যুত হাব, দুটি এলএনজি টার্মিনালসহ আধুনিক নগরায়নের পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে মহেশখালীকে ঘিরে বিদেশী বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির আগ্রহ দেখা গেছে। এখানে জাইকার ঋণে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। একই সঙ্গে কয়লা খালাসে একটি আধুনিক পোর্টও নির্মাণ করা হবে। এছাড়া চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের আর্থিক সহায়তায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের ৪টি বিদ্যুত কেন্দ্র হবে। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। সবগুলো বিদ্যুত কেন্দ্র হবে মহেশখালীতে। এর বাইরে পেট্রোবাংলা একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য টার্মশীট স্বাক্ষর করেছে। পাওয়ারসেল আরও একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুটি টার্মিনালই মহেশখালীতে নির্মাণ করা হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে মহেশখালী। সম্প্রতি ঘোষিত বাজেটে আমদানিনির্ভর কয়লাকে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষিত বাজেটে আট হাজার ৭১১ মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তির কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ২০১৫ সালের পর কয়লাকে বিদ্যুত উৎপাদনের মূল জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। এজন্য এখন সরকার কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এসব প্রকল্প দেখভাল করছেন। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পেয়েছে মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প। একই সঙ্গে মহেশখালীর উন্নয়ন পরিকল্পনা। এই বিশাল কর্মকা- পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারকে বিশেষ উপযোগী স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কয়লা আমদানি এবং পরিবেশগতভাবে এই এলাকায় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ওপর এখনও দেশে কোন বিরোধিতা হয়নি। পরিবেশবাদীরা এই এলাকার কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের পক্ষে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা হবে। যার বেশিরভাগ স্থাপন করা হবে মহেশখালীতে। সম্প্রতি সিনোম্যাক বিদ্যুত বিভাগে দেয়া এক চিঠিতে জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, কয়লা সরবরাহ, সড়ক, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন, কয়লা বন্দর, বিমানবন্দর, জ্বালানি তেল ও গ্যাস মজুদ ট্যাঙ্কার এবং টার্মিনাল নির্মাণ করে দেবে প্রতিষ্ঠানটি। সব ধরনের যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করবে তারা। প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিতে পারবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সিনোম্যাক জানায়, ৫০টি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ও ১১টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আছে সিনোম্যাকের। ১৮০টি দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। অনেক বছর ধরে চীনের সেরা কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে সিনোম্যাক। এমনকি বিশ্বের সেরা ২২৫ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ২৪ নম্বরে আছে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ সংগ্রহ করার সামর্থ্য রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে শিগগিরই সাক্ষাত করতে এদেশে আসতে চায় সিনোম্যাকের প্রতিনিধি দল। সরকারী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
×