ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সালাহউদ্দিনকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৬ মে ২০১৫

সালাহউদ্দিনকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সরকার ভারত থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। নিখোঁজ রহস্য স্পষ্ট করতেই সরকারের তরফ থেকে এমন চেষ্টা চলছে। যদিও আইনী জটিলতার কারণে সে সম্ভাবনা কম। এজন্য সহসাই দেশে ফেরত আনা সম্ভব হচ্ছে না সালাহউদ্দিন আহমেদকে। এদিকে জাতীয় পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ ও হদিস মেলার বিষয়টি দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ সফল করতে অজ্ঞাতস্থান থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে বিবৃতি প্রকাশিত হচ্ছিল। এমন অবস্থা চলার মধ্যেই গত ১১ মার্চ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ আচমকা সংবাদিকদের জানান, তাঁর স্বামী উত্তরার একটি বাড়িতে গোপনে অবস্থান করে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। গত ১০ মার্চ রাতে ডিবি পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বাড়ির মালিক ব্যাংক কর্মকর্তা হাবিব হাসনাত পরদিন তাঁকে জানান। ঘটনার অনেক পরে বিষয়টি জানানো সম্পর্কে বরাবরই সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর তরফ থেকে স্পষ্ট করে কোন কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তা হাবিব হাসনাতও এ ব্যাপারে আজও মুখ খোলেননি। পরদিন অনেক দেরিতে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগ করতে যান। ওইদিন বিকেল চারটায় সালাহউদ্দিন আহমেদের গুলশান-২-এর ৭২ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর ‘দ্য প্লাটিনাম রেসিডেন্সে’ ইউনিভার্সিটি টিচার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা। এরপর থেকেই সালাহউদ্দিন ইস্যুতে পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে নানাভাবে দোষারোপ করে আসছিল। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও শরণাপন্ন হয়েছেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। এফবিআইয়ের তদন্ত দাবি করা হয়েছে বিএনপির তরফ থেকে। এদিকে ডিবি পুলিশ বরাবরই সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে। গত ১১ মে সোমবার ভারতের মেঘালয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে আটক করে। মেঘালয় পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তিনি উ™£ান্তের মতো ঘুরছিলেন। পুলিশ কথাবার্তা বলে নিশ্চিত হন, সালাহউদ্দিন ভারতের নাগরিক নন। এরপর তার কাছে ভারতে প্রবেশের কাগজপত্র চাওয়া হয়। তা দিতে অপারগ হলে তাকে গ্রেফতার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানা থেকে তাকে প্রথমে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা সালাহউদ্দিনের মানসিক কোন সমস্যা নিশ্চিত করতে না পেরে তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। গত ১২ মে হাসপাতাল থেকেই স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। হাসিনা আহমেদ স্বামীর হদিস জানার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। ভারতে যাওয়ার জন্য সালাহউদ্দিনের পরিবারের চারজন ভিসার আবেদন করেন। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা ভিসা পাননি বলে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে শিলং পুলিশ বলছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিলেই তাকে মেঘালয় আদালতে সোপর্দ করা হবে। আইনী প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি। বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ঢাকা অফিসের তরফ থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। সরকারও আন্তরিকভাবে সালাহউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। নিখোঁজ ও হদিস মেলার রহস্য উন্মোচন করতেই সরকারের তরফ থেকে সালাহউদ্দিনকে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। যদিও তাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে নৌকা সমর্থকগোষ্ঠী আয়োজিত এক আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘তিনি (সালাহউদ্দিন আহমেদ) সবই জানেন, দু’মাসের ঘটনা জানেন না। এ বিষয়ে যখন তিনি দেশে ফিরবেন তখন মানুষ জানবে। তবে এক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।’ সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ ও হদিস মেলার বিষয়টিকে তিনি কৌশল হিসেবে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের রাজনীতি ভারতে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কাও করেন তিনি। এদিকে শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক সভায় অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ ও হদিস মেলার রহস্য স্পষ্ট করতে একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্ত রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
×