ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গারো তরুণী ধর্ষণের হোতা তুষারকে ধরতে মাঠে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৫ মে ২০১৫

গারো তরুণী  ধর্ষণের হোতা তুষারকে ধরতে মাঠে পুলিশ

আজাদ সুলায়মান ॥ মাইক্রোতে গারো তরুণীকে গণধর্ষণের মূল হোতা তুষারকে আটক করার জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। পাশাপাশি ডিবি ও র‌্যাব চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে তৎপর হয়েছে। তুষার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে- নাকি স্রেফ লালসা চরিতার্থ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ কা- ঘটিয়েছে- পুলিশ সেটার ওপরই জোর দিয়ে তদন্ত করছে। এ জন্য মেয়েটির মোবাইল ফোনেরও কললিস্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ। বাড্ডা থানা পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটক করার কথা স্বীকার না করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সি জানান, এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। জানা যায়, তদন্তের শুরুতেই বৃহস্পতিবার রাতে ওই এলাকায় দিয়ে যতগুলো মাইক্রোবাস চলাচল করেছে, সবগুলোকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে যমুনা ফিউচার পার্কের সেন্ট্রাল সিসিটিভির সব ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা ওসি (তদন্ত) মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার ক্লু পাওয়া গেছে। এখন তাদের আটক করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সি। রবিবার কমিটির এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষে টিপু মুন্সি বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তবে আটকের কথা অস্বীকার করে বাড্ডা থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিন ও ওসি (তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা কাউকেই আটক করিনি। আমরা রেইডে আছি। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবারও রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন তরুণীকে দেখতে যান নারী ও শিশুমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বাড্ডা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়েরের পর থেকেই পুলিশের একাধিক টিম গণধর্ষণে জড়িত মাইক্রোবাসের পাঁচ দুর্বৃত্তকে ধরার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য হাতে নিয়েই মাঠে নেমেছে। তদন্তের অন্যতম সহায়ক হিসেবে প্রথমেই পুলিশ মেয়েটিকে তুলে নেয়ার ঘটনাস্থল কুড়িল সিএনজি স্টেশন থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত কোথায় কোথায় সিসিটিভি লাগানো আছে সেটা শনাক্ত করে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত পুলিশ যমুনা ফিউচার পার্কের সেন্ট্রাল সিসিটিভির সব ফুটেজ সংগ্রহ করে। তবে মেয়েটি যে দোকানে কাজ করত সেটার নিজস্ব কোন সিসিটিভি না থাকায় পুলিশকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে সেন্ট্রাল সিসিটিভির ওপর। ওই ফুটেজগুলোতে কতটুকু এলাকার চিত্র ধারণক্ষমতা ছিল জানতে চাইলে ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, যমুনা ফিউচারের সামনে ও আশপাশের চারদিকেরই সব রাস্তা এতে রেকর্ড করতে সক্ষম। এছাড়া বসুন্ধারা গেটের সামনে আরেকটি সিসিটিভিরও ফুটেজ নেয়া হয়েছে। আপাতত এ দুটোতে রেকর্ড করা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত কতগুলো মাইক্রোবাস ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করেছে সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত আরও দু’স্থানে সিসিটিভি সংযুক্ত করা আছেÑ একটি খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজ ও অপরটি হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দরের গোলচক্করে। ভিকটিম মেয়েটির মতে-বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার সময় তাকে অপহরণের পর মাইক্রোবাসটি কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বিমানবন্দরের দিকে এগিয়ে গেছে। গাড়িটির গতি এতটাই ধীর ছিল যে, ঘটনাস্থল থেকে উত্তরা জসীমউদ্দিন মোড় পর্যন্ত কালক্ষেপণ করা হয়েছে দেড় ঘণ্টারও বেশি। কাজেই খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর গোলচক্করের সংযুক্ত সিসিটিভিতে ওই রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলাচলকারী সবগুলো মাইক্রোবাস অনায়াসে শনাক্ত করার একটা নির্ভরযোগ্য সম্ভাবনা আছে। এদিকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি সাজ্জাদ হোসেন রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, মেয়েটিকে গণধর্ষণের সময় হঠাৎ দুর্বৃত্তদের একজনের মোবাইল ফোন বেজে উঠে। তখন একজন বলে এই তুষার এই তোর ফোন এসেছে, কথা বল। এতেই মেয়েটি বুঝতে পারে একজনের নাম তুষার। এখন এই তুষারের সূত্র ধরেই তদন্ত চলছে। পুলিশ জানায়, দুর্বুত্তদের একজনের নাম ঠিকানা সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হতে পেরেছে। এখন তাকে আটকের জন্য রাজধানীর বাড্ডা, কুড়িল, জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত, বসুন্ধরা ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এ সম্পর্কে ওসি সাজ্জাদ জানান, যে কোন সময় তুষারকে আটক করা সম্ভব হতে পারে। তবে মেয়েটি বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে কেন হাঁটতে হাঁটতে সিএনজি পাম্প পর্যন্ত পৌঁছল সেটা হিসেবে মিলছে না। মাইক্রোবাস থেকে ফোন করে তাকে সেখানে থাকার জন্য বলেছিল কিনাÑ সেটাই বড় প্রশ্ন। কেননা-মেয়েটা যেখানে দাঁড়ানো ছিল, সেখানে তো বাস থামে না, এমনকি কিছুটা নির্জন। তাহলে কেন সে এখানে এসেছিল সেটাও রহস্যজনক। এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যমুনা ফিউচার পার্কের ওই মেয়েটি যে দোকানে কাজ করত- সেখানে কয়েকদিন আগে ক্রেতাবেশে কয়েকজন যুবক হাজির হয়। তাদের সঙ্গে ছিল একজন বিদেশী নাগরিক। তারা কেনাকাটা ছাড়াও মেয়েটির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চায়। ওই মাইক্রোতে কোন বিদেশী ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি থাকে তাহলে তাহলে এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে। প্রতিবাদ অব্যাহত ॥ এ ঘটনার প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন সংগঠন। রবিবারও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ও গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু)। যৌন নিপীড়নবিরোধী নির্দলীয় ছাত্র জোট নামে একটি সংগঠন এই পাশবিকতায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে আবারও সমাবেশে ডেকেছে। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ ইরফান বলেন, যেহেতু মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত স্পষ্ট এবং নিপীড়িত মেয়েটির ভাষ্যমতে অপরাধীদের একজনকে সে শনাক্ত করতে পেরেছে, সুতরাং খুব সহজেই জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতার করা সম্ভব। তরুণীর পাশে চুমকি ॥ এছাড়া নির্যাতনকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রবিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে ওই তরুণীকে দেখতে এসে এ আহ্বান জানান তিনি। চুমকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে। রাজধানীর সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসালে এ ধরনের অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। উল্লেখ্য, যমুনা ফিউচার পাকের একটি শপিংমলে চাকরি করেন ওই তরুণী। ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোডের পশ্চিম পাশে সিনহা সিএনজি পাম্পের পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় পাঁচ যুবক তার মুখ চেপে ধরে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে গাড়িতেই ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার জসীমউদ্দীন রোডের মাথায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। পর দিন শুক্রবার ওই তরুণী অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করে ভাটারা থানায় মামলা করেন।
×