ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুঝেসুজে বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৭ মে ২০১৫

বুঝেসুজে বিনিয়োগ

অবশেষে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে এখন নাগরিকদের কাছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠল। চলতি মাসের প্রথম দিকে অবশ্য এই খাতের বিনিয়োগে মুনাফা হ্রাসের পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল। বাজেট ঘোষণার আগে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাসের বিষয়টি ওই খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সঞ্চয়পত্র হলো স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। মানুষ এটাই প্রত্যাশা করে। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। শেয়ারবাজারে ধস নামার বাস্তবতায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ প্রধানত সঞ্চয়পত্র খাতের মাধ্যমেই বিনিয়োগ করে থাকে। এটা ঠিক যে অবরোধ-হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে। মূলত কোন ধরনের ঝুঁকি না থাকায় এবং বেশি লাভের জন্য বহু নাগরিক এ খাতে ঝুঁকেছেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় এমনটা ঘটেছে। অবসরভোগী চাকরিজীবী, প্রবাসী ও সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভেতর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের প্রবণতা বেশি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই খাতেই বিনিয়োগ করে থাকে ঝুঁকিহীনভাবে, বেশি লাভের আশায়। সরকার নির্ধারিত সুদের হারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যে নাগরিকরা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, এখন সুদের হার কমায় নিশ্চিতরূপেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ বিষয়টি নিয়ে এর আগে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে জনকণ্ঠ। তাতে সুদ কমানোর সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বলাবাহুল্য বহু মানুষ এখন অনেকটা বাধ্য হয়েই সঞ্চয়পত্র কেনার পরিবর্তে অন্যত্র বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করবেন। এরকম পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার তাদের কাছে প্রধান বিনিয়োগক্ষেত্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। তবে শেয়ারবাজারে বুঝেসুজেই বিনিয়োগ করা সমীচীন। শেয়ারবাজারে গিয়ে কিছু লোক যেমন অল্প সময়ের ভেতর কোটিপতি হয়েছেন, তেমনি আবার মূল পুঁজি হারিয়ে পথে বসে পড়ার মতো অবস্থাও হয়েছে অনেকের। তাই শেয়ারবাজার সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নিয়েই এখানে বিনিয়োগ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ওঠানামা বেশি হয়। তাছাড়া অনেক বিনিয়োগকারী না বুঝেই শেয়ারবাজারে পুঁজি খাটান। বুঝেসুজে বিনিয়োগ করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, অথচ শেয়ারের দাম বাড়ছে এ ধরনের চিত্রও পাওয়া যায়। শেয়ারবাজার আসলে তথ্যের বাজার। যার কাছে তথ্য আছে, সে বেশি লাভবান। অর্থনীতির শাস্ত্র অনুযায়ী, শেয়ারবাজার ফটকা বাজারেরই অংশ এবং এর মূল কথাই ঝুঁকি। সুতরাং ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে কেবল এই বাজারে থাকা যায়। অন্যকে দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক পদ্ধতি হতে পারে না। কোম্পানির প্রোফাইল দেখে বিনিয়োগ করাই বিচক্ষণতা। একটি কোম্পানির আর্থিক বিবরণী কিভাবে বুঝতে হয়, সেটি না জানলে শিখে নেয়া যায়। কখন কিনতে হয় আর কখন বিক্রি করতে হয়, সেটিও বুঝতে হয়। মোটকথা জেনেবুঝেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত।
×