ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরিপুর ৪১২ মে.ওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র

নতুন টারবাইন ব্যবহার করায় দ্রুত বিকল

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ মে ২০১৫

নতুন টারবাইন ব্যবহার করায় দ্রুত বিকল

রশিদ মামুন ॥ পরীক্ষিত প্রযুক্তির বদলে নতুন উদ্ভাবিত টারবাইন ব্যবহার করায় চালু হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যেই বিকল হয়ে গেছে দেশের একক বৃহত্তম বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র। হরিপুর-৪১২ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রটির টারবাইন গত মঙ্গলবার বিকল হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে টারবাইনের ব্লেড ভেঙ্গে যাওয়ায় এই বিপত্তি ঘটেছে। যদিও বিদ্যুত কেন্দ্রটির মালিক সরকারী কোম্পানি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) বলছে, আগামী সপ্তাহে টারবাইন না খোলা পর্যন্ত বলা যাবে না প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে। বিগত সরকারের সময় স্থাপিত এটিই সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র। বিদ্যুত কেন্দ্রটি বন্ধের আগের দিনও ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতায় চলছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিদ্যুত কেন্দ্রটির কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়। নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রে কারিগরি ত্রুটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রের টারবাইনে এ ধরনের বিপর্যয় নেমে আসাটা খুব দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা। ইজিসিবি সূত্র জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মারুবিনি টারবাইন এনেছে মিতসুবিসি থেকে। কিন্তু মিতসুবিসির এই টারবাইনটি একেবারেই নতুন। সাধারণত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে টারবাইন কেনার সময় পরীক্ষিত প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মিতসুবিসি থেকে টারবাইন কেনার বিষয়টি রহস্যাবৃত্ত। টারবাইন সংগ্রহের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে জিই অথবা জার্মানীর সিমেন্সকে প্রাধান্য দেয়া হয়। দেশের বেশিরভাগ বিদ্যুত কেন্দ্রর টারবাইন সরবরাহ করে আসছে এই দুই প্রতিষ্ঠান। ইজিসিবির বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তখন মিতসুবিসির কাছ থেকে টারবাইন না নেয়ার অনুরোধ জানালেও ইজিসিবির শীর্ষ পর্যায় বিষয়টি কানে তোলেনি। জাপানেরই অন্য একটি কোম্পানি জার্মানীর সিমেন্সের কাছ থেকে টারবাইন কেনার প্রস্তাব দিয়ে দরপত্র জমা দিলেও তাদের কাজ দেয়া হয়নি। যদিও মারুবিনি এবং ওই কোম্পানি দুটিই জাপানের বেসরকারী কোম্পানি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইজিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালে যখন টারবাইনটি কেনা হয়েছিল সে বছরই এটি বাজারে আসে। ফলে এই টারবাইনে কোন সমস্যা হবে না তা জোর দিয়ে বলা সম্ভব ছিল না। তিনি বলেন, উচিত ছিল যেসব টারবাইন ইতোমধ্যে ভাল কাজ করছে তা প্রমাণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে কেনা। এভাবে নতুন টারবাইন কিনে কোন বিদ্যুত কেন্দ্রকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা উচিত হয়নি বলে মনে করেন তিনি। ইজিসিবি সূত্র জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্রটি বিকল হওয়ার পর ইজিসিবি টারবাইনটি খুলে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুলে দেখার পর এই বিপর্যয় কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নির্ধারণ করবে কোম্পানিটি। বড় যে কোন বিপর্যয় হলে কেন্দ্রটি চালু হতে এক বছরের মতো সময় লেগে যাবে। এর আগেও ইজিসিবি একটি কেন্দ্র এ ধরনের জটিলতায় পড়েছিল। সিদ্ধিরগঞ্জ-১২০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের একটি চালুর পরেই কারিগরি জটিলতায় পড়ে। ভারতীয় কোম্পানি ওই কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছিল। কেন্দ্রটির কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে পুনরায় চালু করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। জানতে চাইলে ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোস্তফা কামাল স্বীকার করেন এই টারবাইনটি নতুন বাজারে এসেছে। তবে থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে একই টারবাইন ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন তাদের সমস্যা হয়নি আমাদের এখানে হয়েছে। কত দিন টারবাইন বাজারে এসেছে জানতে চাইলে বলেন, আমি নিশ্চিত নই তবে পাঁচ থেকে সাত বছর হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এ ধরনের ত্রুটি সারাতে একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয়। আগামী সপ্তাহে আমরা টারবাইনটি খুলে দেখব। এরপরই বলতে পারব কবেনাগাদ ঠিক করা সম্ভব হবে। পিডিবি সূত্র বলছে, সব থেকে কম দামে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত কিনত পিডিবি। ইজিসিবি প্রতি কিলোওয়াট পার আওয়ার (ইউনিট) এক দশমিক ৭১৫৪ টাকায় পিডিবির কাছে বিক্রি করে। এর মধ্যে ইউনিট প্রতি এক দশমিক ০৬ টাকা স্থায়ী ব্যয় এবং দশমিক ৫৮ টাকা অন্যান্য ব্যয় (জ্বালানি, অবচয় এবং পরিচলন খরচ)। বিদ্যুত কেন্দ্রটি বিকল হওয়ায় উচ্চমূল্যের ভাড়ায় চালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত কিনে চাহিদা মেটাতে হবে। এতে সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হবে। আর বিদ্যুত কেন্দ্রটি এক বছর বন্ধ থাকলে এই ক্ষতি আরও বাড়বে। ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (ইজিসিবি) হরিপুর পুরনো ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের পাশে আট দশমিক ৫৭৩ একর জমির ওপর বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করে। কেন্দ্রটির জন্য প্রতিদিন ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রেটির জন্য পৃথক গ্যাস সরবরাহ লাইনও নির্মাণ করা হয়। আশপাশের পুরাতন কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে ইজিসিবির কেন্দ্রটিকে প্রাধান্যও দেয়া হয়। বিদ্যুত কেন্দ্রর কম্বাইন্ড সাইকেল গত বছর জুলাইতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।
×