ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্ভাব্য অধিনায়ক তামিম অথবা সাকিব

টেস্ট নেতৃত্বও হারাচ্ছেন মুশফিক!

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ মে ২০১৫

টেস্ট নেতৃত্বও হারাচ্ছেন মুশফিক!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহীমের বিপরীতে নেতৃত্ব দেয়ার কেউ ছিলেন। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাই ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে মুশফিককে সরিয়ে মাশরাফিকে অধিনায়ক করা হয়েছে। কিন্তু টেস্টে মুশফিকের নেতৃত্বের বিকল্প কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এতদিন মুশফিকের টেস্ট নেতৃত্ব যায়নি। কিন্তু এবার বোধহয় মুশফিকের টেস্ট নেতৃত্বও থাকছে না। সেটি ভারতের বিপক্ষে ১০ জুন শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টটিতে না হলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জুলাইয়ের শেষে যে ২ টেস্ট ম্যাচের সিরিজ হবে, সেই সিরিজ থেকেই টেস্টে নতুন নেতা পেয়ে যাবে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয়, টেস্টে নতুন নেতা কে হবেন, সাকিব আল হাসান না তামিম ইকবাল। এখন টেস্টে ডেপুটি হচ্ছেন তামিম। আর ২০০৯-২০১১ সাল পর্যন্ত ৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। তখনও ডেপুটি ছিলেন তামিমই। ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে হারায় সাকিব ও তামিম দু’জনই পদ হারান। সেই হিসেবে তামিমই এগিয়ে থাকছেন। কারণ, তামিমকে টপকিয়ে সাকিবকে নেতৃত্ব দিলে তখন না আবার সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে না হোক, এরপর যে মুশফিক টেস্ট নেতৃত্ব হারাচ্ছেন; তা এক রকম নিশ্চিতই হয়ে আছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ জয়ের পর টেস্ট সিরিজ হারের ফলে ক্রিকেটমহলে প্রশ্ন উঠেছেÑ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুশফিককে আর দেখা যাবে তো! পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত ও পেস সহায়ক উইকেট হওয়ার পরও তিন পেসার নিয়ে মাঠে না নামানোকে অনেকেই অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। যদিও মুশফিক দাবি করেন টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ ও সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেই আগে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। টেস্টে মুশফিকের অধিনায়কত্বের ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। মুশফিকুর রহিমের প্রতিভা বা সামর্থ্য নিয়ে সংশয় নেই বিসিবির। তবে অধিনায়কত্বে আস্থা হারিয়েছেন মুশফিক। ভারত সিরিজে টেস্টে মুশফিক অধিনায়ক থাকলেও নিকট ভবিষ্যতে তাকে টেস্টের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে তিনটি দায়িত্ব উইকেট কিপিং-ব্যাটিং-অধিনায়কত্ব সামলানো আসলেই কঠিন। ভারত সিরিজের পর কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মুশফিকের সঙ্গে আলাপ করব।’ তবে মুশফিককে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হবে না। মুশফিকের ভাল বিকল্পও বর্তমান টেস্ট দলে দেখছেন না বিসিবি সভাপতি। এ প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘এই মুহূর্তে মুশফিকের বিকল্প আমাদের হাতে নেই। আমরা বুঝতে পারি সারাদিন কিপিং করে ব্যাট করা কঠিন। তারপর অধিনায়কত্বের চাপ থাকলে সেটা আরও কঠিন হয়ে যায়। যাই করা হোক না কেন, সেটা মুশফিকের ভালর জন্যই করা হবে।’ অধিনায়কত্বের পাশাপাশি উইকেটকিপিং করতে গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে আঙ্গুলে চোট পেয়েছিলেন মুশফিক। আর তাতে পুরো সিরিজে তার ব্যাটিং পারফরমেন্সে প্রভাব পড়েছে। দুই টেস্টের চার ইনিংসে মাত্র ৪৪ রান করেন তিনি। বিসিবি সভাপতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, মুশফিককে সম্ভবত নেতৃত্ব এবং উইকেটকিপিংয়ে দুটোর মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমার মনে হয় না, ভারত সিরিজের আগে তেমন কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। এ সিরিজে দেখি কী হয়। তবে এ বছরের শেষ দিকে হয়ত আমরা পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারি। একটা জিনিস আমরা ভালমতোই বুঝতে পারি।’ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ১০৬, ৬৫ ও ৪৯* রানের ইনিংস খেলার পর টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। গত দুই বছরে যে ধারায় ব্যাটিং করছেন মুশফিক, এ রকমটা এর আগে কখনই কোন ব্যাটসম্যানকে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চমৎকার পারফরমেন্স করেন। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও গত বছর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে হারান ওয়ানডে অধিনায়কত্ব। জিম্বাবুইয়ে সিরিজ দিয়েই বিসিবি চালু করে দুই অধিনায়ক। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ফিরে পান মাশরাফি। মাশরাফির নেতৃত্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে টাইগাররা। সর্বশেষ ১৪ ওয়ানডের ১১টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর দলের কোচ ওয়াকার ইউনুস ভূয়সী প্রশংসা করেন মাশরাফির। তবে টেস্টে এসে যখনই মুশফিকের নেতৃত্বে দল খেলতে শুরু করে সব ওলট পালট হয়ে যায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের অধিনায়কত্ব পছন্দ হয়নি বিসিবি সভাপতিরও। তাই বলে এখনই মুশফিককে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পক্ষে নন তিনি, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, শেষ টেস্টে অধিনায়কত্ব এবং আমাদের ক্রিকেটারদের পারফরমেন্স ছিল বেশ বাজে। তাই আমরা খুশি হতে পারিনি। ক্রিকেটারদের মানসিকতাই ঠিক ছিল না। মারমুখী ঢঙে ব্যাটিং করে কেউ কোন সময় দু’দিন উইকেটে টিকে থাকতে পারে না। এ বিষয়টা আমাদের ক্রিকেটারদের বুঝতে হবে।’ অধিনায়ক পরিবর্তন বিষয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়ে এ মুহূর্তে আমি একটি কথা বলতে পারি, যদি আমরা বিকল্প পেয়ে যাই তাহলে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে ভাবব। কিন্তু এ মুহূর্তে আমাদের হাতে কোন বিকল্প নেই।’ যে রকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে মুশফিককে নেতৃত্ব থেকে সরাতে বিকল্প খুঁজে বের করতে চাচ্ছে বিসিবিও।
×