ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এয়ারবাস থেকে সোনা উদ্ধার, জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ এমডি কাইলের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১ জুন ২০১৫

এয়ারবাস থেকে সোনা উদ্ধার, জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ এমডি কাইলের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমানের এয়ারবাস থেকে সোনা উদ্ধারের ঘটনায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এমডি কাইল হেউড। শনিবার রাতে শাহজালালের হ্যাঙ্গারে রাখা বিমানের একটি এয়ারবাস থেকে দুই কেজি ওজনের ২৪টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে ওই এয়ারবাসটিকেও জব্দ করা হয়। এ নিয়ে বিমানের মোট চারটি উড়োজাহাজ জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা। একের পর এক উড়োজাহাজ জব্দ করায় বিমান কর্তৃপক্ষও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন।এদিকে শনিবার রাতে ওই উড়োজাহাজে সোনা উদ্ধার অভিযানের সময় বিমানের কোন উর্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। এতে সংশয় প্রকাশ করেন শুল্ক গোয়েন্দারাও। এত বড় বড় চালান ধরার সময় বিমানবন্দরে কর্তব্যরত সব বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও বিমানের কোন উর্ধতন কর্মকর্তা থাকেন না। বার বার তাদের অবহিত করলেও বিমানের কোন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে হাজির হন না। শনিবার রাতে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মমিনুল ইসলামকে ফোন করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মমিনুল ইসলাম এ ঘটনা কাউকে না জানিয়ে নীরব থাকেন। পরে বিমানবন্দরে কর্মরত এক কর্মাচারীকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ডক্টর মইনুল খান এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, একটা উড়োজাহাজ চোরাচালানের দায়ে জব্দ করা হলেও ঘটনাস্থলে বিমানের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা না থাকাটা রহস্যজনক। নিরাপত্তা জিএম মমিনুল ইসলাম ও এমডিকে জানানো হয় কিন্তু কেউ সেখানে যাননি। জানা যায়, বর্তমান বিদেশী এমডি কাইল হেউড শনিবার রাতে দেশে ছিলেন না। কিন্তু মমিনুল ইসলাম ঘরেই ছিলেন। রবিবার সকালে এমডি কাইল হেউড দুবাই থেকে ফিরেই অফিসে গিয়ে রাতের এ কাহিনী শুনে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় জিএম মমিনুল ইসলামকে ডেকে রাতে বিমানবন্দরে না যাওয়ার কৈফিয়ত তলব করেন। তখন মমিন কোন সদুত্তর দিতে না পারায় এমডি তাকে তিরস্কার করেন। এদিকে সোনা চোরাচালান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বিমানের নিরাপত্তা বিভাগের সহায়তা ছাড়া কিছুতেই উড়োজাহাজ থেকে সোনা খালাস করা সম্ভব নয়। অতীতের সব মামলার তদন্তেই এ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। বিমানের ভাষ্য ॥ এ ঘটনায় বিমানের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাতে বিজি ০৫২-এ বাহিত ২৪ সোনার বার উদ্ধার ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বিমান ব্যবস্থাপনার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়টি ‘অতিরঞ্জিত’ভাবে পরিবেশিত হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে দুবাই-সিলেট-ঢাকা সেক্টরে নির্ধারিত ফ্লাইটটি (বিজি-০৫২/এয়ারবাস ৩১০) গন্তব্যস্থল সিলেটে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অবতরণ না করে সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকায় অবতরণ করে। এর প্রায় ২ ঘণ্টা পর আবার এটি সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায় এবং ১০:৫৩-এ একই কারণে ঢাকায় ফিরে আসে। বেলা দেড়টায় এটি আবার সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে জাহাজটি সিলেট থেকে ঢাকা আসে। এ দিকে পূর্বাহ্ণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দরে কর্মরত শুক্ল গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাগণ সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বর্ণিত জাহাজে তল্লাশি চালিয়ে প্যাসেঞ্জার সিট এ ১৮/এইচ-এর নিচে ‘লাইফ জ্যাকেট’ রাখার জায়গায় লুকায়িত ২৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেন। উদ্ধারকৃত ২৪টি বারের ওজন ২ কেজি ৪০ গ্রাম। শুক্ল গোয়েন্দা কর্তপক্ষ রাত ৮টা ৫ মিনিটে তল্লাশি শেষ করে। তারপর প্রচলিত নিয়মে জাহাজটি পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ৯:৩৯ মিনিটে ফ্লাইটটি যথারীতি ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে চলাচলের জন্য যাত্রা শুরু করে। চোরাচালানের মালামাল বহনের জন্য মালামালের সঙ্গে বহনকারী জাহাজও আটক করা হয় প্রচলিত নিয়ম রক্ষার জন্যই। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আটককৃত উড়োজাহাজ শেড্যুল অনুযায়ী চলাচলের জন্য ‘রিলিজ’ করা হয়। বিজি ০৫২-এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উল্লেখ্য, বর্ণিত জাহাজটি ১৯৯৬ সালে ৭৪ মিলিয়ন (৪৪৪ কোটি টাকা) ডলার মূল্যে ক্রয় করা হয়। শনিবারের ঘটনায় জাহাজটিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ‘জরিমানা’ করা হয়েছে মর্মে কয়েকটি গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন।
×