ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বালু ফেলে ঝুঁকিমুক্ত করার কাজ চলছে

সুন্দরবন হোটেলের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে ফাটল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ মে ২০১৫

সুন্দরবন হোটেলের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে ফাটল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পান্থপথে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিংয়ে ধস থামছে না। দুর্বল পাইলিং এবং নির্মাণাধীন ভবনের নিচে শক্ত মাটি না থাকায় ধসের ঘটনাটি ঘটে। এদিকে সুন্দরবন হোটেল ঝুঁকিমুক্ত করতে হোটেলের নিচে ফাঁকা হয়ে পড়া জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে। হোটেলটির আন্ডারগ্রাউন্ডের গাড়ি পার্কিংয়ে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলারের কাছ দিয়ে ফাটল দেখা দেয়ায় ভবনের বাইরের দিকে থাকা অংশ আলাদা হয়ে গেছে। ফাটলের কারণে লোহার রড দিয়ে তৈরি জাল বেরিয়ে পড়েছে। লোহার জাল কেটে সেখানে বালু ফেলে হোটেলকে ঝুঁকিমুক্ত করার কাজ চলছে। এতে ঝুঁকি অনেক কমবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দাবি। শুক্রবার গভীর রাতে সুন্দরবন হোটেল লাগোয়া পশ্চিম দিকে রাস্তার কিছু অংশ এবং নির্মাণাধীন ভবনের পশ্চিম ও উত্তর দিকের পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত স্টিলের বেশকিছু ভারি বার ধসে পড়েছে। শনিবার সকাল দশটার দিকে নির্মাণাধীন ভবনটির ভেতরের উত্তর-পশ্চিম কোণায় নির্মিত সিমেন্ট, রডসহ অন্যান্য মালামালা রাখার প্রায় একশ ফুট পাকা ঘরের অন্তত ৮০ ফুট ধসে গভীর খাদে পড়ে যায়। ঘরটির সামনে থাকা প্রায় একশ ফুট চওড়া ও প্রায় সম পরিমাণ লম্বা রাস্তাটির অর্ধেকই ধসে পড়ে যায়। বাকি অর্ধেকের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় রাস্তাটি কাত হয়ে আছে। যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে। পাইলিংয়ের গভীর খাদে চাপা পড়া চারটি ছোট ক্রেনের মধ্যে দুইটি উদ্ধার হয়েছে। গত বুধবার ঘটনার পর থেকে শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ২ হাজার ট্রাক বালু ফেলা হয় গর্তে। তাতে গভীর খাদের দশভাগের এক ভাগও ভরাট হয়নি। ধস ঠেকাতে অনবরত বালু ফেলা হচ্ছে। গত ২৭ মে বুধবার সকাল সাতটার দিকে পান্থপথ মোড়ে সি আর দত্ত সড়কের ১/সি/১ নম্বর হোল্ডিংয়ে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের গর্তে ধসের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার দিনই পাইলিংয়ের গভীর গর্তে ধসে পড়ে সুন্দরবন হোটেলের সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, ফুটপাথ, বিদ্যুতিক তারের খুঁটি, কয়েকটি গাছ, টং দোকান, ফুচকা ও কয়েকটি ভ্যানগাড়ি। আর ধসের কারণে চাপা পড়ে চারটি ছোট ক্রেন। সুন্দরবন হোটেলের নিচের প্রায় চল্লিশ ফুট জায়গার মাটি সরে যায়। হোটেলের নিচের পিলারে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই প্রতিদিনই ধসের ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যেই রাস্তা, ফুটপাথ, বিলবোর্ড, সিমেন্ট বালু মিশ্রণের মেশিনসহ নানা কিছুই গভীর খাদে ধসে পড়েছে। ঘটনার পর থেকেই গভীর খাদ বালু দিয়ে ভরাটের কাজ চলছে। শনিবার পর্যন্ত দুইহাজার ট্রাক বালু ফেলা হয়েছে। আজ রবিবার রাত পর্যন্ত আরও অন্তত পাঁচশ ট্রাক বালু ফেলা হবে। মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে এসব বালু আনা হচ্ছে। অনবরত বালু ফেলা হলেও ধস না থামার কারণ সম্পর্কে বুয়েট, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের প্রকৌশলীরা বলছেন, ধসের কারণে নির্মাণাধীন ভবনের চারদিকে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় শুধুমাত্র গভীর খাদে নির্মাণাধীন ভবনের পূর্ব দিক থেকে বালু ফেলতে হচ্ছে। দক্ষিণ দিকে সুন্দরবন হোটেল, উত্তর দিকের রাস্তায় ফাটল আর পশ্চিম দিকে ছোট ছোট ঘর আর রাস্তা না থাকায় ট্রাক দিয়ে বালু ফেলা যাচ্ছে না। একদিক দিয়ে বালু ফেলে দ্রুত গভীর খাদ ভরাট করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে নির্মাণাধীন ভবনের পূর্ব দিক ছাড়া অন্য তিন দিকে নিয়মিত ধসের ঘটনা ঘটছে। যা ঠেকানোর কোন পথও নেই। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব একদিক দিয়েই বেশি বেশি বালু ফেলে ভরাট কাজ চালানো হচ্ছে। এদিকে সুন্দরবন হোটেলের আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় নতুন করে অন্তত পাঁচ ইঞ্চি ফাটল দেখা দিয়েছে। ফেটে যাওয়ায় লোহার জাল বেরিয়ে গেছে। লোহার জালটি বেজমেন্ট থেকে আলাদা করে হোটেলকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কেটে দেয়া হচ্ছে। আর ফাঁকা জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে। পাইলিং করে হোটেলটি নির্মাণ করার কারণে পিলারগুলো অক্ষত রয়েছে। তবে পিলারগুলোতে মাটি না থাকায় ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। হোটেলের নিচে রোলার দিয়ে বালু ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই কাছাকাছি বালু ফেলার পর তা কোদাল দিয়ে শ্রমিকরা ফাঁকা জায়গায় ফেলছেন। পাইলিংয়ে ধসের কারণে আশপাশের সব বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজউক ও সিটি কর্পোরেশন বলছে, প্রায় এক একর জায়গার উপর বহুতল দুইটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। গত কয়েক বছর ধরেই চারদিকে স্টিলের পাত দিয়ে বেড়া দিয়ে ভেতরে নির্মাণ কাজ চলে আসছিল। পাইলিংয়ের জন্য অন্তত দুশো ফুট গভীর করা হয়। চারদিকে স্টিলের বার বসিয়ে পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। যা ধস ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। জায়গাটিতে এক সময় গভীর পানি ছিল। তা ভরাট করে কাজ চলছিল। নিচে শক্ত মাটি না থাকায় এবং দুর্বল পাইলিংয়ের কারণে ধসের ঘটনাটি ঘটে। রাজউক, সিটি কর্পোরেশন মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের ভবন ঝুঁকিমুক্ত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। এজন্য দিনের বেলায়ও ঢাকায় মালবাহী ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও ট্রাকে করে বালু এনে ফেলা হচ্ছে।
×