ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি স্বাস্থ্য সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৪ জুন ২০১৫

বাড়তি স্বাস্থ্য সতর্কতা

স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা গরমে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। গরমে দেখা দেয় শারীরিক নানা সমস্যা। এর মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপই বেশি। গরমে মানুষের তৃষ্ণা বেশি পায়। তৃষ্ণার্ত অনেকে পানি পানের সময় বিশুদ্ধতা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। এতে জীবাণুযুক্ত পানি পানের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর মূলত পানির মাধ্যমেই কলেরা জীবাণু ও খোঁটা ভাইরাস ছড়ায় বলে এ সময় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। আরেকটি ব্যাপার আছে। গরমের সময় খাবার অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে খুব সহজেই জীবাণুযুক্ত হয়। ফলে মানুষের নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। সম্প্রতি আইসিডিডিআরবি’র বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত যে খবর বেরিয়েছে তা উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে মোট ডায়রিয়ায় আক্রান্তের মধ্যে ২৫ শতাংশই কলেরার জীবাণুবাহী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এক সময় কলেরায় দেশের গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত; এমনই ভয়ানক ছিল তার সংক্রমণ। এখন কলেরা প্রতিরোধ করা যায়, এর প্রতিষেধকও রয়েছে। তবু এ নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যথাযথ চিকিৎসা না হলে কলেরা রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশের মৃত্যু হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কলেরা নির্মূলে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। সরকারীভাবে বলা হয় যে, কলেরার জীবাণু পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবছর বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী পাঁচ বছর আগে কলেরা রোগ মোকাবেলায় বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছিলেন। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণায় কিছু ভাইরাস আপাতনিরীহ ব্যাকটেরিয়াকে কিভাবে প্রাণঘাতী কলেরার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ায় পরিণত করতে পারে তা জানা গেছে। এ তো গেল গবেষণার দিক। ব্যবহারিক দিক দিয়ে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের মোকাবেলা করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন প্রথমত, বিশেষ ঋতুতে বাড়তি স্বাস্থ্য সচেতনতা। দ্বিতীয়ত, পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা। এখনও দেশে প্রতিদিনের ব্যবহারোপযোগী পানির জন্য নদীর ওপরই অনেকখানি নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশের মতো জলাভূমি ভরপুর, বহুল বৃষ্টিপাতের দেশটিতে প্রাকৃতিকভাবে সুপেয় পানির সঙ্কট থাকার কথা ছিল না। সমস্যা হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে। সেচ ব্যবস্থায় পাম্প প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের কারণে তলদেশের পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েও সুপেয় পানি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর রয়েছে নদী দূষণ। দীর্ঘদিন যাবতই রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণের কথা বলা হচ্ছে। কালে কালে সেই দূষণ এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নদীটির পানি সংশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে থাকে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ ও ময়লা। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানি এতটাই দূষিত যে তা শোধন করেও পানযোগ্য করা কঠিন। তাই বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে পানি শোধনের ওপর জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুদের হাত ধোয়ার ব্যাপ্তি বাড়ানোসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
×