ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা দূর হবে ॥ গওহর রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৬ জুন ২০১৫

মোদির সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা দূর হবে ॥ গওহর রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। সরকার অব্যাহতভাবে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করায় শীঘ্রই তিস্তা চুক্তি সম্ভব হবে এমনটা আশাপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি আয়োজিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঃ আঞ্চলিক উন্নতি ও সৌহার্দ্য’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে ভারতকে তিস্তা চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছি। আগামী দুইদিনে বিষয়টি আবারও তুলে ধরা হবে। আশা করছি ভারত এর মধ্য দিয়ে তিস্তা জটিলতার অবসানে আমাদের আশান্বিত করবে। নরেন্দ্র মোদির সফরকে সামনে রেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি এই সেমিনারের আয়োজন করে। আজ মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসছেন তিনি। দুই দেশের দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা ‘সীমান্ত বিল’ পাস করে মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে টুইট এ মোদি লিখেছেন ‘আমি দৃঢ় আশাবাদী যে আমার বাংলাদেশ সফর আমাদের বন্ধন আরও মজবুত করবে এবং তাতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে।’ চার বছর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বেঁকে বসায় ওই সময় চুক্তি সম্ভব হয়নি। তবে এর মধ্যে মমতার ঢাকা সফরে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার এবং মোদির সফরসঙ্গী হয়ে আবার ঢাকা আসায় তিস্তা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ড. গওহর রিজভী আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সবসময়ই অভিযোগ ব্যবসায় বৈষম্যের বিষয়ে। সবাই বলেন, আমরা ভারত থেকে এতকিছু আমদানি করি কিন্তু আমাদের রফতানি আয় খুব বেশি না। ব্যবসা-বাণিজ্য এমনই হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে আমরাও অনেক রফতানি করি কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা খুব বেশি আমদানি করি না। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে কিভাবে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি, অর্থনৈতিকভাবে যেন নিজেদের স্বচ্ছল করতে পারি সেই চেষ্টা করা হবে। ভারতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হয় না এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বলেন, এই সমস্যাটি আসলে দুই দেশের সরকারের মধ্যকার সমস্যা নয়। এটি ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে সমাধান করা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যেন ওদের দেশে আমাদের চ্যানেল সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব তার ফলে আমরা ৪১ বছর পর একটি চুক্তির সফল বাস্তবায়ন দেখলাম। আমাদের দেশে অনেক সরকার আসলেন- গেলেন কেউই সমুদ্রসীমা নিয়ে কথা বললেন না। এ সরকার সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন তিনি খালি হাতে আসতে চান না। আমরা মনে করি, তাঁর দুই হাত এখনও ভরেনি। তার এবারের সফরে তিস্তা চুক্তি, অবাধ ট্রেন চলাচল চুক্তি ও ভিসা সহজীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরের একটি সম্ভাবনা দেখা দেবে বলে আমরা আশা করি। মোদির আগমনকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ইতিহাস গড়া সম্ভব বলে জানান তিনি। এই সফরে নতুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। সেমিনারে মূল আলোচকের বক্তৃতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধিতে বৈষম্য বাড়েনি, এর মাধ্যমে দারিদ্র্য কমেছে। তিনি দক্ষ জনশক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে একটি নতুন অর্থনৈতিক উন্নত কাঠামো দেখা যাবে বলে জানান। আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে। এই সময়ে আমরা আমাদের প্রতিবেশী ভারতকে পাশে চাই। আমাদের এবং তাদের স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করা যাবে এমন একটি রফতানি বাজার খুলতে পারলে উভয় দেশেরই বাণিজ্যের প্রসার ঘটত। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো যেন তাদের দেশের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারে তার সুযোগ করে দিতে তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে রেলওয়ে ও বিদ্যুত খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ অঙ্গীকারের সফল বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দীন মোল্লার সভাপতিত্বে সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে সাবেক দূত ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ। মূল প্রবন্ধে বলা হয় ভারতে আমরা দুই বিলিয়ন ডলারের মতো রফতানি করতে পারি। শুধু ভারতকে না বলে আমরা যদি আমাদের পণ্যের মান ভাল করতে পারি তবে আমরা আরও বেশি রফতানি করতে পারব। দারিদ্র্যসীমা দূরীকরণে এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রবন্ধে বলা হয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে আঞ্চলিক সম্পর্ক বৃদ্ধি জরুরী।
×