ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এরদোগানকে রুখলো কুর্দিরা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৯ জুন ২০১৫

এরদোগানকে রুখলো কুর্দিরা

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানের আরও ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার আশা রবিবারের সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এ নির্বাচনে তার প্রতিষ্ঠিত একে পার্টি পার্লামেন্টে প্রথম বারের মত স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়। এ ব্যতিক্রমী ফলাফলকে জনগণের হাতে এরদোগানের ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হবে। নির্বাচনী প্রচার অভিযানকালে প্রেসিডেন্টের আচরণ ছিল অস্বাভাবিকভাবে গেয়ো এবং সেজন্য নির্বাচনে তাঁকে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়। একই সময়ে নির্বাচনের ফলাফল ছিল দেশটির ১ কোটি ৮০ লাখ কুর্দি সংখ্যালঘুর জন্য এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সাফল্য। কুর্দিরা এ প্রথম পার্লামেন্টে এক রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে প্রতিনিধি পাবে। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ইয়াহু নিউজের। এরদোগান ক্ষমতাসীন জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) জন্য নিরঙ্কুশ বিজয় আশা করেছিলেন। এতে দলটি সংবিধান পরিবর্তন করে আরও শক্তিশালী মার্কিন ধাঁচের এক প্রেসিডেন্টের পদ সৃষ্ট করতে পারত। সেটি করতে হলে দলটিকে পার্লামেন্টে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী করার প্রয়োজন হত। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, দলটি প্রায় ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর এ প্রথম পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে একা সরকার গঠন করতে অসমর্থ হয়ে পড়েছে। দলটিকে আগামী সপ্তাহগুলোতে দ্বিধাগ্রস্ত বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে এক স্থিতিশীল কোয়ালিশন সরকার গঠন প্রশ্নে কঠিন আলোচনা চালাতে হবে এবং আরেকটি আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার সম্মুখীন হতে হবে। শতকরা ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ ভোট গণনার পর দেখা যায়, একেপি শতকরা ৪১ ভাগ ভোট পেয়ে সবার চেয়ে অগ্রগামী রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) শতকরা ২৫ ভাগ ডানপন্থী ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি) শতকরা ১৬ দশমিক ৫ ভাগ এবং কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) শতকরা ১৩ ভাগ ভোট পেয়েছে। নির্বাচনে শতকরা ৮৬ ভাগ ভোট পড়ে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী, ৫৫০ আসনের পার্লামেন্টে একেপি ২৫৮টি, সিএইচপি ১৩২টি, এমএইচপি ৮১টি এবং এইচডিপি ৭৯টি আসন পাবে। একেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থেকে ১৮টি আসন কম পাবে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান তুরস্ককে এক প্রেসিডেন্ট শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একে পাটির দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাচ্ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি একেপির ভোট বাড়ানোর চেষ্টায় ব্যক্তিগতভাবে দেশ সফর করে প্রচার চালান। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং কুর্দিদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির অভাব এবং এরদোগান আধা এক নায়কের ক্ষমতা হাতে নিতে পারেন এমন উদ্বেগ প্রেসিডেন্টের উচ্চাভিলাষ ব্যর্থ করে দেয়। এরদোগান কিভাবে এ বিপরীতমুখী পরিবর্তন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কারণ তিনি এখনও তুর্কি রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। প্রেসিডেন্ট সহজে পরাজয় মেনে নেবেন বলে মনে হয় না। নির্বাচনের আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি প্রচার অভিযানকালে তার সমালোচনা করেছিলেন এমন সাংবাদিক ও বিরোধীদের ওপর দমননীতি চালানোর পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচনী প্রচার অভিযানকালে এরদোগানের আচরণ ছিল অস্বাভাবিকভাবে চাষাড়ে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এক নিরপেক্ষ অবস্থান নেবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়। কিন্তু এর বদলে তিনি একেপির সমর্থনে জনসভা করতে দেশজুড়ে ঘুরে বেড়ান। তাই এ ফলাফল থেকে তাকে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছেÑ এমনটিই মনে হয়। এরদোগান তার রাজনৈতিক বিরোধী, নারী অধিকার কর্মী, মিডিয়া, অমুসলিম এবং সব ধরনের জাতিগত ও কৃষ্টিগত সংখ্যালঘুদের অপমান করেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এবং তাদের হুমকি দেন। গত মাসে এরদোগান কুর্দিপন্থী এইচডিপিকে সমকামী ও নাস্তিকদের দল বলে গালি দেন। একেপির দরিদ্র ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম শ্রমজীবী সমর্থকদের অনুভূতিকে কাজে লাগানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। তিনি (্এইচডিপি) সন্ত্রাসবাদের সমর্থক এবং পিকেকের মিত্র বলেও উল্লেখ করেন।
×