ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধুময় জ্যৈষ্ঠ

আম কাঁঠাল লিচুর রসে রঙিন করি মুখ...

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ মে ২০১৫

আম কাঁঠাল লিচুর রসে রঙিন করি মুখ...

মোরসালিন মিজান ॥ ঝড়ের দিনে মামারবাড়ি আম কুড়াতে সুখ/পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ...। না, শুধু আম জাম নয়। লিচু কাঁঠাল আনারস জামরুল তরমুজ বাঙ্গী করমচা তালের শাঁশ- কী নেই? বাজার ভরে উঠেছে রসালো ফলে। কারণ মধুর জৈষ্ঠ্য এখন। সারাদেশেই চলছে মৌসুমী ফল খাওয়ার ঐতিহ্যবাহী উৎসব। বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় আসছে ট্রাকভর্তি ফল। প্রায় সব বাজার ও বিভিন্ন ফুটপাথে ফলের ঝুড়ি সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। বসতে দেরি হলোই বা, ক্রেতা পেতে দেরি নেই। হ্যাঁ, এক ধরনের তাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণটিও পরিষ্কার- মধুমাসের ফল বেশিদিন থাকে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চেখে দেখা তাই জরুরী। সেই ‘জরুরী অবস্থা’ এখন চলছে! শুরুটা বলা চলে, লিচু দিয়ে হয়েছিল। এখনও লিচুর রাজত্ব! চাহিদা তুঙ্গে। শুরুতে বাজারে ছিল মেহেরপুরসহ কয়েকটি জেলার লিচু। এখন অধিকাংশই ঈশ্বরদী থেকে আসা। দিনাজপুর থেকেও আসছে। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ লিচুতেও ঢুকে গেছে চায়না। একটি জাত ‘চায়না টু’ নামে পরিচিত। ‘চায়না থ্রি’ নামে আছে আরেকটি জাত। এই জাতের লিচু আকারে বড়। এক শ’ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। এসব লিচুর তুলনায় ‘বোম্বাই’ নামে পরিচিত লিচুর চাহিদা কয়েকগুণ বেশি। ১০০ লিচু ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজশাহীর লিচুর উপরে লিচু হয় না। কাওরান বাজারের আড়তদার রবিউল জানান, ওই লিচু আসতে আরও দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। তখন নতুন করে লিচু কেনার ধুম পড়বে বলেও আশা করছেন তারা। তবে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রধান রসালো ফল আম। কাছাকাছি সময়েই বাজারে আসে। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঠিক এই মুহূর্তে বাজারে সাতক্ষীরার আম বেশি। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে আসছে কিছু। হিমসাগর ও ল্যাংড়া আমের বেশ চাহিদা। মোখলেসুর রহমান তালুকদার নামের এক বিক্রেতা জানান, এখন যেসব আম আসছে, বেশ মিষ্টি। তবে রাজশাহীর আমের কথা আলাদা। ওই আম আসতে আরও অনেক সময় বাকি। ১৫ দিনের মতো লাগতে পারে বলে জানান তিনি। প্রচ- গরম হওয়ায় দ্রুত পাকতে শুরু করেছে জাতীয় ফল কাঁঠালও। সুস্বাদু ফল কমবেশি সব বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে বাজারে ছিল চট্টগ্রামের কাঁঠাল। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে আছে টাঙ্গাইলের কাঁঠাল। ছোট বড় মাঝারি যেটার যে আকার, সে অনুযায়ী দাম। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু। বড় কাঁঠালের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে। রসালো ফলের আলোচনায় আনারসের কোন তুলনা হয় না। এ ফলটি আসছে রাঙ্গামাটি থেকে। আনারসের আকার ছোট কিংবা মাঝারি। খেতে সুস্বাদু। তবে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে একটু খারাপই লাগল। জানা গেল, আনারসের কথা কিছুটা ভুলেই আছেন ফলপ্রেমীরা। বিক্রি কম। এত কম যে, কাওরান বাজারের কোন কোন ব্যবসায়ী এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখান না। বহু পিড়াপিড়ির পর ফজলুল হক নামের এক আড়তদার বললেন, ‘এখন সবাই লেচু আম কাঁঠাল কিনায় ব্যস্ত ভাই। অত মজার লেচুডা চক্ষে পড়ে না। লক্ষ লক্ষ টাকা ফালায়া রাখছি আনারসের পিছনে। ক্যামনে কী হবে, এখন আর মাথায় ধরতেছে না।’ অবশ্য আম লিচু কাঁঠালের পর আনারসের চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। বিশেষ করে মধুপুরের আনারস বাজারে এলে বিক্রি কয়েকগুণ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। বাজারে আছে জামও। অভ্যস্ত চোখে কালো আঙ্গুর মনে হতে পারে। আদতে জাম। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় আসছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে। আর জামের ভাই যেন জামরুল। সাদা এবং লাল রঙের ফলটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। অনেকেই মজা করে খান। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে। গরমে খুব উপকারী ফল তরমুজ। বাজার ভরে উঠেছে তরমুজে। বেলও খুব উপকারী। শরবত করে খেতে অনেকেই বেল কিনছেন। গরম বেশি হওয়ায় তালের শাঁশের চাহিদাও চোখে পড়ার মতো। একটি তালে তিনটি বিচি। দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা। এসবের বাইরে বাঙ্গী করমচা ফুটিসহ আরও অনেক ফল এখন হাতের কাছে। ফলপ্রেমীরা কিনছেনও প্রচুর। বুধবার কাওরান বাজার থেকে ব্যাগভর্তি করে মধুমাসের ফল কিনছিলেন সরকারী কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দীন। জনকণ্ঠকে তিনি বললেন, এখন তো ফল খাওয়ার সময়। এক সময় ফল খেতে সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি চলে যেতাম। ব্যস্ততার কারণে সেটা এখন পারা যায় না। তাই কিনে খাওয়া। একই দিন পল্টন এলাকা থেকে ফল কিনছিলেন শিহাব আকন্দ নামের এক ক্রেতা। তিনি জানান, শুধু জিহ্বার স্বাদ নয়, মৌসুমী ফলের হাজারটা উপকার। পুষ্টিগুণের কথা ভেবেও ফল কিনতে হয়। যে কয়দিন ফল থাকবে, এই কেনা ও খাওয়া চলবে বলে জানান তিনি।
×