ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিটনের অভিষেক, ৮ বছর পর কিপিংয়ে নেই মুশফিক

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১১ জুন ২০১৫

লিটনের অভিষেক, ৮ বছর পর কিপিংয়ে নেই মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কাঁটায় কাঁটায় ১০ বছর ১ মাস পেরিয়ে গেছে টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণের পর। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে ঐতিহাসিক লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মুশফিকুর রহীমের। মূল পরিচয় উইকেটরক্ষক হলেও তখন অভিজ্ঞ খালেদ মাসুদ দলে থাকায় অভিষেকের পর টানা দুই টেস্টে ওই দায়িত্ব নিতে হয়নি। সর্বপ্রথম শ্রীলঙ্কা সফরে কলম্বোয় ২০০৭ সালের ৩ জুলাই মূলপরিচয় উইকেটরক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হন তিনি। এরপর থেকে টানা প্রায় ৮ বছর উইকেটের পেছনে কাটিয়ে দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে। তবে হাতে ব্যথা থাকার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লায় একমাত্র টেস্টে তিনি উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন না। প্রথমদিনের প্রায় পুরোটা সময় ফিল্ডিং করেছেন ফাইন লেগ ও শর্ট মিডউইকেটে। সেই গুরুভারটা চেপেছে ২০ বছর বয়সী তরুণ লিটন কুমার দাসের ওপর। প্রথম দিন থেকেই উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দেশের টেস্ট ইতিহাসে ৭৭তম ক্রিকেটার হিসেবে এদিন অভিষেক হয়েছে ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটনের। তবে স্বীকৃত উইকেটরক্ষক হিসেবে সবেমাত্র পঞ্চম বাংলাদেশী হিসেবে তার অভিষেক হলো। যদিও এনামুল হক বিজয় ও আনোয়ার হোসেন উইকেটরক্ষক ছিলেন তবে তারা শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলেছিলেন টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটের পেছনে প্রহরী হিসেবে মুশফিক দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিষেক হওয়ার পর প্রথম দুই টেস্ট ছাড়া সব। যদিও বিভিন্ন সময়ে ইনজুরির কারণে রাজিন সালেহ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা কিপিং করেছেন। তবে ইনজুরির কারণে দলের বাইরে যাওয়ায় মুশফিকের কারণে পুরো টেস্টেই দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে মোহাম্মদ সেলিম, মেহরাব হোসেন জুনিয়রকে। খালেদ মাসুদের সময় তার ইনজুরির কারণে সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতও উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে মুশফিক ২০০৭ সালে উইকেটকিপার হিসেবে দাঁড়ানোর পর থেকে আর কারও সুযোগ মেলেনি। গত এপ্রিল-মে মাসে সফরকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজের সময় ইনজুরিতে পড়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিপিং করেছেন। তবে এবার ভারতের বিরুদ্ধে সেই ইনজুরির ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ব্যাটিং করতে পারলেও পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচে দীর্ঘ সময় ধরে কিপিং করাটা এই মুহূর্তে আশঙ্কাজনক। তাই শুধু ফিল্ডার হয়ে গেলেন তিনি। যেমনটা হয়েছিলেন নিজের অভিষেক টেস্টেই। খালেদ মাসুদ ছিলেন বলে লর্ডসে ২০০৫ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তাকে ফিল্ডিং করতে হয়েছে। নিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২০০৬ সালের ৮ মার্চ শুরু হওয়া বগুড়ায় সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্টে খালেদ মাসুদ থাকায় তিনি শুধু ফিল্ডার ছিলেন। কাঁটায় কাঁটায় ৯ বছর ৩ মাস ২ দিন আগে কলম্বোয় লঙ্কানদের বিরুদ্ধে দলে থেকেও ফিল্ডার ছিলেন, এবারও সেটা হলেন মুশফিক। মূলপরিচয় উইকেটরক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন ২০০৭ সালের ৩ জুলাই কলম্বোয় লঙ্কানদের বিরুদ্ধেই। তারপর থেকে দলে থাকলে তিনিই কিপিং করেছেন। এবার হাতব্যথার জন্য লিটনকে সুযোগ করে দিতেই হলো। তার কাছে ছেড়ে দিতে হলো উইকেটের পেছনের প্রহরার দায়িত্বটা। দিনাজপুরের এ তরুণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজে দলে থাকলেও সুযোগ পাননি একাদশে খেলার। অভিষেক হয়নি। ২১টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ৫৩.৪১ গড়ে ১৯২৩ রান করা লিটন অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগ পাওয়ার। ৬ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে। টপঅর্ডারের এ তরুণ প্রতিভার আরেকটি বড় পরিচয় তিনি নিয়মিত উইকেটকিপিং করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। কিন্তু মুশফিকের জায়গা নেয়াটা বেশ কঠিন। ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক মুশফিক শুধু নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানই নয়, তিনি টেস্ট অধিনায়ক। তাছাড়া বাংলাদেশের টপঅর্ডারেও জায়গা নেই। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানরা আছেন ফর্মের তুঙ্গে। তাই সাইডবেঞ্চে বসে থেকেই কাটাতে হয়েছে। এবার ভারতের বিরুদ্ধে সুযোগ মিলেছে। ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চেয়েছেন লিটনের দিকে। মাহমুদুল্লাহ ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে গেছেন এবং মুশফিকও হাত ব্যথার কারণে কিপিং করতে পারবেন না। অবশেষে লিটনের মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেয়া হলো। আর মুশফিক তার দায়িত্ব হস্তান্তর করলেন তরুণ লিটনকে তার দীর্ঘদিনের গ্লাভসজোড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বটাও। ফতুল্লা টেস্টের প্রথমদিনে মুশফিক প্রায় পুরোটা সময়ই ফাইন লেগ ও শর্ট মিড উইকেটে ফিল্ডিং করেছেন। আর লিটনকে টেস্ট শুরুর আগেই তিনি যে গ্লাভস পরিয়ে দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন সেটা নিয়ে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পালন করেছেন লিটন।
×