ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আমাদের সরকার অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করে’

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৫ জুন ২০১৫

‘আমাদের সরকার অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করে’

রুমেল খান ॥ সবচেয়ে নির্দোষ বিনোদন কি? মানুষের দেহ-মনকে চাঙ্গা রাখে কোনটি? কিসের মাধ্যমে একটি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা যায় কিংবা একটি প্রায় অপরিচিত দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তোলা যায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কিন্তু একটাই। সেটি হচ্ছে খেলাধুলা। অনেকেই বলেন, যারা খেলাধুলা পছন্দ করে না তারা সম্পূর্ণ মানুষই নয়! এই খেলাধুলা যদি কেবল পুরুষরাই করে, তাহলে এটা কি যৌক্তিক হবে? শুধু পুরুষরাই খেলবে, আর মহিলারা ঘরে বসে থাকবে, কিংবা খেলাধুলা মেয়েদের জন্য নয়- এমন সব উদ্ভট ধ্যান-ধারণা পোষণ করার দিন আজ আর নেই। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথা। মেয়েদের খেলাধুলারও দিন দিন প্রসার ঘটছে। যেমন হ্যান্ডবল। এই খেলাটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা। বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে খেলাটির জনপ্রিয়তা। গত ৩০ মে থেকে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে মহিলা হ্যান্ডবল লীগ। এই লীগে দেশের বিভিন্ন সংস্থা/ক্লাব থেকে ১০ হ্যান্ডবল দল দুটি গ্রুপে প্রথম রাউন্ডে খেলছে প্রথম রাউন্ড শেষে দুই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো সুপার ফোর-এ অংশ নেবে। এই লীগে বিভিন্ন দলের হয়ে একাধিক ভারতীয় খেলোয়াড় খেলছেন। শিরোপা প্রত্যাশী মোহামেডানও এর ব্যতিক্রম নয়। তাদের দলের আছে তিন ভারতীয় হ্যান্ডবলার। বৃহস্পতিবার তারা ঊষা ক্রীড়া চক্রকে ৩২-১৮ গোলে হারায়। ম্যাচে দুই ভারতীয় হ্যান্ডবলার দুর্দান্ত খেলেন। তবে একজন খেলেননি। বসে ছিলেন সাইডবেঞ্চে। ম্যাচ শেষে কথা হয় তার সঙ্গে। জানা গেল, অষ্টাদশী ও সুর্দশনা এই তরুণী হ্যান্ডবলারের নাম মানজিত রানা। জন্ম হরিয়ানা প্রদেশে। পড়ালেখা করে বিএ প্রথম বর্ষে, ওই এলাকারই এসপিএমএম কলেজে। কেন ঊষার বিরুদ্ধে আজ খেলেননি তিনি? এ প্রশ্নে উত্তর দেন মোহামেডানের অধিনায়ক ডালিয়া আক্তার, ‘আসলে ও অনুশীলন করতে গিয়ে কিছুটা চোট পায়। তাই কোচ ওকে এ ম্যাচে বিশ্রামে রেখেছেন। তবে আশা করি দুই-তিন দিনের মধ্যেই খেলার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পাবে সে।’ কৃষক বাবা ঈশ্বর সিংহ এবং গৃহিণী সরোজ দেবীর তিন সন্তান। এদের মধ্যে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেজো সন্তান মানজিতকে শৈশব থেকেই টান তো হ্যান্ডবল, ‘অনেক উত্তেজনাপূর্ণ এবং গতিশীল খেলা বলে হ্যান্ডবল খেলতেই বেশি ভাল লাগত। মা-বাবাও আমাকে খেলতে কোন রকম বাধা দেননি। বরং সবসময়ই দিয়েছেন উৎসাহ।’ এবারই প্রথম বাংলাদেশে খেলতে এসেছেন মানজিত। সঙ্গে এসেছেন তার হরিয়ানা হ্যান্ডবল দলের কোচ যোগবিন্দর সিংও। এখানকার আবহাওয়া কেমন? ‘অনেক ভাল। ভারতে তো প্রচ- গরম। সে তুলনায় এখানে বেশ শীতল। তাই কোন সমস্যা হচ্ছে না।’ ভারত জাতীয় হ্যান্ডবল দলের অধিনায়ক এবং হরিয়ানা নিবাসী রিম্পিকে আদর্শ হ্যান্ডবলার মানা মানজিতের ভাষ্য। হ্যান্ডবল নিয়ে ভবিষ্যত স্বপ্ন? ‘জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি।’ ইতোমধ্যেই জাতীয় অনুর্ধ ১৯ দলে খেলেছেন। ২০০৯ সাল থেকে হ্যান্ডবর ক্যারিয়ার শুরু করা মানজিতের স্মরণীয় স্মৃতি হচ্ছে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে হরিয়ানা দলের হয়ে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা। মানজিত আরও জানান, ভারতে হ্যান্ডবল খেলাকে স্থানীয় সরকার এবং রাষ্ট্র উভয় ক্ষেত্রেই ভাল পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, ‘সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের বিজয়ী দলের প্রত্যেককে ৫ লাখ, রানার্সআপ দলের প্রত্যেককে ৩ লাখ, জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দলের প্রত্যেককে ৩ লাখ এবং রানার্সআপ দলের প্রত্যেককে ২ লাখ রুপী করে পুরস্কার দেয় আমাদের হরিয়ানা সরকার। ফলে এ খেলায় মেয়েরা অনেক উৎসাহ নিয়ে খেলতে আসে। ফলে আমাদের কোন খেলোয়াড় সংকট হয় না এবং প্রচুর উন্নতমানের খেলোয়াড় তৈরি হয়।’ এখন দেখার বিষয়, সুস্থ হয়ে মানজিত নিজ দল মোহামেডানকে জেতাতে কেমন ভূমিকা রাখতে পারেন।
×