ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী হচ্ছে বগুড়া ॥ ঘোষণা আসছে শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ মে ২০১৫

সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী হচ্ছে বগুড়া ॥ ঘোষণা আসছে শীঘ্রই

সমুদ্র হক ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ দুয়ার বগুড়াকে শীঘ্রই সার্কের কালচারাল ক্যাপিটাল (সাংস্কৃতিক রাজধানী) ঘোষণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবটি অনুমোদন এখন সময়ের বিষয় মাত্র। শ্রীলঙ্কায় সার্কের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সার্ক কালচারাল সেন্টার ২০১৬ সালের জন্য বাংলাদেশের একটি নগরীকে সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল (সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী) ঘোষণা করবে। উল্লেখ্য, চলতি বছর (২০১৫) থেকেই শুরু হয়েছে এক বছরের জন্য সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী মর্যাদার কর্মসূচী। এ বছর এই মর্যাদা পেয়েছে ৮ম সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তানের ইতিহাসখ্যাত নগরী বামিয়ান। এদিকে প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধনভুক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগর খ্যাত মহাস্থানগড়, নওগাঁর জগদ্দল বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরসহ কয়েকটি স্থানকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড কালচারাল হেরিটেজে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় মাঠে নেমেছে। মহাস্থানগড়সহ দেশের চারটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থানে পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আগামী বছরকে (২০১৬) পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সার্ক (সাউথ এশিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন) সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণার সঙ্গেই এক বছরের জন্য এই রাজধানী নগরী মুখরিত হয়ে থাকে সাংস্কৃতির সকল কর্মকা-ের কার্যক্রমে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছর বাংলাদেশের বগুড়ার মহাস্থানগড়কে সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল ঘোষণা করা হলে ভর বছর বগুড়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা এবং সার্কের আট দেশের মিলনমেলা বসবে। একাধিক সূত্র জানায়, সার্কের সংস্কৃতি রাজধানী নিয়ে দম ফেলার সময় পাচ্ছে না সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল প্রতিষ্ঠান এখন ব্যস্ত। বিশেষ করে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, শিল্পকলা একাডেমি এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল প্রতিষ্ঠান বছরজুড়ে আয়োজনের ডালা ভরাতে ও সাজাতে মাঠে নেমেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সঙ্গত কারণেই আয়োজন সফল করার অংশীদারিত্ব নিতে হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। দেশের কোন নগরী হবে সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল এ নিয়ে গেল মার্চ থেকেই দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কালচারাল ক্যাপিটালের জন্য ওইসব নগরীকেই প্রাধান্য দেয়া হয় যেখানে রয়েছে হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। রয়েছে প্রতœতাত্ত্বিক বড় স্থাপনা ও নিদর্শন। যা সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষের কাছে পবিত্র। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকা থেকে যাতায়াতের সুব্যবস্থা, উন্নত পথঘাট, আবাসন ও মিলনায়তন। এইসব দিক বিবেচনায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়কেই বেছে নেয়া হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আমাদের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ, ইতিহাসের কত গভীরে গ্রোথিত তা দেখে যাবে সার্কভুক্ত দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বের মানুষ। এই কার্যক্রমে পর্যটনেরও অনেক বড় বিকাশ ঘটবে। ইতোমধ্যে পর্যটন খাতে আগামী তিন বছরে ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এদিকে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের সহযোগিতায় দেশের প্রাচীন ইতিহাসখ্যাত স্থানগুলোতে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহারপুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকায় পর্যটকদের জন্য অবকাশ কেন্দ্র হোটেল বাংলো কটেজ রেস্তরাঁ রাস্তাঘাটসহ প্রতœসম্পদ প্রদর্শনের নানা ব্যবস্থা থাকবে। গত বছর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বগুড়ার মহাস্থানগড় ও নওগাঁর পাহাড়পুরে পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, মহাস্থানগড়সহ দেশের ৭টি স্থানকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই প্রস্তাবটি বিবেচনায় এনে স্থানগুলোলো বিশ্ব সম্পদের স্বীকৃতি পাবে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ইউনেস্কোর নেচারাল হেরিটেজ এবং পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার ও বাগেররহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ কালচারাল হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হয় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের এক বৈঠকে। সেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ ও নেপালের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প, প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বিকাশে হেরিটেজ হাইওয়ে গড়ে তোলার প্রস্তাবনা করে পরে তা সিদ্ধান্তে রূপান্তর হয়। সেই আলোকে কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে সার্কভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে যায়। মানুষে মানুষে মিলন বন্ধনে পর্যটন শিল্পের অগ্রযাত্রায় শরিক হয় প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট। এক সূত্র জানায়, দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। আরেক সূত্র জানায় ১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলার দেবে সরকার। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন হয়ে নবযুগের সূচনা করবে। ইতোমধ্যে বগুড়ার মহাস্থানগড়কে ঘিরে আরও নতুন ইতিহাস উদঘাটিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কিছুদিন আগে খনন কাজে প্রায় হাজার বছর ধরে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পরশুরাম প্যালেসের অস্তিত্ব মিলেছে। এই প্যালেসটি কোথায় ছিল এতকাল তা খোঁজা হয়েছে। জায়গাটি ছিল ঝোপ জঙ্গলে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রের মতে, ইতিহাসখ্যাত স্থানগুলো ভ্রমণে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।
×