ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উপচেপড়া ভিড় ডিওরামার সামনে

কৃত্রিম বনে বাঘ হাতি হরিণ- জাদুঘরেই চিড়িয়াখানার মজা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৮ মে ২০১৫

কৃত্রিম বনে বাঘ হাতি হরিণ- জাদুঘরেই চিড়িয়াখানার মজা

মোরসালিন মিজান ॥ জাতীয় জাদুঘরে কতো কী দেখার! অসংখ্য নিদর্শন ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানের গ্যালারিতে নানাভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে অমূল্য স্মারক। তবে একটু ব্যতিক্রম বলতে হবে ডিওরামাগুলোকে। চারদিকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা বিশাল বাক্সের ভেতরে অত্যন্ত আকর্ষণীয় উপস্থাপনা। জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগের আওতায় আছে বেশকিছু ডিওরামা। তবে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ। এ বিভাগের ডিওরামাগুলোতে বাঘ, হাতি, হরিণ পাখি, সাপ, মাছ ইত্যাদি প্রাণীর কৃত্তিম উপস্থাপনা। স্বচ্ছ কাঁচের সামনে তাই ভিড় লেগে থাকে সব সময়। বড়রা কৌতূহল নিয়ে দেখেন। আর শিশুরা তো বিনোদনকেন্দ্র জ্ঞান করে। এই বিভাগের গ্যালারি পরিদর্শনে গেলে প্রথমেই চোখে পরে সুন্দরবনের ডিওরামা। এটি গড়ে তোলা হয়েছে তিন নম্বর গ্যালারিতে। চার দেয়ালের ভেতরেই অদ্ভুত সুন্দর ম্যানগ্রোভ বন! দুই পাশের দেয়ালের প্রায় পুরোটাই বড় গ্লাস শোকেস। এর ভেতরে নানা প্রজাতির গাছ। ঘন বন। হাতের বাম পাশে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যেন জীবন্ত! অপর অংশে কান খাড়া করা তীক্ষè চাহনির হরিণ। ডান পাশে পাখিদের ওড়াউড়ি। কৃত্তিম সৃষ্টি হলেও খুব আকর্ষণীয়। পশু-পাখিদের বিচিত্র ডাকাডাকিও কানে আসে। সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। ৭ নম্বর গ্যালারিতে তিনটি ডিওরামা। একটিতে পুকুর। কিছুটা অবিন্যস্ত বটে। তবে পুকুরের আদলটি পরিষ্কার। পাশেই আবার নদীর ডিওরামা। এখানে বিশাল এক মাছের উপস্থাপনা। এর লম্বা খাঁজকাটা ঠোঁট। দেখতে অনেকটা করাতের মতো। নাম তাই করাত মাছ। পাশের ডিওরামায় ছোট বড় নানা আকার ও আকৃতির সামুদ্রিক প্রাণী। এই গ্যালারির ডান পাশের দেয়ালটিও খুব আকর্ষণীয়। এখানে চারটি সেমি ডিওরামা। একটিতে প্রজাপতিদের বাস। পাশেরটিতে মৌমাছি। বড়সড়ো দেখতে মৌচাক। যেন সামান্য বিরক্ত করলে আর রক্ষা নেই। ছুটে আসবে। হুল ফোটাবে। তারও বেশি ভয় ধরিয়ে দেয় কালনাগিনী। এ সাপ রীতিমতো ফণা তুলে আছে। অজগর দেখেও পিলে চমকে যায়! এসবের বাইরে আছে গুঁইসাপ ও হলদে গুঁই। অদূরেই নয় নম্বর গ্যালারি। এখানে দুটি ডিওরামা। বড়টিতে ডলফিন। আগ্রহ নিয়ে দেখে বাচ্চারা। অপর ডিওরোমাটিতে মুখপোড়া হনুমান। গাছে ঝুলে আছে। সাধারণত সিলেট ময়মনসিংহ কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও পার্বত্য বনাঞ্চলে এদের বাস। তবে চাইলেই দেখা যায় না। মজা করে দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। এখানে সেমি ডিওরামা আছে ৬টি। ছোট ওয়াল শোকেসের মতো ডিওরামায় বিচিত্র সব প্রাণী। রুই মাছের মতো দেখতে একটি প্রাণী বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যায়, এটি বনরুই। আছে লাল বানর, উল্লুক। সজারুর সে কী কাঁটা! দুটি সজারু যেন সত্যি সত্যি ছুটে চলেছে। চিতা বিড়াল বা কাঁকড়াভুক বেজিও বাদ যায়নি। সবই স্বরূপে হাজির করা হয়েছে। সবশেষে দশ নম্বর গ্যালারি। এখানে বেশ বড় ডিওরামা। একটিই। পুরোটায় বন। না, আর কোন প্রাণী নেই। যেন হাতির একলা রাজ্য। এক দম্পতি। সঙ্গে বাচ্চা হাতি। একটি আস্ত কলাগাছ সাবাড় করছে। সব মিলিয়ে অন্য রকম বিনোদন। দর্শনার্থীরা এখানে এসে যেন চিড়িয়াখানা দেখার আনন্দ লাভ করেন। শিশুরা প্রতিটি ডিওরামার সামনে দাঁড়ায়। কৌতূহল নিয়ে দেখে। বাচ্চাদের হৈ হুল্লোড় দেখে মনে হয়, এ যেন বিনোদন কেন্দ্র। রবিবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজশাহীর আলমগীর হোসেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, জাতীয় জাদুঘরের বিশাল পরিসর। ঘুরে ঘুরে বাচ্চাটা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে ডিওরামার সামনে এসে যেন নতুন করে শুরু করেছে। মেয়ে সরতেই চাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, জাদুঘরকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন কাজ করছি আমরা। এক্ষেত্রে ভাল ফল দিয়েছে ডিওরামা। প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ডিওরামাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপন্ন প্রায় প্রাণীদের পরিচিতি তুলে ধরা হচ্ছে। যে প্রাণী যে পরিবেশে থাকে, সেই আপন পরিবেশেই এদের দেখছেন দর্শনার্থীরা। এই উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রাণীদের প্রতি মানুষের সদয় আচরণের আহ্বান থাকে বলেও জানান তিনি।
×