ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ভাবমূর্তির দায় ও গায়ক আড্ডার বর্ণিল সন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৫ জুন ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ভাবমূর্তির দায় ও গায়ক আড্ডার বর্ণিল সন্ধ্যা

ক্রিকেট বা জরুরী কিছু ছাড়া অজি মিডিয়ায় বাংলাদেশ খুব একটা চোখে পড়ে না। মাঝে-মধ্যে দুঃসংবাদগুলো লুফে নেয়ার প্রবণতা এসব দেশের পুরনো বাতিক। আগে না বুঝলেও এখন পরিষ্কার বুঝি এরা হচ্ছে পুরনো জমিদারদের মতো। নিজের অস্তিত্ব বা ইমেজে ঘা লাগলে সেটা তো মানবেই না, এককালের প্রজা বা শোষিতদের কেউ মাথা চাড়া দিলেই তাকে সাইজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কতই তো দেখলাম ক্রিকেটের কোন কোন যুদ্ধে এদের অগণতান্ত্রিক আচরণে আমরা ব্যথিত হলেও বলতে পারি না। শ্রীলঙ্কার মুরলিধরন, ভারতের হরভজন বা পাকিস্তানের আফ্রিদি কাউকে এরা ছাড় দেয়নি। আমাদেরও না। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি মাথায় হাত বুলানো আর বশে রাখতে পারলেই ভাল, না হলে উল্টোটি। এবার তারা দেখি নৌ-শরণার্থীর বেলায় বড় গলায় বাংলাদেশের নাম বলে বলে ফেনা তুলছে। কী ঘটেছে বা কেন ঘটেছে তার বিবরণ দেশের মানুষের অজানা কিছু নয়। এ নিয়ে সিডনি থেকে লেখার মানে নেই। বরং আমরা বলব আমাদের দূতাবাস বা যাঁরা এ নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা নিশ্চুপ। যখন বিদেশী মিডিয়ায় আমাদের ভাবমূর্তি বা ইমেজ সঙ্কটের মুখে পড়ে তখন এদের দায় সবার থেকে বেশি। কিন্তু কোথায় তারা? অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া সামাজিক ব্যবসার নামে ইউনূসীয় তত্ত্বের ঘোর সমর্থক হবার পরও তাঁকে হাইলাইট করে না। বাংলাদেশের পণ্যে এখন এখানকার বাজার সয়লাব। কাপড়, মসলা অনেক কিছু এনে এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা মেটালেও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না, অথচ নৌশরণার্থীর ঘটনায় সরব। আমরা বলি না যে, এ ঘটনায় বাংলাদেশের বা আমাদের লোক নেই। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন আর অগ্রগতির পরও একশ্রেণীর মানুষ দেশ ছাড়তে ব্যগ্র। একটা বিষয় যা আমরা বুঝি তা কিন্তু এরা জানে না। বাংলাদেশের মানুষের হাতে এখন কাঁচা টাকা আছে বলেই তারা দালালদের তা দিয়ে এমন ঝুঁকি নিতে পারছে। এককালে টাকার যোগাড় করতে পারত না বলে এমন ঝুঁকিও ছিল কম। যে টাকা দিয়ে বা ঝুঁকি নিয়ে তারা এসব করছে তা দিয়ে দেশেই আরামে থাকা যায়। দেশের সমস্যা যতটা আর্থিক তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার। মানুষ সামাজিক সমস্যা আর গুম-খুনের জ্বালায় অস্থির। যারা করুক বা যেভাবেই হোক এ জায়গাটা আসলেই প্রশ্নবোধক। উন্নতির পূর্বশর্ত কিন্তু সামাজিক সুস্থিরতা। সেটা না থাকলে কোনকিছুই টেকসই হতে পারে না। রাজনীতি এখন এমন এক জায়গায় এসে ঠেকেছে যা এসবের তোয়াক্কাই করে না। সব দায় যেন প্রধানমন্ত্রীর একার। আগে আমরা দেখতাম রাজনীতির কাজ ছিল এসব বিষয়ে মাঠে নামা। এখন সামাজিক নেটওয়ার্কের যুগে রাজনীতির কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। যে কারণে একদল মারামারিতে ব্যস্ত আর একদল মাঠ থেকে উধাও। একশ্রেণীর মানুষ আমাদের দলকানা বা অন্ধ বলে শান্তি পেলেও আসলে এ জন্য দায়ী বিএনপি ও জামায়াতের উগ্র রাজনীতি। তারা সময় মানে না, সঠিক নিয়ম মানে না। তাদের ধারণা, চাইলেই সরকার পতন করা সময়ের ব্যাপার। সেটা যখন হয়নি অমনি নেমে পড়েছে অশান্তি আর আগুনের খেলায়। প্রতিযোগিতার অসম দ্বন্দ্বে বিএনপি আজ দিশেহারা। আওয়ামী লীগ হারিয়েছে নিশানা। তা না হলে এই সমস্যাগুলো নিয়ে পদযাত্রা হতো। নেতারা সেসব জায়গায় গিয়ে খবর নিতেন। মানুষের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেন। তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। ভরসা যোগাতেন। এসব নেই, আছে কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক বিবৃতি আর গলাবাজি। অথচ একাধিক দেশ এতে জড়িয়ে গেছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বার্মা বা মিয়ানমার তো এখন অংশীদার। সঙ্গে আছে বিশ্ব সংস্থাগুলো। নীরব না থেকে বাংলাদেশের নিজের ভূমিকা তুলে ধরার কাজটি কবে হবে? যাবতীয় অর্জন বিনষ্ট না হলেও তোপের মুখে তো পড়ছে। এটুকু বুঝতে এত দেরি হলে কি আসলেই আমরা মাথা তুলে বাঁচতে পারব? আশা করছি আওয়ামী লীগের ঝানু নেতারা এসব বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। অন্যদিকে দূতাবাসগুলোকে কিছু দায়-দায়িত্ব দিন। তারা যেন কাজ করে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। গায়ক যখন সিডনিতে সুবীর নন্দী এসেছিলেন সিডনিতে। বাংলাদেশের ধ্রুপদী শিল্পী। শিখে-পড়ে এখন আর কেউ গান গায় না। খালি নাম আর যশ। সে জায়গায় তিনি একজন কিংবদন্তি। আমাদের গানের প্রাণপাখিও বটে। তাঁর আগমনে ঘরোয়া আড্ডা মানেই বাড়তি পাওয়া। আধুনিক গানের জগতে এমন শিল্পী এখন আর একজনও নেই। সত্তর দশকের সুবর্ণ সময়ের পর ‘আমার এই দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গেয়ে চোখের নদীতে স্রোত জাগানো গায়ক। সেই কবে যৌবনে ‘দিন যায় কথা থাকে’ শুনেছিলাম। বহুদিন বহুকাল গত হওয়ার পরও সে গান জেগে আছে মনে। ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন করে’ কিংবা ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’ কখনও ভোলার মতো গান ছিল না। সবচে’ বড় কথা গানের ভুবনে যখন কোকিলের চেয়ে কাকের আনাগোনা অধিক তখন ইনি তাঁর প্রতিভা ও কণ্ঠে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আজও সে নদী প্রবহমান। দাদার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে দারুণ মজা পেলাম। হেন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে কথা হয়নি। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আর জীবনের প্রায় প্রতিটি বিষয়ে তাঁর চিন্তা ও দর্শনের স্বচ্ছতায় মুগ্ধ হয়েছি। সাচ্চা বাংলাদেশী পজেটিভ সুবীর দা আমাদের ভালবাসার দীপশিখাকে আরও একবার উস্কে দিয়ে গেলেন। উত্তরবঙ্গের নারী জাগরণ থেকে বাংলা গানের তরুণ-তরুণী, এমনকি ফলে ফরমালিন বিষয়েও তাঁর চিন্তা দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমি সত্যি জানতাম না তিনি আমাকে চেনেন বা আমার লেখা পড়েন। জনকণ্ঠের মেলব্যাগটি কোন্ পাতায় কোন্ কলামে ছাপা হয় সেটাও তাঁর জানা। অভিভূত ও বিনীত হওয়ার বিকল্প থাকে না । আড্ডা দিয়ে ফেরার পথে ভেতরে গুনগুন করছিল তাঁর সেই গানের কলি : আমি চাই না হতে কারো নয়নের জল... সময়ের জল গড়াতে গড়াতে আজ তাঁকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছে তাতে আমরা গর্বিত হতেই পারি। [email protected]
×