ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসি

শত বাধা পেরিয়ে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১২ জুন ২০১৫

শত বাধা পেরিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ের অপু, ফিরোজ ও হিমু। তাদের বাড়ি প্রত্যন্ত এলাকায়। উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য কারোরই নেই। তাহলে কি তাদের শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটবে এখানেই? শাবনুর আক্তার অপু জেলা সদরের গোফাপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রির মেয়ে শাবনুর আক্তার অপু। সে চলতি বছর জেলা সদরের দেওয়ানহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা সাইফুল ইসলাম। মা নারগিস বেগম একজন গৃহিণী। সম্পদ বলতে ৬ শতক জমির ওপর বাড়ি। দুই বোনের মধ্যে অপু ছোট। বড় বোন শাবানা আক্তার শিপু পঞ্চগড় এম আর সরকারী কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সংসারের মধ্যে বাবা সাইফুল ইসলাম একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সাইফুল ইসলাম মানুষের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দিলেও নিজে থাকেন কুটিরে। তার ইচ্ছা, বড় হয়ে মেয়ে শিক্ষক হয়ে দেশের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাবে। ফিরোজ হোসাইন পঞ্চগড় চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ফিরোজ হোসাইন। সে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের আরাজি গাইঘাটা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ফজলুর রহমানের ছেলে। মা ফাতেমা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফিরোজ দ্বিতীয়। নিজের দেড় বিঘা জমির সঙ্গে মানুষের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে সংসার চালান বাবা ফজলুর রহমান। সংসারের অভাব তাড়াতে বড় ভাই ওমর ফারুক লেখাপড়া বাদ দিয়ে পিকআপে হেলপারের কাজ করছে। ছোট ভাই ফেরদৌস ষষ্ঠ শ্রেণী ও একমাত্র বোন ফারজিনা আক্তার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন বাবা-মা। ফিরোজ ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। হিমু আক্তার পঞ্চগড় জেলা সদরের পঞ্চগড় ইউনিয়নের কায়েতপাড়া গ্রামের হারেছ আলীর মেয়ে হিমু আক্তার। সে এবার জগদল নুর আক্তার সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে হিমু দ্বিতীয়। বাবা হারেছ আলী সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। বড় ভাই মিজানুর রহমান মিলন পঞ্চগড় এম আর সরকারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ভাই মুসাইদ রহমান মনজিরের বয়স মাত্র এক বছর। বাড়ি-ভিটাসহ ৫০ শতক জমিই তাদের সম্বল। ধানসহ সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করে যা আয় হয় তাই দিয়ে তাদের সংসার চলে। বাবা হারেছ আলী দুই বছর থেকে হৃদরোগে ভুগছেন।
×