ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণভবনে সর্বস্তরের নেতাকর্মীর শুভেচ্ছায় স্নাত হলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ মে ২০১৫

 গণভবনে সর্বস্তরের নেতাকর্মীর শুভেচ্ছায়  স্নাত হলেন  প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের শুভেচ্ছায় স্নাত হলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছার জবাবে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন সবাইকে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, জ্বালাও-পোড়াওকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, হারাবারও ভয় নেই। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যে মর্যাদা ও ভালবাসা দিয়েছে, তাদের কল্যাণে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত। রবিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তাঁদের উদ্দেশ বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট একরাতে বাবা-মা, ভাইসহ সব হারানোর বেদনার কথা এবং সবাইকে হারিয়ে দেশে ফেরার ক্ষণটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার আবেগে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে দু’চোখ জলে ভরে উঠলে পুরো অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ শুনতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মীই তাঁদের চোখের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর একে দলের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা জানান। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় মঞ্চে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সতিশ চন্দ্র রায়, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে, নীতি-আদর্শ নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ কিছু কাজ করার জন্য মানুষকে পাঠান। সেই কাজ আমি করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের ফেরার পর আমার ওপর বার বার আঘাত এসেছে, কিন্তু কখনও ঘাবড়াইনি, ভয় পাইনি। মানুষের কল্যাণে আমি যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সারাবিশ্বের কাছেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের দরবারে আমরা দেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক বীভৎস ঘটনা দেখেছি, আমরা চাই না দেশে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। দেশের মানুষ যে ভালবাসা ও মর্যাদা আমাকে দিয়েছে, সেটা কখনও ভোলার নয়। আমি দেশের মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু দেশের মাটিতে পা রাখার আগে বুঝতে পারিনি আমার জন্য কতটা কষ্ট ও বেদনা জমা রয়েছে। স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার আগে বাড়িতে বাবা, মা, রাসেল, জামাল, কামাল সবাইকে রেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে কাউকে আর পাইনি। মানুষ একজন স্বজন হারানোর বেদনা ভুলতে পারে না, কিন্তু আমাদের দু’বোনকে সব হারানোর বেদনা সইয়েই চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে ৬টি বছর দেশে আসতে দেয়নি। যখন দেখে এলাম, তখন বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এত মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলাম, কিন্তু আমার চোখ ঘুরে ফিরছিল পরিবারের সেই চেনা মুখগুলো খুঁজতে। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি। আমি যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই, তখন দলের নেতারা আমাকে সভানেত্রীর দায়িত্ব দেন। দেশে ফিরে অসহ্য বেদনার মধ্যেও প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম- এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্ত যাতে বৃথা না যায় সেই কাজ করতে। আমি সেই থেকে দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমি কাজ করে যাচ্ছি, এ জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতেও আমি প্রস্তুত। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবস পালন ॥ জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতসহ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশেই পালিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচী শুরু হয়। সকালে ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যারা দেশকে পিছিয়ে দিতে চায়, তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনিত করার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা আজ প্রমাণিত। সেদিন শেখ হাসিনা ফিরে না আসলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সেদিন যার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম তিনি শুধু তাঁর দায়িত্বই পালন করেননি, দলকে রাষ্ট্রের নেতৃত্বে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলোও সমাপ্ত করছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে এদেশের রক্তস্নাত পতাকা তুলে দিয়ে তাদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনে রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের আয়োজনে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন দলের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আগামী ২৯ মে ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেয়া হবে নাগরিক গণসংবর্ধনা।
×