ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিহতদের পরিবারের দাবি

যশোরে দুই বন্ধুকে হত্যার পর গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৮ মে ২০১৫

যশোরে দুই বন্ধুকে হত্যার পর গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে দুই বন্ধু ইসমাইল হোসেন ও আল আমিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পর গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। পরিকল্পিত এ হত্যাকা-ের পর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। বুধবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ইসমাইল হোসেন ও আল আমিনের পরিবার এমনটিই দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত ইসমাইল হোসেনের মা রেহেনা বিলাল, বাবা শেখ বিলাল উদ্দিন, মামা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দীপু, বড় মামা মঞ্জুরুল আলম, নিহত আল আমিনের বড় ভাই রবিউল ইসলামসহ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। এ সময় নিহত ইসমাইল হোসেনের মা রেহেনা বিলালের আর্তনাদে সংবাদ সম্মেলন স্থলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। তিনি বিলাপ করতে থাকেন ‘আমার মানিককে এনে দাও। ওর (ইসমাইল) মুখে কোন দাগ ছিল না। ওর মুখ ক্লিন (পরিষ্কার) ছিল। কিডা (কে) ওর মুখে এত্ত দাগ করল। আমার নিষ্পাপ বাবা কোথায় গেল। আমি তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সোনাকে যারা খুন করেছে আমি তাদের বিচার চাই। আমার নিষ্পাপ ইসমাইল কই?।’ এ সময় পরিবারের সদস্যরা ডুকরে কাঁদতে থাকেন। সংবাদ সম্মেলনে নিহত ইসমাইল হোসেনের মামা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দীপু লিখিত বক্তব্যে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জোড়া খুনের জন্য পুলিশকে অভিযুক্ত করেন। দেলোয়ার হোসেন দীপু অভিযোগ করেন, গত ২৪ মে রাতে ইসমাইল ও আল আমিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসনের কতিপয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ হত্যাকা-কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বক্তব্যে গরমিল লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ প্রশাসন বলছে, নিহত ওই দুইজন মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তিনটি চাকু ও একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে, নিহত এ দুই যুবককে ডাকাত সন্দেহে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করেছে। কয়েকটি পত্রিকায় পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর রশীদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি বায়েজীদ ও কানন নামে দুই সন্ত্রাসীও ডাকাতিকালে উপস্থিত ছিল। তারা পালিয়ে গেলেও আল আমিন ও ইসমাইল জনতার গণধোলাইয়ের শিকার হয়। এ সময় মঞ্জুর রশীদ হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র নিহত ব্যক্তিদের কাছে পাওয়া যায়। পুলিশের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নিহত ইসমাইল হোসেনের মামা দীপু বলেন, কথিত ছিনতাইয়ের শিকার বরুণ তরফদার এবং তার তৈরি ডাকাতি ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত গল্পের মতোই। কারণ ছিনতাই এবং গণপিটুনির কথা স্থানীয়রা কেউই জানেন না। গণপিটুনির কথা বলা হলেও নিহতদের মাথা ও মুখম-ল ছাড়া শরীরের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। নিহতদের মাথা ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। তাদের মাথার খুলির সামনের অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। দীপু উল্লেখ করেন, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে ইসমাইল অথবা আল আমিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছি। ওই মেয়েটির সঙ্গে বরুণ তরফদারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের কারণে পুলিশের সাহায্যে এ হত্যাকা- হতে পারে। এখন আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য নতুন গল্প তৈরি করে পরিবেশন করা হয়েছে। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বরুণ তরফদার ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিকদার আক্কাছ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকা-ের আসল রহস্য উন্মোচিত হবে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলী। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের অভিযোগ সত্য নয়। আমরা খবর পেয়ে গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত দুইজনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়া বরুণ তরফদার বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেছে। মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। প্রসঙ্গত গত ২৪ মে রাতে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের হুদোর মোড় এলাকায় সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে আল আমিন (২৪) ও যশোর সদর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়া গ্রামের শেখ বিলাল উদ্দিনের ছেলে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে (২১) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের দাবি ছিল, ডাকাতি করতে গিয়ে তারা গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছে।
×