ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নেইমারের স্বপ্ন পূরণ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ জুন ২০১৫

নেইমারের স্বপ্ন পূরণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম মৌসুম ছিল গতবার। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ধরন আর স্পেনের ফুটবলের ধরনে আছে বৈপরীত্য। তাই নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সিলোনার ফুটবলেও আছে যথেষ্ট বৈচিত্র্য। তাই সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি গতবার। তবে এবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগে দুর্দান্ত খেলেছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। বার্সাকে শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন একটি গোল করে। এ গোলের মাধ্যমে তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন বার্সার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি ও রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। এ তিনজনই বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এবারের আসরে ১০ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে নেইমারের জন্য এরচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয়ের স্বাদ পাওয়া। বার্সায় যোগ দেয়ার পরই স্বপ্নটা দেখেছিলেন, সেটা সত্য হয়েছে। সত্য হয়েছে শৈশবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে গোল করার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটাও। তবে তিনি প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসের খেলায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। কাতালান জার্সি পরে গত মৌসুমেই প্রথম খেলেছেন নেইমার। তাকে বার্সার ফুটবলের সঙ্গে ধাতস্থ করে তোলার জন্যই যেন মূলত ভিন্ন ভূমিকায় ব্যবহার করেছিল বার্সা। প্লে-মেকার হিসেবে দারুণ খেললেও অবশ্য গোল তেমন পাননি। তবে পুরো এক বছর খেলার পর বেশ ভালভাবেই স্প্যানিশ ফুটবলের চাল চরিত্র বুঝে ফেলেছেন। গতবার বার্সিলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। ফলে তরুণ নেইমারের স্বপ্ন পূরণ হয়নি শিরোপা জেতার। এবার স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গেল নেইমারের। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মতো আসরের ফাইনালে গোল করেছেন। হতে পারত দুটি গোল, তবে অফসাইডের অজুহাতে নেইমারের করা প্রথম গোল বাতিল করা হয়। কিন্তু ইনজুরি সময়ে নেইমার ঠিকই লক্ষ্যভেদ করেন কাউন্টার এ্যাটাক থেকে। তার করা গোলের পরই শেষ বাঁশি বেজে যায়। ম্যাচশেষে মাঠে গোলপোস্টের কাছে মাথায় একটা ব্যান্ডানা বেঁধে অনেকক্ষণ হাঁটু মুড়ে বসে ছিলেন। দুই হাত দিয়ে চোখ ঢাকা ছিল। যদিও গোল করার পর কাতালানদের হয়ে শিরোপার উৎসবটা শুরু করেছিলেন তিনিই। কিন্তু পরে আবেগী হয়ে যান। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ আসরের শিরোপা জিতেছে তার দল বার্সা, এ মৌসুমে ট্রেবল হয়ে গেছে আবার তিনিও অনেক গোল করেছেন। তাই আবেগটাকে দমিয়ে রাখতে পারেননি কিছুতেই। বার্সিলোনার জার্সি গায়ে এবার সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫০ ম্যাচে ৩৯ গোল করেছেন নেইমার। ২০০৯ সালের পর আবারও ট্রেবল জিতেছে কাতালানরা। আর এমন গৌরবের মালিক হয়ে গেলেন নেইমার নিজের দ্বিতীয় মৌসুমেই। এমন সৌভাগ্য হয়নি মেসিরও। অনেকেই বলাবলি করছিলেন এবং কানাঘুঁষা করছিলেন মেসির সঙ্গে নেইমারের জুটিটা তেমন খাপ খাবে না। বার্সাকে ভুগতে হবে। কিন্তু এখন পরস্পরের দারুণ বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন দু’জন এবং জুটি হিসেবেও হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ানক। এ বিষয়ে বার্সার কোচ লুইস এনরিকে বলেন, ‘গত বছর তার প্রথম মৌসুমেই ভাল করেছেন। তবে এবারের মৌসুমে যা করেছেন সেটা মনোমুগ্ধকর এবং এ বছর তিনি অনেক পরিণত হয়ে উঠেছেন। তার নৈপুণ্যই বলে দিচ্ছে তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন ফুটবলার।’ বার্লিনে অনুষ্ঠিত এ ফাইনালকে এখন পর্যন্ত নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে দাবি করেছেন নেইমার। শৈশবে তিনি মনে স্বপ্ন বুনেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে গোল করার। সেই স্বপ্নটাও পূরণ হয়েছে তার। শিরোপা জয়ের পর নেইমার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি প্রথমে পুরো দলকে ধন্যবাদ দিতে চাই এবং কোচকে। এই বিজয়টা আমাদের সবার পরিবারের প্রতি উৎসর্গ করছি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের এবং ছোটবেলায় চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে গোল করার।’ প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। যদিও ফাইনালে প্রত্যাশামাফিক খেরতে পারেনি ওল্ড লেডিরা। নেইমার বলেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টে ভাল খেলেছে জুভেন্টাস। তারা দারুণ কিছু খেলায়াড় নিয়ে দুর্দান্ত একটি দল। তবে আমরা সে সব না ভেবে নিজেদের খেলাটাই খেলতে চেষ্টা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত আমরাই জয়ী হয়ে ফিরেছি।
×