ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে র‌্যাবের হাতে আটক ভুয়া ডাক্তারের জেল-জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ জুন ২০১৫

রাজধানীতে র‌্যাবের হাতে আটক ভুয়া ডাক্তারের জেল-জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একের পর এক ভুয়া চিকিৎসক ধরা পড়ছে। বৃহস্পতিবারও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে মনসুরুল সাকিব ওরফে আমানুল্লাহ (২৮) নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। রাজধানীর ভাটারা কুড়াতলী বাজারের রাসেল মেডিসিন কর্ণারে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তাকে ৬ মাসের কারাদ- ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই ভুয়া চিকিৎসক তার ডাক্তারি প্যাড ও ভিজিটিং কার্ড এবং সাইনবোর্ডে বিভিন্ন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীর নামও ব্যবহার করে আসছিলেন। এই চিকিৎসকের মতো আরও অনেকে ভুয়া ডিগ্রী লাগিয়ে রমরমা চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। র‌্যাব জানায়, প্রতি মাসেই রাজধানীতে একাধিক ভুয়া চিকিৎসক ধরা পড়ায় চিকিৎসা সেক্টরে রোগী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ সব প্রতারক চক্র দমনে র‌্যাবের অভিযান চালিয়ে অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-২ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহায়তায় ভাটারা থানার খিলক্ষেত কুড়াতলী বাজারের রাসেল মেডিসিন কর্ণারে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে চিকিৎসক পরিচয়দানকারী মনসুরুল সাকিব আমান উল্লাহকে (২৮) আটক করা হয়। আটককৃত মনসুরুল সাকিব আমান উল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রায় ৬ মাস ধরে তিনি এ ফার্মেসিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন। তিনি রোগীদের ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে থাকেন। মনসুরুল সাকিব আমান উল্লাহ নাম পরিবর্তন করে ডাঃ শাহাদাত হোসেন আমান উল্লাহ গ্রহণ করেন। তিনি এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন) পার্ট-২, সিসিডি (বারডেম), ডিএমইউ (ঢাকা) কনসালটেন্ট সনোলজিস্ট আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ফার্মেসিতে চিকিৎসা প্রদান করে আসছিলেন। মনসুরুল সাকিব আমান উল্লাহ-এর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। পরে তাকে ছয় মাসের কারাদ- ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদ- প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট, ২০১০ অনুযায়ী কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোন ব্যক্তি এলোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারেন না এবং ন্যূনতম এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রী ছাড়া নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারেন না। বিএমডিসির নতুন নির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নতুন আইনে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। অভিযুক্তদের ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৩ বছর জেল অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। বিএমডিসির আইন অমান্য করে ‘ডাক্তার’ ও ‘বিভিন্ন ডিগ্রীর নাম ব্যবহারকারী, ভুল ও ভুয়া চিকিৎসা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে এই সাজা প্রয়োগযোগ্য হবে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতাও পাচ্ছে বিএমডিসি । স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি, বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদী-ই-মাহবুব। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্বল মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়ী। কেউ কারও দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেন না। দেশে ভুয়া ডিগ্রীর অভাব নেই, টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে। এতে অদক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ শারফুদ্দিন আহমদও শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিএমডিসিকে কার্যকর করে তোলার পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সক্রিয় হতে হবে। দুর্বল মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরই দায়ী। ভুয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর ভুল চিকিৎসা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের আরও সাবধান হতে হবে।
×