ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থমন্ত্রী কাজটা ঠিক করলেন না- ভাব বিনিময়ে বাধা!

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ জুন ২০১৫

অর্থমন্ত্রী কাজটা ঠিক করলেন না- ভাব বিনিময়ে বাধা!

সমুদ্র হক ॥ বাজেটে সেল ফোনে (মোবাইল ফোন) কথা বলার খরচ বাড়িয়ে দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। একই সঙ্গে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আরও উন্নত ও দ্রুততর সেবার আওতায় আনার পদক্ষেপকে সকলেই স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আলাপকালে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া গিয়েছে তা হলো- এ্যাকসেস টু ইনফরমেশনে (এ টু আই) সকল বয়সীদের আগ্রহ খুবই বেশি। একটা সময় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কথাটি নিয়ে কটাক্ষ করা হতো। বর্তমানে কটাক্ষ তো দূরে থাক কত দ্রুত ইন্টারনেট সেবায় বিশ্বের তাবত কাজকে হাতের মুঠোয় আনা যায় এ নিয়ে ভাবে মানুষ। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে স্মার্ট ফোন ল্যাপটপ ও ট্যাবের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তবে মোবাইল ফোনে কথা বলার মাশুল বাড়াতে বয়স্ক ও তরুণদের একটা অংশ অনেকটা খুশি হয়েছে। এর মধ্যবর্তী পর্যায়ে যারা আছে তারা রাগে ফুসে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক মেধাবী শিক্ষার্থী বললেন, সম্ভবত বাংলাদেশের মানুষ সেল ফোনে এত বেশি অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলে যে অবচেতনে অর্থ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো করছেনই অবহেলায় কর্ম সময় নষ্ট করছেন। অযথা কথা বলার সময় ক্ষয় না করে মানুষ সুষ্ঠু চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে নতুন কিছু করতে পারেন। লন্ডন প্রবাসী এস এম কামাল ও সুপ্রিয় রায় বললেন, উন্নত দেশে সেল ফোন সহযোগী ফোন হিসেবে কাজ করে। অপ্রয়োজনে কেউ এই ফোন ব্যবহার করে না। কাজ সেরে মানুষ যখন ঘরে ফেরে অথবা অবসরে থাকে তখন ফিক্সড ফোনে (ল্যান্ড ফোন) বেশি কথা বলে। মোবাইল ফোনের কালচার অতি জরুরী বিষয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পকেটের এই ফোন ভাইব্রেশনে দেয়া থাকে। যাতে রিং টোন কারও বিরক্তির উদ্রেক না করে। উন্নত দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সীমিত করা আছে। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে চার ভাগের তিন ভাগের (১২ কোটিরও বেশি) হাতেই মোবাইল ফোন। একাধিক অপারেটরের ফোন ব্যবহারকারীর হারও অনেক বেশি। প্রবীণ ব্যক্তি জহুরুল ইসলাম বললেন, এমনিতেই আমাদের একটা অশোভন পরিচয় আছে, কাজের চেয়ে কথা বলি বেশি। মোবাইল ফোনে এই কথাগুলো এত বেশি বলা হয় যে কথা ও শ্রুতি শব্দের দূষণে মেধা কতটা অপচয় হচ্ছে তা ভাবা হয় না। এত বেশি কথা বলার চেয়ে যদি স্মার্ট ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ সেবায় শিক্ষণীয় কিছু পড়া বা দেখা যায় তা অনেক বেশি কাজে দেবে। অবশ্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই কাজ করে মেধার বিকাশ ঘটাচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীকে ওয়াইফাই জোনে বসে ট্যাবে পড়াশুনা করতে ও নোট করতে দেখা যায়। মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়ে বগুড়ার কয়েক গৃহকত্রী বেশ রেগে বললেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে প্রাণ খুলে অনেকক্ষণ কথা বলার জায়গাটিতে ট্যাক্স বাড়াল সরকার। এই কথা শুনে ক’জন গৃহকর্তার সাফ মন্তব্য- মোবাইল ফোনে সারাদিন প্রলাপ বকার লাগামটা একটু টেনে ধরা গেল (বোধহয়)। এই ভদ্রলোক বোধহয় শব্দটি বলার পর একটা দীর্ঘশ্বাসও নিয়ে বললেন কথার কী আর শেষ আছে ভাই খরচটাও বোধহয় বাড়ল। উঠতি বয়সের কয়েক তরুণ যাদের বেশিরভাগই প্রণয়াসক্ত তাদের কথা- অর্থমন্ত্রী এই কাজটা ঠিক করলেন না। আমাদের মধুময় কথা বলাতেও বাধা! চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ্যান্টনি আলবার্ট বললেন, হালে দুই ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ১. চোখ ২ কান। মোবাইল ফোনের অতিমাত্রার রেডিয়েশন কানের শ্রুতি ওয়েভের ক্ষতি করে। ক্ষতিকর এই ওয়েভ চোখের রেটিনাতেও গিয়ে পড়ে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন দীর্ঘ সময় কথা বলার পর কান মস্তিষ্ক ও চোখে এক সেকেন্ডের কয়েক ভাগের মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া পড়ে। মুখ খুলে অযথা একটা হাম নিতে হয়। কানের পর্দায় ক্ষীণ একটা শব্দ হয়। রাতে ঘুমানোর আগে দীর্ঘ সময় কথা বললে মস্তিষ্কের টিস্যু দুর্বল হয়ে দ্রুত ঘুম আসে। যারা ট্যাবে, ল্যাপটপে ডেক্সটপে কাজ করে তাদের চোখের প্লাস মাইনাস দুই পাওয়ারে প্রভাব ফেলে। এই বিষয়গুলো যারা জানেন তারা মোবাইল ফোনে কথা বলার দর বেড়ে যাওয়াতেই অনেকটা খুশি হয়েছেন। একই সঙ্গে সংশয়ও প্রকাশ করা হয়েছে- কথা বলা কি কমবে? যদি না কমে তাহলে তো খরচটা বাড়ল। কি জানি এত্ত কথা এর কী শেষ আছে...!
×