ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খবরে তোলপাড় প্রতিহত করার ঘোষণা

টাঙ্গাইলে আসছেন হাওয়া ভবনের সেই ডিপিইও

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৭ মে ২০১৫

টাঙ্গাইলে আসছেন হাওয়া ভবনের সেই ডিপিইও

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৬ মে ॥ বিএনপির হাওয়া ভবনের আশীর্বাদপুষ্ট ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান আবারও টাঙ্গাইল বদলি হয়ে আসছে এ খবরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে জেলার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা এ বদলির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের অবৈধ বদলি বাতিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সঙ্গে তারা বর্তমানে কর্মরত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এনামুল হককে বহাল রাখার আবেদন জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চরম দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন খলিলুর রহমান ডিপিইও হিসেবে রংপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে চরম আর্থিক দুর্নীতি ধরা পড়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় তাকে গত ৪ মে খাগড়াছড়ি জেলাতে শাস্তিমূলক বদলি করে। কিন্তু খলিল বদলিকৃত নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে তদ্বিরের মাধ্যমে গত ৭ মে মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশে টাঙ্গাইলে প্রাইজ পোস্টিং পান। তিনি এর আগে ২০০০-০৩ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইলে কর্মরত ছিলেন। সেসময় ডিপিইও খলিল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যাপক আর্থিক সুবিধা নিয়ে জেলার কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের অবৈধ নিয়োগ ও বদলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে। চরিত্রহীন ডিপিইও খলিল টাঙ্গাইলে অনেক শিক্ষিকার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করে ধরা পড়েন। এর মধ্যে এক শিক্ষিকাকে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় বিয়ে করে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। ডিপিইও খলিলের তৃতীয় বিয়ের খবরে টাঙ্গাইলে শিক্ষিকারা আতঙ্কে অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। এসব কারণে ডিপিইও খলিলের প্রথম স্ত্রী, জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে খলিলকে টাঙ্গাইল থেকে বদলি করা হয়। এরপর রংপুরে বদলি হয়ে খলিল তার দুর্নীতি বহাল রাখেন। গত ২০০৬ সালের মে মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব দুর্নীতির অভিযোগে ডিপিইও খলিলুর রহমানসহ ৬ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুতির জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) কাছে নথি পাঠায় এবং তদন্ত শুরু হয়। পরে খলিল বিএনপির হাওয়া ভবনের সহায়তায় ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ম্যানেজ করেন। দুর্নীতিবাজ ডিপিইও খলিলের অবৈধ তদ্বিরের কারণে নতুন এ আদেশের ফলে টাঙ্গাইলে কর্মরত দক্ষ ও বিচক্ষণ ডিপিইও এনামুল হককে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়। বর্তমান ডিপিইও এনামুল টাঙ্গাইলে মাত্র ১১ মাস কর্মরত রয়েছেন। হঠাৎ করে এনামুলের এ বদলির কারণে তার তিন সন্তান ঢাকা বোর্ডের অধীনে এসএসসি, জেএসসি এবং পিএসসি পরীক্ষার্থী। তার শিক্ষার্থী তিন সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা একেএম আবদুল হামিদ ফরিদ বলেন, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এনামুল হক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার বদলির আদেশ বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন ডিপিইও খলিলকে জেলার সকল শিক্ষক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইলে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
×