রহিম শেখ ॥ সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠী পতিতা ও হিজড়াদের ব্যাংকিং সেবায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য নীতিমালা তৈরি করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। এসব জনগোষ্ঠী এবং তাদের সন্তানদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। শুধু তাই নয়, পতিতা ও হিজড়াদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে কী ভাবে তাদের জন্য সহজ ও স্বল্প সুদের ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা যায় সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একটি পতিতালয়ের কয়েকজন যৌনকর্মীকে দিয়ে শুরু হচ্ছে এ উদ্যোগ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় বলেন, পতিতাদের সমাজে বাঁচতে শেখাতে এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ব্যাংক ও এনজিওগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত পিছিয়ে পড়া মানুষদের কর্মক্ষম, ক্ষমতায়ন ও আয় উপার্জনে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিবন্ধী, হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ উদ্যোক্তা), পতিতা ও পতিতাদের সন্তান (সমাজের সুবিধা বঞ্চিত উদ্যোক্তা) ও রাখাইন সম্প্রদায়কে আর্থিক সেবায় আনা এ ধরনের আরেকটি উদ্যোগ। তিনি বলেন, যেসব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও এ খাতে অর্থায়নে আগ্রহী তাদের সঙ্গে জুনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এর আগে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করা হবে।
জানা গেছে, অনিচ্ছা বা বাধ্য হয়ে পতিতার খাতায় নাম লেখানো নারীদের শরীর বা মন এ কাজে সায় না দিলেও এর মাধ্যমে জীবিকা-উপার্জন করেন তারা। এ থেকে বের হতে চাইলেও বিকল্প পেশার অভাবে আজীবন এ পেশা আগলে থাকতে হয় তাদের। তাদের সন্তানরাও সমাজে মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় না। সমাজে মিশতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্প্রতি অনেক পতিতা বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে তারা প্রশিক্ষিত হওয়ার পরও কোন ব্যাংক তাদের ঋণ সহায়তা দিচ্ছে না। একই অবস্থা অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ায় গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে একদল পরিদর্শক পটুয়াখালী সদরে প্রায় ৫০ পতিতার (সুবিধাবঞ্চিত) সঙ্গে মতবিনিময় করে। এতে সহযোগিতা করে পল্লীকর্ম উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিও। মতবিনিময় সভায় পতিতারা জানান, সাধারণভাবে একজন যৌনকর্মীর কন্যা সন্তান হলে সেও একই পেশা বেছে নেয়। আর পুত্র সন্তান হলে হয় চোর, ডাকাত অথবা সন্ত্রাসী। তারা যদি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পুনর্বাসনের সুযোগ পায়, তাহলে বদলে যাবে তাদের জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশ। সমাজের অন্য মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে তাদের সন্তানরাও। অনিচ্ছাকৃতভাবে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে জীবিকা উপার্জন করছে দেশের বিভিন্নস্থানের পতিতারা। পেটের দায়ে ছাড়তে পারছে না সামাজিকভাবে ঘৃণিত এ পেশা। ইচ্ছা করলেও সহজে ফিরতে পারছেন না এই পেশা থেকে। তাই অর্থের অভাবে যাতে যৌনকর্মীদের (সমাজের সুবিধা বঞ্চিত) কোন উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পতিতাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে (পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায়) সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ওই সভার উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। এতে অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচীর আওতায় এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে পতিতা ও হিজড়াদের মাঝে ঋণ বিতরণের সুপারিশ করা হয়। প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন সহায়তার পাশাপাশি হিজড়াদের চাকরির ব্যবস্থা করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের ইচ্ছায় ঝাড়ুদার পদে চাকরিতে নিয়োগ দিতে বলা হয়। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হতে পারে। রাখাইনদের হস্তচালিত তাঁতসমূহ পাউয়ার লুমে রূপান্তরিত করার বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এসএমই ঋণ প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
সূত্র জানায়, পতিতাদের ঋণ সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে এবি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আরও কিছু ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: