ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হকির অচলাবস্থা নিরসনে ক্রীড়া উপমন্ত্রীর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৪ মে ২০১৫

হকির অচলাবস্থা নিরসনে ক্রীড়া উপমন্ত্রীর উদ্যোগ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আশা করা হয়েছিল নতুন হকি মৌসুমে পুরনো জটিলতা কাটবে; কিন্তু আদতে তা হয়নি। হকি ফেডারেশনের বর্তমান নির্বাচিত কমিটির অধীনে যেকোন ধরনের হকি কার্যক্রম বয়কট করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তথাকথিত ‘বিদ্রোহী’ দলগুলো, তাদের সেই সিদ্ধান্ত এখনও অটুট আছে। হকির এ অচলাবস্থা নিরসনে অবশেষে এগিয়ে আসতে হয়েছে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে। বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টাওয়ারের কনফারেন্স রুমে তিনি আলোচনায় বসেছিলেন বিদ্রোহীসহ ১২ দলের এবং হকি ফেডারেশনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার আলোচনা শেষে প্রসব হয়েছে ‘অশ্বডিম্ব’। কেননা আগের অবস্থানেই অটল আছে বিদ্রোহী ক্লাবগুলো। এদিকে ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি বরাবরের মতোই এবারও নিজেদের ‘আইনত বৈধ’ বলে দাবি করেছে এবং বিদ্রোহী ক্লাবগুলোকে দলবদল ও লীগে অংশগ্রহণের জন্য আবারও আহ্বান করেছে। বিদ্রোহী ক্লাবগুলো আলোচনা সভায় দাবি জানিয়েছে, হকির বর্তমান কমিটি বাতিল করে একটি এ্যাডহক কমিটি গঠন করলেই (সবার মতামত নিয়ে) তারা দলবদল (২৪-২৬ মে) এবং লীগে অংশ নেবে। বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর ভাষ্যমতে, নিয়ম হচ্ছে আম্পায়ার এ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে নির্বাচন করা এবং এক ক্লাব থেকেই পাঁচ কাউন্সিলর নেয়াটা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়া। এ নিয়ে কমিটির বিরুদ্ধে একটি মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আগের কমিটির বেলাতেও এমন অনিয়ম ছিল। সেই সময় ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জামিল উদ্দিন হকির বৃহত্তর স্বার্থে পদত্যাগ করতে পারলে এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ্ কেন পদত্যাগ করছেন না? বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর একটি মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসান উল্লাহ্ খান রানা বলেন, ‘আমরা লীগ খেলব কি-না, এটা ঠিক করতে ক্লাবগুলো নিজেদের মধ্যে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এজন্য ছয়-সাত দিন লাগতে পারে।’ বর্তমান কমিটি যদি কোন ভুল করে থাকে, তাহলে তাদের কার্যক্রমকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য বিদ্রোহী দলগুলোকে অনুরোধ জানান ক্রীড়া উপমন্ত্রী। পরে অবশ্য তিনি উভয়পক্ষকেই ‘স্যাক্রিফাইস’ মনোভাব নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি প্রতিটি দলই আসন্ন দলবদল এবং লীগে সময়মতো অংশ নিয়ে হকির অচলাবস্থা দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে। আমি চাই আপাতত সব দল লীগে খেলতে থাকুক। এই ফাঁকে সবাইকে নিয়ে আরেকটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’ খাজা রহমতউল্লাহ্ বলেন, ‘নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তার জবাব দেবে নির্বাচন কমিশন। আমার কমিটির সদস্যরা আমাকে চাপ দিয়েছেন কমিটি না ভাঙ্গার জন্য। তবে যদি ভাঙ্গতেই হয়, তাহলে আমাকে যারা এ পদে আনতে সহায়তা করেছেন, সেই কাউন্সিলরদের সঙ্গে আমাকে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত আসতে হবে।’ এখন উভয়পক্ষের কথা শুনে একটা কথাই মনে হতে পারে হকিপ্রেমীদেরÑ ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা একান্তই আমার!’ গত দুই মৌসুম ধরে প্রিমিয়ার হকি লীগে অংশ নেয়নি মোহামেডানসহ চার ক্লাব। বাকি দলগুলোর মধ্যে আবাহনী ও ঊষা এবার বলেছে ওই চার দল না খেললে তারাও এবারের লীগে অংশ নেবে না! ফলে জটিলতা আরও বেড়েছে। উল্লেখ্য, ক্রীড়া উপমন্ত্রীর আগ্রহে হকি ফেডারেশন থেকে বুধবারের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রিমিয়ার লীগের ১২ ক্লাবকে চিঠি দেয়া হয়। গত সোমবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বুধবারের বৈঠকে ক্লাবগুলোকে একজন করে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। এর আগে গত ১০ মে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে হকি ফেডারেশন বরাবর চিঠি দিয়ে বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়। গত মৌসুমে বিদ্রোহী দল ছিল ছয়টি (মোহামেডান, মেরিনার, বাংলাদেশ স্পোর্টিং, ওয়ারী, ওয়ান্ডারার্স ও এ্যাজাক্স)। তাদের ছাড়াই লীগ আয়োজন করেছিল বর্তমান কমিটি। অংশ নিয়েছিল আবাহনী, ঊষা, সাধারণ বীমা, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ পুলিশ ও এ্যাজাক্স। শেষ মুহূর্তে বিদ্রোহী গ্রুপ থেকে সরে লীগে অংশ নেয় এ্যাজাক্স (গুঞ্জন ছিল, ফেডারেশনের চাপে বাধ্য হয়ে লীগে অংশ নেয় তারা)। সেবার ওই লীগে কোন রেলিগেশন ছিল না। হকি খেলতে না পেরে সবচেয়ে কষ্টে আছেন বিদ্রোহী ক্লাবের প্রায় দেড় শ’ হকি খেলোয়াড়। খেলতে না পারায় তাদের আয়ের পথও বন্ধ। ফলে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য কোন পেশা। এখন দেখার বিষয়; কিন্তু হকির সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে যায় কি-না।
×