ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউরোপের পথে ॥ পাঁচ লাখ অভিবাসী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৮ জুন ২০১৫

ইউরোপের পথে ॥ পাঁচ লাখ অভিবাসী

প্রায় ৫ লাখ শরণার্থী বিপজ্জনক নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় লিবিয়ায় সমবেত হচ্ছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ এইচএমএস বুলওয়ার্কের ক্যাপ্টেন এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এ জাহাজটি লিবিয়ার উপকূলের অদূরে সমুদ্রে চলাচলের অনুপযোগী নৌযানগুলোতে অবস্থানরত যাত্রীদের জীবন বাঁচানোর ব্রিটিশ মিশনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এদিকে, ইউরোপীয় যুদ্ধ জাহাজ ও কোস্টগার্ড নৌযানগুলো শনিবার ভূমধ্যসাগরে কাঠের তৈরি পাঁচটি নৌকা থেকে ২ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। সাগরে আরও সাতটি নৌকা ভাসমান রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মাল্টাভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা মাইগ্রেন্ট অফশোর এইড স্টেশন (এমওএএস) ও ইতালীয় কোস্টগার্ড একথা জানায়। খবর গার্ডিয়ান, বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। বুলওয়ার্কের ক্যাপ্টেন নিক কুক-প্রিস্ট বলেন, লিবিয়ার সীমান্তে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ অভিবাসী অপেক্ষা করছে বলে অভাস পাওয়া গেছে। যখন তিনি এ কথা বলছিলেন, তখন গোয়েন্দা সূত্রে বুলওয়ার্কের ক্রুুদের সাগরে আরও হাজার হাজার অভিবাসী নৌকায় অবস্থান করছে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়। মধ্য ভূমধ্যসাগরে তৎপর প্রায় ১১টি উদ্ধার নৌযানের মধ্যে বুলওয়ার্ক অন্যতম। ব্রিটেন বিপন্ন অভিবাসীদের উদ্ধার করতে ‘অপারেশন উই-ে’ ইতালীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে। অভিবাসীরা লিবিয়াতে লোক পাচারকারী দলগুলোর শিকারে পরিণত হয়। বুলওয়ার্ক গত মাসে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ লোককে রক্ষা করেছে। যাত্রীবোঝাই নৌকাগুলোর কোন কোনটির যাত্রীদের যখনই তারা কোন উদ্ধারকারী জাহাজ দেখবে, তখনই তাদের নৌকা ডুবিয়ে দিতে আগে থেকেই বলে রাখা হয়। অথচ তাদের অনেকেই সাঁতার জানত না। উদ্ধারকারী জাহাজটি যাতে তাদের রক্ষা করে তা নিশ্চিত করতেই তাদের নৌকা ডুবিয়ে দিতে বলে রাখা হয়। নৌবাহিনীর অপারেশনের কমান্ডার কমোডর মার্টিন কোনেন বলেন, এটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী পরিস্থিতি। এটি এক জঘন্য ব্যবসা। এসব চোরাপাচারকারি দলের মানবজীবনের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন বুলওয়ার্কের দুটি হেলিকপ্টারের একটিতে করে জাহাজটি পরিদর্শন করেন। এ দুটি হেলিকপ্টার আটকাপড়া নৌকাগুলোর খোঁজে সাগরের আকাশে চষে বেড়াচ্ছে। যখন ইতালি ও ব্রিটেন উদ্ধার কাজের ভার প্রধানত বহন করছে, তখন তিনি এতে আরও সহায়তা করতে ইউরোপের অবশিষ্টাংশের প্রতি আহ্বান জানান। প্রায় পাঁচ লাখ লোকের লিবিয়া থেকে নৌকায় করে বিপজ্জনক যাত্রায় শামিল হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফ্যালনকে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখন এক দিনেই ৩ হাজার লোকের সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা আপনারা দেখেছেন। আমরা চলতি গ্রীষ্মকালে লাখ লাখে লোকের সেই চেষ্টা চালানোর দৃশ্য দেখতে পারি। এখানে পশ্চিম ও পূর্ব আফ্রিকার দারিদ্র্য ও সংঘাতই ইস্যু। তিনি বলেন, লোক পাচারকারী নির্দয় দলগুলোকে দমন করতে আরও কিছু করা প্রয়োজন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার অভিবাসী লিবিয়া থেকে ২৬০ মাইল পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে ৪০ হাজার ইতালিতে অবস্থান করছে। এদিকে উত্তর আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে আগত অভিবাসীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে পুনর্বাসন করানোর পরিকল্পনা নিয়ে জি-৭ শীর্ষ বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে যাচ্ছেন। ক্যামেরন জোর দিয়ে বলছেন, এরূপ পুনর্বাসন লোক পাচারকারীদেরই কেবল উৎসাহিত করবে। মেরকেল চান, এক নতুন ব্যবস্থার আওতায় শরণার্থীদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তাদের জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তিতে ভাগ করে দেয়া হোক। জি-৭ শীর্ষ বৈঠক জার্মানির ব্যাডোরিয়ায় রবিবার শুরু হয়েছে।
×