ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদির ঢাকা সফর

স্থল সীমান্ত ছাড়াও যোগাযোগ প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ জুন ২০১৫

স্থল সীমান্ত ছাড়াও যোগাযোগ প্রাধান্য পাবে

মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, নতুন দিল্লী থেকে ॥ ১৯৭৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি দীর্ঘ ৪১ বছর অপেক্ষার পর ২০১৫ সালে সংসদের উভয় সভায় পাস হয়ে গেছে। গত ২৮ মে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ১০০তম সংবিধান সংশোধন বিল ২০১৫ অনুমোদন করে আইনে পরিণত করেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে ১৬০টি ছিটমহলের হাত বিনিময় হবে। ১৭,১৬০ একরের ১১১টি ছিটমহলের অধিকার পাবে বাংলাদেশ এবং ৭,১১০ একরের ৫১টি ছিটমহলের অধিকার আসবে ভারতের হাতে। ২০১১ জনগণনা রিপোর্টে জানা যায়, বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের জনসংখ্যা ছিল ৩৭,৩৩৪ জন। আবার ভারতে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে বসবাস করেন ১৪,২১৫ জন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করিডরগুলোতে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই জমি হস্তান্তরের পরও এলাকা ছেড়ে যেতে প্রস্তুত নন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি বিবাদের অবসানের ফলে চুক্তিতে দুই দেশের নতুন নাগরিকদের যারা আগের দেশে যেতে চান তাদের ট্রাভেলিং কাগজপত্র দেবেন। যারা ভারতে রয়েছে, ভারত থেকে তাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তারা সকল সরকারী সুবিধা পেতে পারেন। এদের পুনর্বাসনের জন্য মোদি সরকার ৩০০০ কোটি টাকা মঞ্জুরও করেছে। ৩৬ ঘণ্টার সফরে মোদি বাংলাদেশ যাচ্ছেন ৬ জুন শনিবার। তার প্রথম বাংলাদেশ সফরে স্থায়ী সীমান্ত নিয়ে যেমন দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হবে, তেমনি দুই দেশের মধ্যে রেল, জলপথ, সড়ক যোগাযোগ, আর্থিক বিকাশ, সুরক্ষা জোরদার করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগে দুই দেশই আগ্রহী। ১৯৬৫ সালের আগে চালু থাকা এবং বর্তমানে বন্ধ থাকা রেললাইনগুলো পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টাও হবে। বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর মাধ্যমে ছোট ছোট বাণিজ্য চালানোর অনুরোধ যেমন ভারত করবে, তেমনি বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে বন্দর নির্মাণে সাহায্য করার প্রস্তাব দেবেন মোদি। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিকল চুক্তি নিয়ে হাসিনার সঙ্গে মোদির আলোচনা এবং চুক্তিতে পাকিস্তানকে না রাখা হলে ভারত স্বাক্ষর করবে বলে নিশ্চিত। ঢাকা সফরেও পূর্বোত্তর এজেন্ডা ॥ দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ যতই উন্নত হবে, ততই পূর্বোত্তর এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়ন সম্ভব হবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের উন্নয়নের সঙ্গে পূর্বোত্তর খুঁজে পাবে একটি নতুন বাজার। এ সফরে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তিও হবে। বাংলার সঙ্গে ভারতের ৪০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, অধিকাংশই উন্মুক্ত। মোদি এবং হাসিনা তাই প্রয়াস করবেন এ বিষয়ে উদ্ভূত সুরক্ষা সঙ্কটের অবসান ঘটাতে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। ইতোমধ্যেই হাসিনা সরকার বাংলাদেশে আস্তানা গেড়ে বসা পূর্বোত্তর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। উলফা ছাড়াও কয়েকটি গোষ্ঠীকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। পরেশ বড়ুয়াসহ অনেকেই বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে মিয়ানমার এবং চীনে। পাকিস্তানী গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কার্যকলাপও বাংলাদেশে অনেক কমে এসেছে হাসিনার শাসনকালে। মোদি তাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মধুর এবং শক্তিশালী করতে চান। যোগাযোগ ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে প্রতি মানুষের মধ্যে যোগাযোগকে প্রাধান্য দিতে চলেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এজন্য মোদি এবং হাসিনা ঢাকার মধ্য দিয়ে কলকাতা থেকে আগরতলা পর্যন্ত বাস সার্ভিস এবং ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালু করবেন সবুজ ঝা-া দেখিয়ে। মোদির উক্তিতে ত্রিপুরা, অসম, মেঘালয়, মিজোরাম ক্ষুব্ধ ॥ প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর চূড়ান্ত হতেই পূর্বোত্তরের সংশ্লিষ্ট চার মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরার মাণিক সরকার, অসমের তরুণ গগৈ, মেঘালয়ের মুকুল সাংমা ও মিজোরামের লানথানহাওলা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। নিয়মানুযায়ী কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকেও মোদি ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শুরুতে মমতা কিছুটা নীরব থাকায় মোদি গম্ভীরভাবে জানান, মমতা দিদিকে যেতেই হবে, নয়ত মুখ্যমন্ত্রীদের সফরের কার্যসূচী বাতিল করে দিতে হবে। মৌচাকে ঢিল মারার মতই মোদির এই কথা প্রচ- ক্ষুব্ধ করেছে মানিক সরকার, তরুণ গগৈইকে। তারা দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা যেতে আপত্তি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। মাণিক, তরুণের পথ অবলম্বন করে মুকুল এবং লানথানহাওলাও ঢাকা যাত্রা স্থগিত রেখেছেন। দিল্লীতে কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে বলা হয়েছে, মমতা না গেলে যদি মুখ্যমন্ত্রীদের সফরের কর্মসূচী বাতিল করার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের তিনি অবমাননা করেছেন। সিপিএম নেতাদেরও একই মন্তব্য। চার মুখ্যমন্ত্রী নারাজ হওয়ায় তাদের রাজি করানোর জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ওপর। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা যাবেন কিনা, এখনো সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
×