ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজায়ন- পাখির অভয়াশ্রম গড়ার বড় উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১১ জুন ২০১৫

সবুজায়ন- পাখির অভয়াশ্রম গড়ার বড় উদ্যোগ

সমুদ্র হক ॥ প্রকৃতির নিসর্গের তরুছায়াতলে জ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারা বয়ে দেয়ার বড় উদ্যোগ নিয়েছে বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজ। আপাতত স্লোগান দেয়া হয়েছে ‘জ্ঞানালোকের ক্যাম্পাসে সবুজের সুবাতাস’। পরবর্তীতে আরও কথা যোগ হবে। সবুজের সঙ্গে প্রকৃতির নিসর্গের সবই পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলা হবে। এই মুহূর্তে কলেজের চারধারে সবুজায়ন এবং পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবুজায়নে ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধক পরিবেশবান্ধব সব ধরনের বৃক্ষ রোপণ করা হবে। একই সঙ্গে গাছগাছালির ভেতরে ঝিলের মতো জলাশয় বানিয়ে পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামস্ উল আলম এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মীর ত্বাইফ মামুন। উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শিরিন এনাম ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোঃ আব্দুল মান্নানসহ কয়েকজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কলেজের চারধারে যেসব জমি বেদখল হয়ে গিয়েছিল তা দখলমুক্ত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসসহ এক শ’ বিঘারও বেশি জমি আছে। কর্তৃপক্ষ জানালেন, উত্তরাঞ্চলে পরিযায়ী পাখির (মাইগ্রেটরি বার্ড) কোন আশ্রম নেই। কলেজের যে জমি আছে তা বেশিরভাগ সময়ই অনাবাদী থাকে। এই জমির কিছু অংশে ঝিলের মতো করে চারধারে গাছগাছালিতে ছেয়ে দিলে শীত মৌসুমে অতিথি পাখির দৃষ্টিতে আসবে। ড. ত্বাইফ মামুন বললেন, পিএইচডি করার সময় লক্ষ্য করেছেন অতিথি পাখি নদীর চর, বড় বিল এবং যেখানে জলাশয়ের সঙ্গে বনায়ন আছে সেসব জায়গায়ই বেছে নেয়। শীত মৌসুমে ওদের আগমনের সময় হলে কোন ঝাঁকের এমন দৃশ্য একবার দৃষ্টিতে পড়লে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে সেখানেই রয়ে যায়। পরবর্তীতে একের দেখাদেখি আরও পাখি আসে। যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেখানেও এভাবেই অতিথি পাখির আশ্রম গড়ে তালা হয়। সুদূরপ্রসারী এই ভাবনায় সরকারী আযিযুল হক কলেজকেও প্রকৃতির নিসর্গের আচ্ছাদনে জ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারায় নিয়ে যাওয়া হবে। নিসর্গ সৃষ্টির কাজও শুরু হয়েছে। স্থানীয় পাখির বাসা তৈরির জন্য কলসিতে বিশেষ ব্যবস্থায় মাটি ভরে কলেজ চত্বরের অনেক পয়েন্টে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কাজ করছে কলেজে গড়ে তোলা পরিবেশ রক্ষার একটি সংগঠন ‘তীর’। নজরদারি করছেন ড. মামুন। প্রবীণরা বলেন, একটা সময় গ্রামে পাখির বাসা তৈরির জন্য এমন ব্যবস্থা করা হতো। পাখির কিচিরিমিচির-কলতানে ঘুম ভাঙত। সন্ধ্যায় ফের নীড়ে ফিরত ওরা। কত সুন্দর-মনোরম ছিল প্রকৃতির পরিবেশ। সেই দিনগুলোকেই ফিরিয়ে আনছে সরকারী আযিযুল হক কলেজ। এ বিষয়ে কলেজের প্রাক্তন প্রবীণ এক শিক্ষার্থী এস এম কবির বললেন, দেশ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. খান মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম স্বনির্ভর সবুজ বিপ্লব কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন কর্মসূচী দেখে এতটাই প্রশংসা করেছিলেন যে, অনেক জনসভার বক্তৃতায় তিনি আযিযুল হক কলেজকে উদাহরণ দিতেন। সাড়ে তিন যুগ পর সেই কলেজেই প্রকৃতির নিসর্গ গড়ে তোলা হচ্ছে। দ্রুতগতিতে এই কাজ এগিয়ে চলেছে। কলেজের মূল দুই প্রবেশপথে গগনসিঁড়ি ও কৃষ্ণচূড়া গাছের মধ্যে রাধাচূড়াসহ নানা অর্নামেন্টাল গাছ লাগানো হয়েছে। কলেজের ফিডার সড়কগুলোর বাংলা ভাষার কাব্যিক নামকরণ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সামস্ উল আলমের কথাÑ বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির কল্যাণে ডিজিটাল। প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষার্থীরা আর এগোতে পারবে না। আমরা যে যুগ পার করে এসেছি সেখান থেকে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা অনেকদূর এগিয়ে। আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে। প্রজন্মের এসব শিক্ষার্থীর হৃদয়ের মানসপটে বাঙালীর শিকড়ের গভীরে চিরন্তন সংস্কৃতি জাগিয়ে তোলাই মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে সবুজ প্রকৃতি ও তার নিসর্গের অনুসঙ্গই তারুণ্যের হৃদয়ে সৃজনশীলতার ধারায় সৃষ্টিশীল ভাবনা জাগিয়ে তোলে। তারুণ্যের মধ্যে এই বোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে এই কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সীমিত সাধ্যের মধ্যেই তা করা সম্ভব। অধ্যক্ষ বললেন, আমরা মনে করি এমন নিসর্গের সান্নিধ্য পেলে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যে মননশীলতা ও সুস্থ ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠবে ওদের পরবর্তীতে জীবনের সকল অঙ্কেই তা সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
×