ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে শিক্ষায় অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন

পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের দাবি শিক্ষাবিদদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ জুন ২০১৫

পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের দাবি শিক্ষাবিদদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষায় অপ্রতুল বরাদ্দসহ শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেয়া একের পর এক পরীক্ষার বোঝা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের শিক্ষাবিদরা। পঞ্চম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের দাবি করে তারা অভিযোগ তুলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাচ্চাদের সর্বনাশ করছে। শিক্ষানীতি এমনকি বিশ্বের কোথাও এভাবে বাচ্চাদের পরীক্ষা নেয়া হয় না। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় শিক্ষাবিদরা এসব কথা বলেন। শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় ছিলেন শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খলিকুজ্জমান আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ প্রমুখ। অধ্যাপক ড. খলিকুজ্জমান আহমেদ বলেন, শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু সেখানে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের এভাবে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়নি। এ পরীক্ষা শিশুদের ওপর চাপ তৈরি করছে। এ পরীক্ষা এখন আর শিশুদের নেই। এটা এখন তার মা-বাবার পরীক্ষা হয়ে গেছে। এ পরীক্ষা বাচ্চাদের সর্বনাশ করছে। শিক্ষানীতি এমনকি বিশ্বের কোথাও এভাবে বাচ্চাদের পরীক্ষা নেয়া হয় না। এ পরীক্ষাটা বন্ধ করা উচিত। শিক্ষায় বাজেটের অপ্রতুলতা নিয়ে কথা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। একই কথা বলেছেন শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দও। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা আপত্তি তুলছেন শিক্ষাবিদরা। অভিযোগ তুলছেন অভিভাবকরাও। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের নামে চলা অব্যাহত পরীক্ষা-নিরীক্ষার চক্রে আটকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিশুদের সক্ষমতার কথা বিবেচনা না করে চাপিয়ে দেয়া একের পর এক পরীক্ষা আর বিশাল পাঠ্যক্রমের চাপে তাদের মেধাবী করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাওয়ার দশা। তার পরেও ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে একের পর এক পরীক্ষার বোঝা। দেশব্যাপী ভর্তিযুদ্ধের উৎকণ্ঠা তো আছেই, তার ওপর মেধার মূল্য দিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত দফায় দফায় পরীক্ষা আর ‘এক্সপেরিমেন্ট’-এর বিষয় বস্তুতে পরিণত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সাফল্যের দাবি করলেও এসএসসির আগেই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে শিশুদের দুটি পাবলিক পরীক্ষার মুখোমুখি করা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। শিক্ষাকে অব্যাহত পরীক্ষা ও নিত্য নতুন এক্সপেরিমেন্টের বিষয়ে পরিণত করার প্রবণতায় উদ্বিগ্ন শিক্ষবিদ, শিশু বিশেষজ্ঞসহ অভিভাবক মহল। তাঁদের অভিমত, বিদ্যালয় কেবল কোন পরীক্ষা কেন্দ্র নয়; আবার শিক্ষার্থীরা গিনিপিগও নয় যে তাদের দিয়ে এক্সপেরিমেন্টই চলতে থাকবে। অসংখ্য পরীক্ষা ও যখন তখন নতুন বিষয়ের চাপে শিক্ষা নিয়ে শিশুদের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক। যা শিক্ষর আসল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে মারাত্মকভাবে। তাই শিক্ষা নিয়ে অতিমাত্রায় চলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কোমলমতী শিশুদের ওপর চাপ কমাতে পরীক্ষা ও বইয়ের বোঝা কমানোর দাবি বহুদিনের। বিশেষজ্ঞরা যুগের পর যুগ দাবি জানিয়ে আসছেন, প্রাথমিক স্তরের শিশুসহ সকল শিশুর ওপর অসংখ্য পাঠ্যবইয়ের যে বোঝা আছে তা তাদের মনোবিকাশের স্বার্থেই কমাতে হবে। শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাস্তর করা হলে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা ও ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই দুটি পরীক্ষা নেয়া হবে। শিক্ষাবিদরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, শ্রেণীকক্ষে পাঠ দান ও সকল পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। ভাবার সময় হয়েছে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার সুপারিশ করে বলেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে। একই সময়ে যেহেতু একটি পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে তাহলে শিশুদের জন্য পঞ্চম শ্রেণীতে এবার একটা পরীক্ষা নেয়ার মানে হয় না।
×