ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমরাস্ত্র খাতে ব্যয় কমান

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৪ জুন ২০১৫

সমরাস্ত্র খাতে ব্যয় কমান

বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি দেশেই তাদের বাজেটের একটি বড় অংশ থাকে প্রতিরক্ষা খাতে। কোন কোন দেশ এ খাতে লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ও করছে। বিশ্বে বিগত দশ বছরে সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। প্রতিবছর এই ব্যয় বেড়েই চলছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য। অথচ এই সামরিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব। সমরসজ্জার পেছনে যে ব্যয় হয় তার একটি অংশ যদি দারিদ্র্য দূর করার জন্য ব্যয় হয়; বিশ্বে আর দারিদ্র্য থাকত না বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকায় ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার’ সম্মেলনে তিনি অস্ত্র হ্রাস করে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানো ও দারিদ্র্য কমানোর কথা বলেছেন। বিশ্বব্যাপী অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যায়। বর্তমানে ৮টি দেশের কাছে প্রায় ৮৪ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সামরিক ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্ত্র বিক্রিবাট্টাও বেড়েছে। বিশ্বের প্রথম ১০০টি বড় অস্ত্র কোম্পানির ৪৪টিই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। এরা মোট অস্ত্রের ৬১ ভাগ সরবরাহ করে। ইউরোপের ৩২টি অস্ত্র কোম্পানি বিক্রি করে ৩১ ভাগ। সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশ চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। বিশ্বের ২৩টি দেশের মধ্যে গত ১০ বছরে এই দেশগুলোর সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পুরো বিশ্বে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে বিশ্বে সামরিক ব্যয় ছিল ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার; যা ২০১২ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ২০১২ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর আট দিনের ব্যয় ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। এই বছর পুরো বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় ছিল বিশ্বের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মাথাপিছু ব্যয় হয়েছে ২৪৯ ডলার। উন্নয়নশীল দেশেরও সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে কিংবা নিরাপত্তার জন্য দেশগুলো অস্ত্র কেনে। এছাড়া আঞ্চলিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও কেনা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরাকে সামরিক বাজেট বেশি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক দশকে এশিয়ার শক্তিগুলো ব্যাপকভাবে তাদের সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও সমরাস্ত্র উৎপাদন সীমিত করা এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাকে জোরদার করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করা দরকার। আর এটা করতে পারে জাতিসংঘ। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূর করতে প্রতিবছর ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অস্ত্রের পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় তার সামান্য অংশই ক্ষুধা নিবারণে ব্যয় করা যায়। সেজন্য সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাস প্রয়োজন। বিশ্বে যে পরিমাণের খাদ্য উৎপাদন হয়, তা সব মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা জটিল। দারিদ্র্য, ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বণ্টন ব্যবস্থা, সংঘাত, অধিক জনসংখ্যা, খাদ্য ও কৃষি নীতিমালা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয় খাদ্য প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করে। সভ্যতা এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হলেও আজও বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে বর্তমানের সাত বিলিয়ন থেকে ৯ বিলিয়নের বেশি। এই বর্ধিত জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা নিবারণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তথা জাতিসংঘকেই নিতে হবে। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা নিবারণের জন্য জাতিসংঘের উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘খাদ্য নিরাপত্তা।’ বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগেন। প্রতি নয়জনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন বিশ্বের একটি মানুষও যেন অনাহারে না থাকেন, অপুষ্টিতে না ভোগেন। প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা যেন পূরণ হয়। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, অস্ত্র ব্যয় কমিয়ে মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তা বাড়িয়ে দারিদ্র্য হ্রাস করা হোক। বিশ্বের সব মানুষের প্রতি সব মানুষের নৈতিক দায়িত্ব হোক সকল মতভেদ ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
×