ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা চাই

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৭ জুন ২০১৫

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্য দূরীকরণে টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে কোন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বাদ না পড়ে। সেই সঙ্গে দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি ধনী-গরিবের বৈষম্য হ্রাসেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি তাদের শিক্ষা স্বাস্থ্য, জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি। শনিবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্সে প্রথম জাতীয় চর সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলন। ডিএফআইডি, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, অক্সফাম বাংলাদেশ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডসহ ৮০টি বেসরকারী সংস্থা এ সম্মেলনের আয়োজন করে। চরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, জনপ্রতিনিধি, গবেষক, উন্নয়ন কর্মীসহ প্রায় ১২শ’ প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে স্পীকার আরও বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি এ বছরই শেষ হচ্ছে। এর পরই আগামী ১৫ বছরের জন্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। বিশ্বব্যাপী এ পরিকল্পনার সঙ্গে দেশেও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণ নয় বৈষম্য দূরীকরণকেও প্রাধান্য দিতে হবে। সব ধরনের উন্নয়নকে সমন্বয় করেই দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, এ সরকার দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রচেষ্টার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে কমে ২৩ ভাগে নেমে এসেছে। দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছে। পাশাপাশি দেশে চরম দারিদ্র্য নির্মূলেও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী ’১৮ সাল নাগাদ দেশ থেকে চরম দারিদ্র্য দূর হবে। এর ফলে এই সময়ের মধ্যে চর ও হাওর এলাকাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। তিনি বলেন, সরকার দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। কোন উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তা ছাড়াই শুধু নিজস্ব রাজস্ব আয় থেকেই এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এজন্য সরকার বিভিন্ন এলাকার জনগণের দারিদ্র্য অবস্থা বিবেচনা করেই দারিদ্র্য ম্যাপ তৈরি করে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ম্যাপে দেশে বিশেষ দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা বা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেই এ কর্মসূচী নেয়া হয়ে থাকে। ম্যাপে চর এলাকার দারিদ্র্যকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চর এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও সরকারের কর্মকা- চলমান রয়েছে। আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে। গত বাজেটে চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এবারও তাদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কারণ, পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার কথা সংবিধানেই বলা হয়েছে। এর পরও চর মানুষের জন্য বিশেষ কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে ভাবা দরকার। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণের পরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধির সুফলও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা চাই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা, যা থেকে কোন বিশেষ শ্রেণী বা অঞ্চল যেন বাদ না পড়ে। সকলকে সমন্বিত ও যৌথভাবে বিশেষ প্রয়োজন ও সমস্যার প্রেক্ষিতে চরাঞ্চলবাসীর সমস্যা নির্দিষ্ট করে সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, সকল অঞ্চলে সম-উন্নয়ন সৃষ্টির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তারপরও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর নিরসনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং এর থেকে অর্জিত সুফল চরাঞ্চলবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এসব সমস্যার সমাধানকে টেকসই রূপদান করার জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। চরাঞ্চলবাসীর উন্নয়নকে টেকসই রূƒপদানের জন্য সকল সংসদ সদস্যকে একযোগে কাজ করতে হবে। সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনায় চর অঞ্চলের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনকে অন্তর্ভুক্ত করে চরাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম জাতীয় চর সম্মেলন জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন এ্যাফেয়ার্স এ্যান্ড ট্রেডসের কাউন্সিলর প্রিয়া পাওয়েল, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে মুসা, চরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগাষ্ঠীর প্রতিনিধি মাহিন্দ্রনাথ রায়, প্রথম জাতীয় চর সম্মেলনের সহসভাপতি শিশির শীল প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দেশে কয়েক বছর যাবত ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এটা নিচে নেমে যাওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ধনী-গরিবের বৈষম্য এখনও ব্যাপকহারে রয়ে গেছে; যার রেসিও এখনও .৪৭ ভাগ। কিন্ত আশার কথা হলো, সরকারের কয়েক বছরে অব্যাহত চেষ্টার কারণে ধনী -গরিবের বৈষম্য আর বাড়ছে না।
×