ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএস বিরোধী লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১১ জুন ২০১৫

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল পরিবর্তন

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লক্ষ্য স্থির করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন করে ওবামা প্রশাসন আনবার প্রদেশে একটি নতুন সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা এবং রামাদি নগরী পুনর্দখলে ইরাকী বাহিনীকে সাহায্য করতে ৪শ’ মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষককে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও ঘোষণা করা না হলেও গত বছর আইএসের হাতে পতন হওয়া আরেকটি নগরী মসুল পুনর্দখলের জন্য কিভাবে বলিষ্ঠ পরিকল্পনা নেয়া যায় সে বিষয়ে পর্দার অন্তরালে কয়েক মাসব্যাপী বিতর্কের পর এই নতুন পরিকল্পনা গৃহীত হলো। চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযানের প্রথম পর্যায়ে এসবের ওপর গুরুত্ব দেয়া হতে পারে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। গত মাসে রামাদির পতন অন্তত সাময়িক সময়ের জন্য হলেও প্রশাসনের বিতর্ক কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, রামাদি পুনর্দখলের লক্ষ্যেই এখন সুদীর্ঘ অভিযান পরিচালিত হতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে মসুল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালানো হবেÑ তা সম্ভবত ২০১৬ সালের আগে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ড মসুল পুনর্দখলের জন্য যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে তা ব্যাপকভাবে নির্ভর করে ইরাকী সেনাবাহিনীর পুনর্প্রশিক্ষণের প্রচেষ্টার ওপর, যা দৃশ্যত মন্থরগতিতে শুরু করা হয়েছে। কোন কোন কর্মকর্তা মসুল দখলের সময়সূচীকে অবাস্তব বলে মনে করেছিলেন আবার কেন্দ্রীয় কমান্ডের একজন কর্মকর্তা যখন ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বসন্তেই নগরীটি দখলের পরিকল্পনা করা হয়েছে সে সময় ইরাকী কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এখন হোয়াইট হাউসের অনুমোদন সাপেক্ষে হাব্বানিয়াহ শহরের কাছে ইরাকী ঘাঁটি আল তাক্কাদুমকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র আলিস্টেয়ার ব্যাস্কি বলেন, প্রশাসন ইরাকী নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান ও অস্ত্রসজ্জিতকরণ ত্বরান্বিত করার আশা করছে এবং বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ‘অতিরিক্ত প্রশিক্ষক প্রেরণ’ও এর অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষক ও উপদেষ্টাসহ প্রায় তিন হাজার সৈন্য আছে। তবে সমালোচকরা হোয়াইট হাউসের এই পদক্ষেপের পরিকল্পনাকে ‘অসম্পূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এতে আমেরিকান সৈন্যদের ভূমিকার বিস্তার ঘটানোর কোন কথা নেই, যেমন পরিকল্পনায় বিমান হামলা চালাতে বলার জন্য শত্রুর অবস্থান শনাক্তকারীদের ব্যবহার করার কোন কথা নেই। প্রশাসনের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত বিতর্ক চলছে যে, আইএস বিরোধী অভিযানের প্রথম পদক্ষেপ কী হবে? জেনারেল লয়েড জে. অস্টিনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমান্ড দীর্ঘদিন ধরে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মসুল পুনর্দখল করে আইএসের বিরুদ্ধে একটি আঘাত হানার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। ২০১৪-এর জুনে চরমপন্থী গোষ্ঠী মসুল দখল করে নেয়। উত্তর ইরাকের নিনেভ প্রদেশের রাজধানী হলো মসুল। গত বছরের জুলাইয়ে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদী মসুলেই উদ্ধত ভঙ্গিতে ধর্মীয় নসিহত দান করেন। ইরাকের বৃহৎ তেল স্থাপনা বাইজি শোধনাগার মসুলগামী প্রধান সড়কের ধারে অবস্থিত। জেনারেল অস্টিন যখন উত্তরের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন, সে সময় পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম ইরাকের আনবার প্রদেশের কৌশলগত গুরুত্বকে তুলে ধরছেন। ইরাকের বহু সুন্নি উপজাতির বাস আনবারে। আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকান কর্মকর্তারা তাদের সমর্থন পেতে আগ্রহী। আনবারের প্রাদেশিক রাজধানী রামাদি বাগদাদ থেকে ৭০ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থিত। প্রদেশটি সৌদি আরব ও জর্দানের সীমান্তবর্তী। এই দুটি দেশ আইএস বিরোধী জোটের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রশাসনের মধ্যে দুটি পৃথক অবস্থানের বিষয়টি সামনে চলে আসে যখন জয়েন্ট চীফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্টিন ই. ডেম্পসি জোর দিয়ে বলেন, রামাদি ইরাকের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। গত মাসে আইএসের হাতে রামাদির পতনের ফলে চরমপন্থী গোষ্ঠীটি আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে আছে। মার্কিন প্রশাসনের এই বয়ানকে চুপসে দেয়।
×