ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাধা দূর করার দাবি বিসিএসের

হার্ডওয়্যার পণ্যের দাম বাড়লে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৯ জুন ২০১৫

হার্ডওয়্যার পণ্যের দাম বাড়লে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে

ফিরোজ মান্না ॥ এবারের বাজেটে সফটওয়্যার শিল্পের ওপর থেকে শুল্ক কমানো হলেও বাড়ানো হয়েছে হার্ডওয়্যার শিল্প পণ্যের দাম। এতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ নামে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনার অর্থমন্ত্রীর প্রত্যয় বিঘœ ঘটবে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক খাতের সুসমন্বিত উন্নয়ন ছাড়া প্রযুক্তি খাত কখনই উৎপাদনশীল হবে না। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) নেতৃবৃন্দ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হার্ডওয়্যার শিল্প বিকাশের অন্তরায় দূর করার দাবি জানিয়েছেন। বিসিএস নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থমন্ত্রী সফটওয়ার শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে বাজেটে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। ৬ শতাংশের চক্র ভেঙে বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গত বাজেটে তিনি ‘সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ’ গড়ার যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবারে তা আরও পরিমার্জিত করেছেন। ২০০৯ সালে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ৭৬ কোটি টাকার বাজেট রেখেছিলেন। এবার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে (আইসিটি) বরাদ্দ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই বাজেট কোনভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। গতবারের তুলনায়ই এই বৃদ্ধি ৩৫৮ কোটি টাকা। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক ও সাহসী মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেটে সফটওয়ার ও সেবা খাতের কর অবকাশ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ক্যামেরার শুল্ক ২৫ ভাগ থেকে ১০ ভাগ করা, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যতীত অন্য সফটওয়্যারের ওপর শতকরা ৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে হাইটেক পার্কে যারা ব্যবসা করবেন তাদের জন্য বিদ্যুত ও ভ্যাট মওকুফ করার মতো ইতিবাচক প্রস্তাব করা হয়। বিসিএস নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজেটে হার্ডওয়্যার খাত ও আইটি অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। অথচ হার্ডওয়্যার ও আইটি অবকাঠামো ছাড়া এর কোনটি থেকেই সুফল পাওয়া কঠিন বিষয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে আইসিটি ভৌত অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করতে হাইটেক পার্ক, সফটওয়ার টেকনলোজি পার্ক ও ইনফরমেশন টেকনলোজি পার্কের আগে হার্ডওয়্যার খাতে বিশেষ গুরুত্ব দাবি করেন তারা। হার্ডওয়্যার শিল্পকে বাইরে রেখেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আশা করছি চূড়ান্ত বাজেটে আইটি ও আইটিইএসর মধ্যে হার্ডওয়্যার খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটা না হলে নতুন উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তখন কেবল আইটি ভোক্তার আবর্তেই ঘুরপাক খাবে এই সেক্টর। প্রযুক্তি খাত শিল্পায়নের শুরুতেই হোঁচট খাবে। ফলে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করাও একটি বড় চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়াবে। ডিজিটাল ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে শুধু আইসিটি ডিভিশনই নয়, সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। হার্ডওয়্যার খাতকে কোনভাবেই পেছনে ফেললে চলবে না। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে অনলাইন কেনাকাটার ওপর ৪ শতাংশ ধার্য কর এবং ব্যবহারকারী পর্যায়ে ইন্টারনেটে ১৫ শতাংশ কর অব্যাহত রাখার বিষয়টিও দেশের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে অন্তরায় হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সিম বা রিমের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবায় ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে মোবাইলে কথা বলা ও ডাটা (ইন্টারনেট) ব্যবহারের ব্যয় বাড়বে। এর ওপর প্রস্তাবিত শতকরা এক ভাগ সারচার্জ সেবার খরচ আরও বেড়ে যাবে। এমনিতে মোবাইল ফোনে কথা বললে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করলে গ্রাহককে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা মূসক দিতে হয়। প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে মোবাইল ব্যবহার খরচ বেড়ে যাবে। মোবাইল নির্ভর প্রযুক্তি সেবার ব্যয় ভোক্তা পর্যায়ে বাড়লে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। এর মাধ্যমে যে আয় হবে সেই আয়ে ভাটা পড়বে। বাড়তি চাপে পড়বেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা মুক্তপেশাজীবীরা। ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে নেয়া দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করা হচ্ছে।
×