ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওরিয়েন্টেশনে বিশেষজ্ঞদের তথ্য

শহরের অধিকাংশ যক্ষ্মা রোগী ভাসমান- এদের চিকিৎসা বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ মে ২০১৫

শহরের অধিকাংশ যক্ষ্মা রোগী ভাসমান- এদের চিকিৎসা বড় চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহর অঞ্চলের যক্ষ্মা রোগীরা অধিকাংশ ভাসমান বলে তাদের চিকিৎসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এ সময়ে প্রধান চ্যালেঞ্জ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর যক্ষ্মা। এমডিআর যক্ষ্মার অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর অনিয়মিত ওষুধ সেবন। এমডিআর যক্ষ্মার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী, জটিল ও ব্যয়বহুল। এছাড়া যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ও এইচআইভি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ। ২০১৪ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৫৫ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩১৮ জন। ২০১৩ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর মাধ্যমে শনাক্তকৃৃত কফে যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর চিকিৎসার সফল্যের হার ৯৪ ভাগ। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এবং ব্র্যাক আয়োজিত ‘শহরে যক্ষ্মা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশনে বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর বিভাগীয় কনসালট্যান্ট ডাঃ আহমেদ পারভেজ জাবিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার ডাঃ কাজী আল মামুন সিদ্দিকী। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সভাপতি তৌফিক মারুফ এবং আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর প্রোগ্রাম কনসালট্যান্ট ডাঃ মজিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পরিচালক ডাঃ নজিবুর রহমান, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ কর্মসূচীর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাগুফতা সুলতানা। ডাঃ আহমেদ পারভেজ জাবিন বলেন, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। তবে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদের চিকিৎসায় যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভাল হয়। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। অবহেলা না করে কফ পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যক্ষ্মরোগ চিকিৎসায় নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণের হার শতকরা ৬৪ ভাগ এবং চিকিৎসায় সফলতার হার শতকরা ৯২ ভাগ। বিশ্বের সর্বাধিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বাংলাদেশে নতুন রোগীদের মধ্যে ১.৩৪ শতাংশ এবং পুরাতন রোগীর ২০ শতাংশ ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর) রোগে আক্রান্ত। ‘ডট্স’ যক্ষ্মায় চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যা প্রয়োগ করে বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা গেছে। তবে তাঁরা উল্লেখ করেন বর্তমানে সরকার এ বিষয়ে একটি জরিপ চালাচ্ছে, যা ২০১৫ সালে শেষ হবে এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যক্ষ্মা পরিস্থিতির আরও বিশ্বস্ত চিত্র পাওয়া যাবে। এছাড়া তাঁরা অতি দরিদ্র, অভিবাসী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে যক্ষ্মা চিকিৎসার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশে প্রতি বছর তিন লাখ শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে, যার মধ্যে মাত্র অর্ধেককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। মাঠ পর্যায়ে যক্ষ্মাকে কার্যকরভাবে নির্মূল করতে ‘সেলফ হেলপ কমিটি’ গঠনের সুপারিশের পাশাপাশি গ্লোবাল ফান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং তা ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তাঁরা। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন যে ২০১৫ সালের পরও এই তহবিল অব্যাহত থাকবে। শহর অঞ্চলের যক্ষ্মা রোগীরা অধিকাংশ ভাসমান বলে তাঁদের চিকিৎসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে শহরের যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা কৌশল প্রণয়নের ওপর জোর দেন তাঁরা। তাছাড়া যক্ষ্মা শনাক্তকরণ সহজতর করতে ‘জিন এক্সপার্ট’ যন্ত্র সহজলভ্য করা দরকার।
×