ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৪ জেলায় দূরপাল্লার বাস তিনদিন ধরে বন্ধ, যাত্রী দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৩ মে ২০১৫

২৪ জেলায় দূরপাল্লার বাস তিনদিন ধরে বন্ধ, যাত্রী দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিনদিন পেরিয়ে গেল দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন ধর্মঘট। শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পক্ষ থেকেই সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তুচ্ছ ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের কঠোর কর্মসূচীর কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার-হাজার যাত্রীর। শ্রমিক নেতারা বলছেন, অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসূচীর কারণে অন্তত ২৪ জেলায় দূরপাল্লার রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে বিকল্প হিসেবে নদীপথে কিংবা রেলপথে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। বেনাপোল বন্দরসহ বিভিন্ন জেলায় যানবাহনের অভাবে আটকে আছে হাজারো যাত্রী। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশ কিংবা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে খুলনা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি গ্রেফতারকৃতদের আগামীকাল রবিবার আদালতে হাজির করে জামিন প্রার্থনার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শ্রমিকদের নিঃশর্ত মুক্তির পর গাড়ি চালানোর কথা জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, সহকর্মীদের জেলে রেখে গাড়ি চালাবেন না তারা। এক্ষেত্রে মালিকদেরও করণীয় কিছু নেই। এনায়েত উল্যাহ অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কারণে এলাকায় ডাকাতির সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। মধুখালীতে বিভিন্ন সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। পুলিশ প্রশাসন ডাকাতদের গ্রেফতার না করে পাল্টা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এটা হতে পারে না। তাদের ব্যর্থতার কারণে আজকের এ পরিস্থিতি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সঙ্কট সমাধানের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কোন পক্ষই এ বিষয়ে এগিয়ে না আসায় সমাধান হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর যাত্রীদের অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসটির চালক ও তার এক সহকারীকে আটক করে। পরে ডাকাতির মামলা করে তাদের দু’জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে ডাকাতির পর চালক বাস নিয়ে মধুখালী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় বলে দাবি করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এরপর আটক দুই পরিবহন শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালীর ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাকা দেন তারা। ধর্মঘটের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীর ঢাকার পথে কোন যানবাহন চলাচল করেনি। এসব জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পথেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় বেনাপোলে ভারত ফেরত অনেক যাত্রী এবং এসব জেলায় ঘুরতে যাওয়া অনেকেই তিনদিন ধরে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বেনাপোল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার অন্তত ১০টি পথে বাস চলাচল করে। অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে ভারত ফেরত এসব রুটের কয়েকশ’ পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোল থেকে গন্তব্যে যেতে পারছেন না। বুধবার সকাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস বেনাপোল না ছাড়ায় বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন ভারত ফেরত যাত্রীরা। অভ্যন্তরীণ পথেও বাস চলাচল না করায় অনেকেই প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে অথবা কমিউটার ট্রেন ধরে রেলপথে গন্তব্যে যাত্রা করছেন। শুক্রবার সকালে রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সবকটি কাউন্টারই ফাঁকা। যাত্রী শুক্র। ভেতরে লোক নেই। রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন গন্তব্যের বাস সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। গাবতলী টার্মিনালে অনেকেই আসেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর নিতে। কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ার খবর শুনে যাত্রীরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। শ্যামলী, এস আর ট্রাভেল, টিআর ট্রাভেলস, ঈগল পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ডিপজল পরিবহনসহ সব কাউন্টারই ছিল নীরব। কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত টিকেট ছাড়ার অনুমতি নেই।
×