ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র হস্তান্তরে পিডিবির গড়িমসি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ মে ২০১৫

হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র হস্তান্তরে পিডিবির গড়িমসি

রশিদ মামুন ॥ হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির হাতে (ইজিসিবি) ছাড়তে চায় না বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পিডিবি এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যুত বিভাগ আগামী ৩১ মে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার শেষ সময় বেঁধে দিলেও ইজিসিবি বলছে তারা এখনও এ বিষয়ে কিছু জানেই না। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যুত খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে কিছু পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু পিডিবি এসব সংস্কার মানতে চাইছে না। পিডিবিকে পেট্রোবাংলার ন্যায় কর্পোরেশনে রূপান্তর প্রক্রিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে শুধু নির্দেশনা প্রদানের সীমাবদ্ধ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র হস্তান্তরের বিষয়ে গড়িমসি করছে পিডিবি। এ নিয়ে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের শ্রমিক সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে আন্দোলন করলেও কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। তবে তারাও বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি অন্য কারো কাছে হস্তান্তরে সম্মত নয়। সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে ভেতরে ভেতরে পিডিবিতে ক্ষোভ দানা বাধছে। জানতে চাইলে ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমাদের মন্ত্রণালয় কিংবা পিডিবি এ বিষয়ে কিছু বলেনি। তিনি বলেন, ইজিসিবিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ হিসেবে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রর মালিকানা পিডিবি থেকে ইজিসিবিকে দেয়ার নির্দেশনা ছিল। তিনি বলেন, এর মধ্যে একটি কেন্দ্র বেশ পুরাতন ইজিসিবি’র সংস্কারের উদ্যোগ নিলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো, এখন যা থমকে আছে। বিদ্যুত বিভাগের এক বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে পিডিবির শ্রমিক সংগঠন (সিবিএ) নেতাদের চাপের কারণে হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি ইজিসিবির কাছে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হরিপুর বিদ্যুত কেন্দ্র ইজিসিবির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয় আগামী ৩১ মে’র মধ্যে ইজিসিবির কাছে বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি হস্তান্তর করতে হবে। গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত বিভাগে এসে এই দুটি কেন্দ্রকে ইজিসিবির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। তবে এক বছরের বেশি সময় পর গত মাসে ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী আবারও বিদ্যুত বিভাগে অফিস করতে এলে বিদ্যুত বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সামনে এক উপস্থাপনায় বলেন, এখনও কেন্দ্র দুটি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে পিডিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পিডিবির একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, গতবছর বৈঠকে যেভাবে এই কেন্দ্র দুটি হস্তান্তরের উপর জোর দেয়া হয়েছিল, এবার বৈঠকে তা হয়নি। পিডিবি কোনদিনই তার নিজের সম্পদ অন্যদের হাতে তুলে দিতে চাইবে না। আর এভাবে একের পর এক সব কিছু ছেড়ে দিলে পিডিবি কার্যত অচল হয়ে পড়বে। তার কোন কাজই থাকবে না। তিনি বলেন, আগে কোন এক সময় উৎপাদন-সঞ্চালন-বিতরণ এর সব কিছু পিডিবির আওতায় ছিল এখন বেশিরভাগই কোম্পানি করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। পিডিবির শ্রমিক কর্মচারীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, পিডিবির সিদ্ধিরগঞ্জের কেন্দ্রটির স্থাপিত ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। বিদ্যুত কেন্দ্রটির বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০ মেগাওয়াট। যদিও কেন্দ্রটি থেকে এখন প্রতিদিন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে হরিপুর ৩২ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিটের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৯৬ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটির বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট। এখান থেকে রোজ ৪০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুত পাওয়া যায়। দুটি কেন্দ্রই বেশ পুরাতন। গ্যাসভিত্তিক এই দুই কেন্দ্রেই গ্যাসের অপচয় হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রটিতে ব্যাপকভাবে সংস্কার করা জরুরী। কিন্তু টানাপোড়নের কারণেও সংস্কার বা এর পরিবর্তে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণও হচ্ছে না। বিদ্যুত কেন্দ্র দুটির উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চেয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম খানকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি শোনার পর বলেন, তিনি বৈঠকে আছেন এখন এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব নয়। কোন অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তারপক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। পিডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে কোন অবস্থাতে তাঁরা এই বিভক্তি মেনে নেবে না। পিডিবিকে খ- খ- করার প্রক্রিয়া তাঁরা মানবে না। শুধু এই দুটি কেন্দ্রই নয় এর সঙ্গে ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্রকেও পিডিবির কাছ থেকে আলাদা করার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগেও পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতভেদ রয়েছে। পিডিবির কেউই এ সংস্কার প্রক্রিয়া চায় না।
×