ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফসলের ন্যায্যমূল্য

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৮ মে ২০১৫

ফসলের ন্যায্যমূল্য

প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ফসল ওঠার সময়টায় ধানের দাম বাড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। এবার ঘটেছে তার উল্টো; দাম কমছে। অপরদিকে চালের পাইকারি মূল্য কমেছে ৭ থেকে ৯ শতাংশ। সরকার প্রতি কেজি চাল বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ টাকা এবং গম ৮ টাকা বেশি দরে সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০ শতাংশ মুনাফা দিয়ে নির্ধারণ করা হলেও সেই দামের সুফল কৃষক পাচ্ছেন না। সরকার সংগ্রহ করছে ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে। ফলে এই বাড়তি মুনাফা যাচ্ছে এদের পকেটে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পূর্বাভাস দিচ্ছে, এ বছর বাংলাদেশে বোরো ধানের উৎপাদন হবে রেকর্ড পরিমাণ ২ কোটি ৯০ লাখ টন। কিন্তু এই বাম্পার ফলনের সুবিধা কৃষক পাচ্ছেন না সরকারের কতিপয় সিদ্ধান্তের কারণে। আবার অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব কর্মসূচীর কারণেই খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও খাদ্য ঘাটতি কমে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। তবে ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বাজারমূল্য বাড়েনি। গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য ৬ শতাংশ কমেছে। এ অবস্থায় কৃষককে সুরক্ষা দিতে হলে তাঁদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে হবে। উল্লেখ্য, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দেশে যথেষ্ট ধান উৎপাদিত হওয়া সত্ত্বেও ভারত থেকে চাল আমদানি করে কৃষকদের বিপদগ্রস্ত করে তুলছে। এ কথা অনস্বীকার্য, ধানের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত করে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন সম্ভব নয়। মজুদ ব্যবস্থার স্বল্পতার কারণেও ধানের যোগান বেড়ে যায় মৌসুমের সময়। ব্যবসায়ীরা সে সুযোগটাই নিয়ে থাকেন। রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ধানের ফলন ভাল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষককে যেন সার, সেচ ও শ্রমিকের খরচ উঠাতে হিমশিম খেতে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদনে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা তা ধরে রাখতেই ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে কৃষকের অবদানকে। কৃষিতে ভর্তুকি দিলে কৃষকের স্বার্থরক্ষা হবে, নিশ্চিত হবে ফসলের ন্যায্যমূল্য। চলতি মৌসুমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ২২টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২০ হাজার ৩৪৮ হেক্টর। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৫১৬ জন। সরকার এরই মধ্যে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে প্রণোদনার জন্য ৩০ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। যা প্রশংসনীয়। এ ক্ষেত্রে ভূমিহীন কৃষকের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। নিজ জমিতে ফসল ফলিয়ে ফল লাভের তুলনায় ভূমিহীন কৃষিজীবীর প্রাপ্তি কম। তাই তাঁদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্ডের মাধ্যমে সারা বছর কম মূল্যে খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয়ার কথাও ভাবা দরকার। কৃষক বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।
×