ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা বোর্ডে খাতা নিরীক্ষণ ॥ দায়িত্বহীনতা দূর হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩১ মে ২০১৫

শিক্ষা বোর্ডে খাতা নিরীক্ষণ ॥ দায়িত্বহীনতা দূর হচ্ছে না

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডগুলোর খাতা পরীক্ষণে জটিলতা দূর হচ্ছে না কিছুতেই। প্রতি বছরই হয়রানির শিকার হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। কারণ শিক্ষা বোর্ডগুলো ফলাফল প্রকাশের পর খাতা পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ দেয়। এতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রতি সহযোগিতার হাত মনে করলেও পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করছেন এটা চরম হয়রানি আর্থিক ক্ষতির হিসাব-নিকাশ। অভিযোগ রয়েছে, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির মেধাবী শিক্ষার্থীরা খাতা পর্যবেক্ষদের বা পরীক্ষকদের দায়িত্বহীনতার রোষানলে পড়ে মেধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। পরে আবার বোর্ড কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী খাতা পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের আশানুরূপ ফল অর্জন করতে হয়। প্রশ্ন উঠেছে, রেজাল্ট খারাপ হলেও অনেক পরীক্ষার্থী ভীতির সম্মুখীন হয়ে বা আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে পুনর্নিরীক্ষণের চেষ্টা করে না। তবে দায়িত্ব জ্ঞানহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় প্রকাশিত রেজাল্টে অকৃতকার্য, আর পুনর্নিরীক্ষণে জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পরীক্ষকদের অনিয়ম, দুর্নীতি আর চরম অবহেলার কারণে খাতায় উত্তরের মানদ- ঠিক নেই, যোগফলে ভুল, সঠিক উত্তরের নম্বর না দেয়া ও নম্বরপত্রে নম্বর না তোলাসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীদের আশার আলো নিভে যাচ্ছে ফলাফল প্রকাশের দিনেই। প্রশ্ন উঠেছে কেন খাতা পরীক্ষণ না করে পুনর্নিরীক্ষণ করা হবে। আরও অভিযোগ রয়েছে, ফলাফল ঘোষণার পর খাতা পুনর্পরীক্ষণের আবেদন করা হলে ব্যাপক হারে ফলাফলে পরিবর্তন আসছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, একদিনে প্রায় ৭/৮ হাজার খাতা পুনর্নিরীক্ষণ সম্ভব নয়। কারণ, খাতার ভেতরে থাকা প্রশ্ন উত্তরে যদি নম্বর প্রদানে ভুল থাকে তা খতিয়ে দেখা সম্ভব নয়। ফলে পরীক্ষণ করা হয় টেব্যুলেশন শিটের যোগফল ও খাতায় প্রদত্ত মানের ত্রুটি-বিচ্যুতি। এছাড়া যারা খাতা পরীক্ষণের সঙ্গে জড়িত তাদের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যেসব শিক্ষক চাকরি পেয়েছেন তাদের পক্ষে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর খাতা পরীক্ষণ করা অনেকটা দুষ্কর। এমনও অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা প্রশ্নোত্তরের মানদ- বোঝেন, কিন্তু নম্বর প্রদানে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছেন না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে যদি খাতা পুনর্নিরীক্ষণ না-ই হয় তাহলে কেন সরকারের দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক খাতার বিপরীতে পুনর্নিরীক্ষণ ফি বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার খাতা পর্যবেক্ষণ না করে যদি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে থাকা কম্পিউটার বিভাগ কর্তৃক তৈরিকৃত টেব্যুলেশন শীট পরীক্ষা করেন তাহলে খাতার ভুল কিছুতেই বের করা সম্ভব হবে না। কারণ কম্পিউটার বিভাগে নিয়োজিত অদক্ষ অপারেটরের বিচক্ষণতার অভাবে ভুল তথ্যটিই ডাটা আকারে লিপিবদ্ধ হচ্ছে। ফলে অদক্ষ শিক্ষক কর্তৃক উত্তরপত্রের বিভিন্ন মান যোগফলে ভুল যেমন রয়ে গেছে তেমনি মানসম্মত উত্তর অনুযায়ী যদি অদক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর না দিয়ে থাকেন তাও যাচাই-বাছাইয়ের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এতে অদক্ষ শিক্ষক বা পরীক্ষকের দায়িত্বহীনতার কারণে নিভে যাচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থীর আশার আলো। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, শতাধিক শিক্ষক দিয়ে খাতা পুনর্নিরীক্ষণ করা হয়। কিন্তু অদক্ষ শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের খাতা পরীক্ষণ ও বিপর্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঐসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে শোকজসহ কয়েক বছরের জন্য খাতা পরীক্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
×